চাঁদপুরে হত্যা মামলায় চার জনের যাবজ্জীবন
জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার বালিথুবা গ্রামে আমিনুল ইসলাম আরিফকে (২৩) হত্যা করা হয়।
চাঁদপুরে হত্যা মামলায় চার আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, প্রত্যেকের ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। আজ সোমবার (১৯ জুন) দুপুরে জ্যেষ্ঠ জেলা ও দায়রা জজ মো. মহসিনুল হক এই রায় দেন।
দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন সদর উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামের সাহিদা বেগম (৪০), ফরিদগঞ্জ বালিথুবা গ্রামের ওমর শরীফ (২০), একই উপজেলার সন্তোষপুর গ্রামের গাজীবাড়ির কামরুল ইসলাম (২৫) ও মুন্সীগঞ্জ জেলার টঙ্গিবাড়ীর হাসাইল এলাকার সাইফুল ইসলাম (২০)।
আমিনুল ইসলাম আরিফ লক্ষ্মীপুর জেলা সদরের মহাদেবপুর গ্রামের সামছুল ইসলামের ছেলে। গোপনে বিয়ে করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে মেয়ের পরিবারের যোগসাজশে তাঁকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়।
মামলার বিবরণে জানা যায়, হত্যার শিকার আমিনুল ইসলাম আরিফ লক্ষ্মীপুর জেলার বাসিন্দা হলেও রাজধানীর খিলগাঁও থানার উত্তর গোরানের সিপাহীবাগে ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে একই এলাকার বাসিন্দা ইউনুছের মেয়ে পিংকিকে গোপনে আদালতে গিয়ে বিয়ে করেন। এই ঘটনা উভয় পরিবারে জানাজানি হলে পিংকির মা সাহিদা বেগম আরিফকে তুলে নিয়ে স্থানীয় ভাড়া করা লোকজন দিয়ে গোপন আস্তানায় রাখেন। আরিফ এই সংবাদ তাঁর আপন খালা নিলা বেগমকে জানান। নিলা বেগম ঘটনাস্থলে গিয়ে সাহিদা বেগমকে পান। পরে সাহিদা বেগমকে বুঝিয়ে সেখান থেকে আরিফকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন। এরপর থেকে উভয় পরিবারে শত্রুতা চলতে থাকে।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পিংকির পরিবার অর্থাৎ সাহিদা বেগম, নাছিমা বেগম ও নাছির পরামর্শ করে পরিকল্পিতভাবে ২০০৮ সালের ৪ মে রাত আনুমানিক সাড়ে ১১টার দিকে দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে ওমর শরীফ, কামরুল ও সাইফুল আরিফদের বাসায় গিয়ে তাঁকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যান। পরে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জের বালিথুবা গ্রামে ওমর শরীফের বাড়িতে এনে তাঁর গলা, বুক, তলপেটসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে উপর্যুপরি আঘাত করে হত্যা করেন।
আরিফকে হত্যার পরের দিন ৫ মে আনুমানিক সকাল ৭টার দিকে আসামি ওমর শরীফ আরিফের মা মনোয়ারা বেগমকে জানান আরিফ মারা গেছেন। এই ঘটনার সতত্যা জানতে আরিফের মা ওমর শরীফকে ফোন দেন। তখন তিনি জানান ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আছেন। বিষয়টি জানতে পেরে আরিফের চাচা মো. তাজুল ইসলাম পাটওয়ারী আত্মীয়স্বজন নিয়ে ফরিদগঞ্জ হাসপাতালে আসেন এবং তাঁর ভাতিজার মরদেহ দেখতে পান। এই ঘটনায় ওই দিনই তাজুল ইসলাম পাটওয়ারী বাদী হয়ে পিংকির মা সাহিদা বেগম, ওমর শরীফ, কামরুল হাসান, সাইফুল ইসলাম, নাছিমা বেগম ও নাছিরকে আসামি করে ফরিদগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করেন।
মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় ফরিদগঞ্জ থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ হোসেন সরকারকে। তিনি মামলাটি তদন্ত শেষে ২০১২ সালের ২৬ ডিসেম্বর আদালতে চার্জশিট দেন।
সরকার পক্ষের আইনজীবী পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) রনজিত রায় চৌধুরী জানান, মামলাটি দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছর চলাকালীন আদালত নয় জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন। সাক্ষ্যগ্রহণ ও মামলার নথিপত্র পর্যালোচনা এবং আসামিদের অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় আদালত এই রায় দেন। রায়ের সময় আসামি ওমর শরীফ পলাতক ছিলেন। বাকি তিন আসামি আদালতে উপস্থিতি ছিলেন।
আসামিপক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম ভুঁইয়া।