শাহ পরীর দ্বীপে ২১ দিনে ৪৭ লাশ
‘গত ২৪ আগস্ট থেকে শুরু হয়েছে ভাই। এর পর থেকে রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারছি না। কেবলই শুনতে পাই নৌকা ডুবে গেছে। কাউকে না কাউকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এরপর মেলে লাশ। লাশ পেয়ে মানুষ আমাকেই আগে ডাক দেয়। রাত, দিন যাই হোক, তখনই চলে আসতে হয় ওই এলাকায়।’
কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের নয় নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ফজলুল হক এসব কথা বলছিলেন। বুধবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, তিনি শাহ পরী দ্বীপের জেটিতে দাঁড়িয়ে আছেন। কিছুক্ষণ আগেই এক রোহিঙ্গা নারীর লাশ উদ্ধার হয়েছে। লাশটি নাফ নদীর স্রোতে ভাসছিল। স্থানীয় বাসিন্দারা তা তুলে এনে ঘাটের কাছে রাখে।
ঘাটের পাশেই একটি মসজিদ আছে। ফজলুল হক মসজিদের লোকজনসহ একাধিক স্থানীয় ব্যক্তিদের ডেকেছেন। ওই নারীর লাশ দাফনের ব্যবস্থা করছেন তিনি।
ফজলুল হক বলেন, ‘গতকাল দিবাগত রাতে নৌকাটি মিয়ানমার থেকে এ পাড়ে আসছিল। সম্ভবত মাঝনদীতে আসার পরই ডুবে যায়।’ তিনি জানান, বুধবার ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত আটজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আটজনের মধ্যে তিনটি শিশুও ছিল যাদের বয়স যথাক্রমে এক, তিন ও ১০ বছর। অন্য তিন পুরুষের বয়স ২৫, ২৮ ও ৩৫। দুই নারীর বয়স ৩৫ ও ৪০ বছর।
ফজলুল হক জানান, ওপার থেকে যেভাবেই হোক রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসতে চায়। নৌকার জন্য অপেক্ষা করে। অনেক নৌকা রাতে আসে। তিনি জানান, রোহিঙ্গাদের এ অঞ্চলে আসার স্রোত শুরু হয়েছে গত ২৪ আগস্ট থেকে। এরপর থেকেই তিনি ‘অস্থির’ সময় কাটাচ্ছেন। তিনি জানান, নৌকা দিয়ে এ পথেই বেশি সংখ্যক রোহিঙ্গা প্রবেশ করছে বাংলাদেশে। আর এ পথেই নৌকা ডুবে মারা যাচ্ছে অনেক রোহিঙ্গা।
ফজলুল হক জানালেন, এ এলাকায় গত ২৪ আগস্ট থেকে ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২১ দিনে মোট ৪৭টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এরা সব রোহিঙ্গা। নৌকা দিয়ে পার হওয়ার সময় নৌকাডুবি হয়ে মারা যায়। এর মধ্যে তাঁর নিজের ওয়ার্ডে ১৯টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আর সাত নম্বর ওয়ার্ডে ২৮টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
ফজলুল হক জানান, স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে নিয়ে লাশ দাফনের ব্যবস্থা করেন তিনি। স্থানীয় একটি কবরস্থানে এদের দাফন সম্পন্ন হয়। বুধবার একে একে চারটি লাশ দাফনের ব্যবস্থা করেছেন তিনি। আরো তিনটি লাশ দাফনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে উদ্ধার করা হয় আরেকজন নারীর লাশ।’
ফজলুল হক বলেন, ‘এসব বন্ধ হওয়া উচিত। আর ভালো লাগছে না।’