পদ্মায় আড়াই গুণ পানি
প্রতিবছরই পানির অভাবে শুষ্ক মৌসুমে পদ্মা নদী শুকিয়ে যায়। ধু ধু বালুচরে পরিণত হয় এককালের প্রমত্তা পদ্মা। কিন্তু এবার পদ্মার চিত্রটা অন্যরকম। বছরের এই সময়ে পদ্মায় যেখানে নির্ধারিত পানিপ্রবাহের চেয়ে অনেক কম পানি প্রবাহিত হতো, এবার একই সময়ে সেখানে প্রায় আড়াই গুণ বেশি পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে হার্ডিঞ্জ ব্রিজের ১৫টি পিলারের মধ্যে ১২টিই শুকনায় থাকত। তিনটি পিলার পানিতে থাকত। তার আশপাশেই মানুষ চাষাবাদ করত। কিন্তু এখন হার্ডিঞ্জ ব্রিজের ১৫টি পিলারের মধ্যে ১১টি পিলারই পানির মধ্যে আছে।
পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ওয়াটার হাইড্রোলজি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত প্রকৌশলী মো. মোফাজ্জল হোসেন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, চুক্তি অনুযায়ী মার্চ মাসে গড়ে প্রতিদিন কমপক্ষে ৩৫ হাজার কিউসেক পানি পাওয়ার কথা। কিন্তু গতকাল শুক্রবার ১২ মার্চ পানির প্রবাহ ছিল ৮২ হাজার ৩০০ কিউসেক পর্যন্ত। এবার পদ্মায় যে পরিমাণ পানি রয়েছে, তা গত ২০ বছরেও ছিল না।
১৮ বছর আগে ১৯৯৬ সালে পদ্মার পানিপ্রবাহ নিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ঐতিহাসিক গঙ্গা চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী, প্রতিবছর ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত বাংলাদেশ ও ভারতীয় যৌথ পানি বিশেষজ্ঞ দল ভারতের ফারাক্কা ও বাংলাদেশের হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে গঙ্গার পানিপ্রবাহ পর্যবেক্ষণ করে থাকেন এবং সেই অনুযায়ী পানিবণ্টন হয়ে থাকে।
পর্যবেক্ষণের প্রথম পর্যায়ে অর্থাৎ ১ জানুয়ারি থেকে গত ২০ মার্চ পর্যন্ত (শুষ্ক মৌসুমের পিক পিরিয়ড) গড়ে প্রতিদিন কমপক্ষে ৩৫ হাজার কিউসেক পানি পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাংলাদেশ কখনোই ন্যায্য হিস্যা পায়নি। এর জন্য ভারতে নির্মিত ফারাক্কা বাঁধকে দায়ী করা হয়।
পাউবো জানায়, গত ১ জানুয়ারি ভারতীয় জল ও বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের পানি কমিশনের উপপরিচালক এস পি সিং ও সহকারী পরিচালক ডি বেনুগোপাল বাংলাদেশে পানিপ্রবাহ পর্যবেক্ষণ করেন। দ্বিতীয় দফায় ভারতের পানি কমিশনের উপপরিচালক মো. সাইফুল্লাহ বেগ ও সহকারী পরিচালক এ এ রাও হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানি পর্যবেক্ষণ করছেন।
অপরদিকে বাংলাদেশের চার সদস্যের প্রতিনিধিদলও এখন ভারতের ফারাক্কা পয়েন্টে গঙ্গা নদীর পানিপ্রবাহ পর্যবেক্ষণ করছেন। দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন পাউবোর উত্তরাঞ্চলীয় ওয়াটার হাইড্রোলজি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইকবাল হোসেন।
পাউবোর ওয়াটার হাইড্রোলজি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত প্রকৌশলী মো. মোফাজ্জল হোসেন জানান, এ বছরের শুরু থেকেই বেশ ভালো প্রবাহ রয়েছে। কখনো কখনো সেটা ৯০ হাজার থেকে ৯৫ হাজার কিউসেক পর্যন্ত উঠেছে।
পাউবো জানায়, পদ্মা নদীবেষ্টিত পাবনা, কুষ্টিয়া, নাটোর, রাজশাহী, নওগাঁ ও মেহেরপুর জেলার অন্তত দুই কোটি মানুষ ফারাক্কার বাঁধের বিরূপ প্রভাবের শিকার। পানির অভাবে দেশের বৃহত্তম গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্প, পাবনা সেচ ও পল্লী উন্নয়ন প্রকল্প, পানাসি প্রকল্প, বরেন্দ্র প্রকল্পসহ বিভিন্ন প্রকল্পের হাজার হাজার একর জমিতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও পাম্প ব্যবহার করে সেচ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
কিন্তু এবার পানিপ্রবাহ বৃদ্ধির ফলে এই অঞ্চলের কৃষকদের সেচ সমস্যা অনেকটাই লাঘব হবে বলে মনে করছে পাউবো।
হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নিচের বাদাম বিক্রেতা আবু সাইদ এনটিভি অনলাইনকে জানান, গত ১২ বছর ধরে তিনি এ এলাকায় বাদাম বিক্রি করছেন। এতদিন ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে নদীতে পানি থাকতই না। পিলারগুলো থাকত শুকনায়। এবারের মতো এত পানি তিনি অনেকদিন পদ্মায় দেখেননি।