‘ভোটে কাজ না করায় রোষানলে’ ওএমএস কার্ডধারীরা
ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে পক্ষে কাজ না করাই কাল হলো তাঁদের; রোষানলে পড়লেন নবনির্বচিত ইউপি সদস্যের। কেড়ে নেওয়া হলো ১০ টাকায় চাল কেনার ওএমএস কার্ড। এ নিয়ে এলাকায় হয়েছে মানববন্ধন। তারপরও টনক নড়েনি কর্তৃপক্ষের। তবে, সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নড়াইল সদর উপজেলার শেখহাটি ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের অভিযুক্ত ইউপি সদস্য এরশাদ শেখ।
ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, শেখহাটি ইউনিয়নে মোট ২১৭ জনের নামে ১০ টাকা কেজি দরে চাল কেনার ওএমএস কার্ড বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৮ নম্বর ওয়ার্ডে ৭৮টি কার্ড বরাদ্দ দেওয়া হয়।
এ ওয়ার্ডের পচিশা গ্রামের এনামুল মোল্লা বলেন, ‘আমার কার্ড নম্বর ৬০। ১০ টাকা কেজি দরে মাসে ৩০ কেজি চাল পেতাম। বর্তমান মেম্বর (ইউপি সদস্য) এরশাদ শেখ নতুন করে কার্ড দেওয়ার নামে আমার কার্ড নিয়ে গেছে।’ তিনি বলেন, ‘কার্ড চাইলে মেম্বার এখন কথা বলে না। ধমক দেয়।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে গ্রামের একাধিক মানুষ অভিযোগ করেন, ইউপি নির্বাচনে যাঁরা মেম্বারের পক্ষে নির্বাচনি কাজ করেননি, ভোটে জিতে যাওয়ার পর সে পরিবারগুলোর কার্ড কেটে নেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি সদস্য এরশাদ শেখ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘যে পরিবারে একাধিক কার্ড রয়েছে। যেমন, বিধবাভাতা, বয়স্কভাতা, প্রতিবন্ধীভাতা ইত্যাদি; যাঁদের পরিবার একটু স্বচ্ছল, শুধু সে পরিবারগুলোর কার্ড চেয়ারম্যানের নির্দেশে কর্তন করে অন্য দুস্থ পরিবারের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে।’
এরশাদ আরও বলেন, ‘আমার ওয়ার্ডে ৭৮ জনের নামে কার্ড বরাদ্দ আছে। সেখান থেকে আমি ২৬ জনের নাম কর্তন করে অন্য দুস্থ পরিবারের মধ্যে কার্ডগুলো বিতরণ করেছি।’
অথচ দুস্থ, বিধবা, স্বামীহারাসহ অনেকের অভিযোগ—ইউপি সদস্যের কাছে কার্ড চাইতে গেলে দুর্ব্যবহার করা হয়।
চায়না বেগমের (৫০) স্বামী নেই। পরের জায়গায় ঝুপড়ি বেঁধে বসবাস করেন। তিনি বলেন, ‘মেম্বারের কাছে আমি কার্ড চেয়েছিলাম, দেয়নি।’
স্থানীয় মসজিদের ইমাম হাফেজ মো. শাহাবুদ্দিন মোল্লা বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ। নতুন মেম্বারের কাছে কার্ড চাইলে অপমানসূচক কথা বলেন।’
ইউপি সদস্যের অনিয়ম প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শেখহাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলক কুমার বিশ্বাস এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘অসহায় পরিবার কার্ড পায়নি—আমার পরিষদে এসে এমন কেউ অভিযোগ করেননি।’
চেয়ারম্যান গোলক কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘আমার ইউনিয়নে এমনও পরিবার আছে, যে পরিবারে একাধিক কার্ড রয়েছে। যাঁদের খোলা বাজার থেকে সবকিছু কেনার সামর্থ আছে, তেমন পরিবারগুলোকেও পরিষদের পক্ষ থেকে তদন্ত সাপেক্ষে যাচাইবাছাই করে কার্ড কর্তন করা হয়েছে। ওই সব কার্ড পরে নতুন অসহায় পরিবারের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। এখানে কোনো প্রকার ছলচাতুরি করা হয়নি।’