তেলে কোকেন : ফের নমুনা সংগ্রহ
চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি করা ভোজ্য তেলের সঙ্গে কোকেন আছে কি না তা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য পুনরায় নমুনা সংগ্রহ করেছে পুলিশ। এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো পরীক্ষা হতে চলেছে এ তরল পদার্থ।
আজ বুধবার চট্টগ্রাম বন্দরে আটক করা ১০৭টি ড্রাম থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পুলিশ। নমুনা সংগ্রহের সময় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
সানফ্লাওয়ার তেলের নামে তরল কোকেন আমদানি করা হয়েছে অভিযোগে চট্টগ্রাম বন্দরে আটক রয়েছে এ সব ড্রাম। ঘোষণা অনুযায়ী, প্রতিটি ড্রামে ১৮৫ কেজি তেল রয়েছে উল্লেখ থাকলেও গত ২৮ জুন প্রাথমিক পরীক্ষায় একটি ড্রামে কোকেনের অস্তিত্ব পাওয়া যায়।
পরে তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের পরস্পরবিরোধী বক্তব্যের ফলে সব পক্ষের উপস্থিতিতে পুনরায় আলামত সংগ্রহ করে রাসায়নিক পরীক্ষার নির্দেশ দেন আদালত। ফলে প্রতিটি ড্রাম থেকে সংগৃহীত তিনটি করে নমুনা পৃথক তিনটি ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষাসহ আইনানুগ পদক্ষেপের কথা জানায় পুলিশ।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) উপকমিশনার কুসুম দেওয়ান বলেন, আগে যখন পরীক্ষা হয়েছিল তখন নিয়মিত মামলা রজু হয়নি। নিয়মিত মামলা রজু হওয়ার পর আইনি কিছু প্রক্রিয়া থাকে এবং আদালতের আদেশ-নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করতে হয়। এখন নিয়মিত মামলা রজু হয়েছে। আদালত যে নির্দেশনা দিয়েছিলেন সে মোতাবেক আইনি প্রক্রিয়ায় কাজ করা হচ্ছে।
তেলের এ নমুনা পরীক্ষার ফলাফল খুব দ্রুতই হাতে পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেন এ পুলিশ কর্মকর্তা।
গত ৮ জুন সম্প্রতি ভোজ্য তেলের ঘোষণা দিয়ে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের একটি প্রতিষ্ঠান বলিভিয়া থেকে ভোজ্য তেলের একটি কনটেইনার আমদানি করে। কনটেইনারের ১০৭টি ড্রামে দুই হাজার ১৪০ কেজি ভোজ্য তেল আমদানির ঘোষণা রয়েছে। আর এতে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নাম রয়েছে ‘খান জাহান আলী লিমিটেডের’।
এসব ড্রামে তরল কোকেন রয়েছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে গত ৬ জুন বন্দরের চিটাগং কনটেইনার টার্মিনালের (সিসিটি) তিন নম্বর ইয়ার্ডে জব্দ করা হয়।
এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের সোহেল নামের এক কর্মকর্তাকেও আটক করা হয়। পরে ৮ জুন চট্টগ্রাম বন্দর, সিএমপি পুলিশ, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও শুল্ক গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে কনটেইনারটি খোলা হয়।
তারপর স্থানীয়ভাবে ড্রামের তেল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হলেও এতে কোকেনের কোনো প্রমাণ মেলেনি। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ পরীক্ষায় সন্তুষ্ট ছিল না। ফলে একটি ড্রামের তেলের নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হয় পুনঃপরীক্ষার জন্য। বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) ও বাংলাদেশ ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরিতে তেলের নমুনা দুবার পরীক্ষা করা হয়।
গত ২৭ জুন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) তানভির আরাফাত সাংবাদিকদের জানান, আমদানি করা একটি ড্রামের তেলের নমুনা পুনঃপরীক্ষা করে তরল কোকেনের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। ওই ড্রামে ১৮৫ কেজি তরল কোকেনের অস্তিত্বের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
এ দিকে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ‘খান জাহান আলী লিমিটেডের’ পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, এ ধরনের চালানের ব্যাপারে তাঁরা কিছুই জানেন না। কেউ তাঁদের প্রতিষ্ঠানের প্যাড ব্যবহার করে এ কাজটি করতে পারে।
এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এঁরা হলেন কসকো বাংলাদেশ শিপিং লাইন্সের ব্যবস্থাপক এ কে আজাদ,গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আতিকুর রহমান ও মোস্তাফা কামাল। গত ২ জুলাই পুলিশ তাদের ১০ দিনের হেফাজতে নেয়।