রাজধানীজুড়ে বাসের কাগজ চোরচক্রের দৌরাত্ম্য, গ্রেপ্তার ৪
গণপরিবহণের কাগজপত্র চুরি হয়ে যাওয়ার পরে মালিক ও চালকদের কাছে আসে ফোন। দাবি করা হয় টাকা। দিতে রাজি না হলে আসে কাগজ পুড়িয়ে দেওয়াসহ প্রাণনাশের হুমকি। এমন সব অভিযোগে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় গত আড়াই বছরে হয়েছে দেড় শতাধিক জিডি। ইদানিং বাড়তে শুরু করে চক্রের দৌরাত্ম্য। পরে সেই চোরচক্রের চার সদস্য ধরা পড়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) জালে। এই চক্রে রয়েছে আরও অন্তত পাঁচজন। তাদের আটকেও চলছে তৎপরতা।
আজ রোববার ঢাকার মালিবাগে সিআইডির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মেট্রোর অতিরিক্ত ডিআইজি ইমাম হোসেন এসব তথ্য জানান।
গতকাল শনিবার রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বসিলা থেকে চোরচক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁরা হলেন—রাকিব মিয়া ওরফে তুফান (২৭), শুকুর আলী (২৮), মো. শামিম (২৫) ও হৃদয় হোসেন (২১)। তাদের কাছ থেকে বাসের চুরি হওয়া অনেক রেজিস্ট্রেশন সনদ, ফিটনেস সনদ ও ট্যাক্স টোকেন জব্দ করেছে সিআইডি।
ডিআইজি ইমাম হোসেন বলেন, ‘কাগজপত্র চুরির কারণে পরিবহণের মালিকপক্ষ অনেকটা ভীত-সন্ত্রস্ত ও জিম্মি হয়ে পড়ে। এভাবে প্রায় দেড় হাজার বাসের কাগজ চুরি করে চাঁদা আদায় করেছে গ্রেপ্তার চক্র। বারবার কাগজ খুইয়ে বাধ্য হয়ে চক্রটির সঙ্গে চুক্তি করতে হয়েছে কয়েকটি পরিবহণ কর্তৃপক্ষকে।’
ইমাম হোসেন আরও বলেন, ‘একটি সংঘবদ্ধ চক্র ২০২০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ঢাকার মিরপুর লিংক, শিকড় পরিবহণ, খাজাবাবা পরিবহণ, প্রজাপতি পরিবহণ এবং রবরব পরিবহণসহ অন্যান্য পরিবহণের বাসে যাত্রীবেশে উঠে অভিনব কায়দায় বাসের ব্লু-বুক ও রেজিস্ট্রেশন সনদসহ অন্যান্য কাগজপত্র চুরি করেছে। এরপর তারা গাড়ির মালিক, ম্যানেজার ও চালকদের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে চোরাই প্রতিটি গাড়ির কাগজের জন্য ১০ হাজার টাকা করে চাঁদা দাবি করে। মালিকরা প্রথমদিকে চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে চক্রটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে ক্ষতি করার ও চালকদের প্রাণনাশের হুমকি দিত।’
ইমাম হোসেন বলেন, ‘তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে গাড়ির মালিকরা ঢাকার বিভিন্ন থানায় বিষয়টি অবহিত করে সাধারণ ডায়েরি করেন। গত দুই-আড়াই বছরে দেড় শতাধিক জিডি হয়েছে থানায়। কিন্তু, তাতেও কোনো ফল না পাওয়ায় বাস মালিকরা বিষয়টি সিআইডিকে অবহিত করেন।’
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তুফানসহ গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা তাঁদের অপরাধ স্বীকার করেছেন দাবি করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা ঢাকা শহরের বিভিন্ন আবাসিক এলাকা থেকে মোবাইল চুরি করে। পরে সেই চুরি করা মোবাইল দিয়ে ফোন করে বিকাশ এজেন্টের মাধ্যমে চাঁদা আদায় করে বিপুল টাকা হাতিয়ে নেয়।’
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০২০ সালে রাকিব ওরফে তুফান বাসের কাগজ চুরি করা শুরু করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে নিজেকে আড়াল করতে গত ২৮ দিনে ৫৬টি সিম পাল্টিয়েছে তুফান। চক্রে আরও অন্তত পাঁচ জন সদস্য রয়েছে। তাদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রেখেছে সিআইডি। এ ঘটনায় ডিএমপির শাহ আলী থানায় মামলা হয়েছে।