১১০০ মরদেহ আমাদের সামনে, তাদের স্বজনরাও তাকিয়ে ন্যায় বিচারের দিকে : প্রধান বিচারপতি
সাভারের রানা প্লাজার ভবন মালিক রানার জামিন আবেদনে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেছেন, আমরা যখন বিচার করি তখন আমাদের এভাবেই ভাবতে হয় যে, ওই ঘটনায় মারা যাওয়া প্রায় ১১শ’ লাশ আমাদের সামনে। তাদের আত্মীয়রাও ন্যায়বিচার চান।
সাভারের বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন রানা প্লাজা ধসে হতাহতের ঘটনায় করা মামলায় ভবন মালিক রানার জামিন আবেদনের শুনানি নিয়ে আজ সোমবার (১০ জুলাই) আবার ছয় মাসের জন্য মুলতবি (স্ট্যান্ড ওভার) করেছেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বিভাগ।
আজ শুনানির শুরুতে রানার আইনজীবী কামরুল ইসলাম রানার জামিন চেয়ে সর্বোচ্চ আদালতকে বলেন, ‘মাই লর্ড, দশ বছর ধরে সে কারাগারে আছে। তাই এখন তাকে জামিন দিন।’ তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আরও ছয় মাস থাকুক।’
তখন রানার আইনজীবী আবারও ন্যায় বিচারের কথা বলে জামিন চাইলে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, ‘আমরা যখন বিচার করি তখন আমাদের এভাবে ভাবতে হয় যে, এই ঘটনায় (রানা প্লাজা ধস) মারা যাওয়া প্রায় ১১’শ লাশ আমাদের সামনে। আর তাদের আত্মীয় স্বজনরা আরেক পাশে দাঁড়িয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে ন্যায় বিচার চাচ্ছে।’
এরপর সর্বোচ্চ আদালত রানার জামিন বিষয়ে শুনানি ছয় মাসের জন্য মুলতবি (স্ট্যান্ড ওভার) করেন।
আদালতে এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পি ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুল আলম।
রানার জামিন প্রশ্নে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে এর আগে তাকে জামিন দেন বিচারপতি আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি শাহেদ নুরুউদ্দিনের হাইকোর্ট বেঞ্চ। তবে রাষ্ট্র পক্ষের আবেদনে সে জামিন স্থগিত করে বিষয়টি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য নির্ধারণ করেন চেম্বার আদালতের বিচারপতি আবু জাফর সিদ্দিকী।
এরপর চেম্বার আদালতের স্থগিতাদেশ বাতিল চেয়ে যে আবেদন করেন রানা সে আবেদনের শুনানি প্রথমে দুই মাস এবং আজ আবার ছয় মাসের জন্য মুলতবি (স্ট্যান্ড ওভার) করলেন সর্বোচ্চ আদালত।
এর আগে গত ৮ মে রানা প্লাজা ধসে পড়ে সহস্রাধিক মানুষের মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলায় ভবনটির মালিক সোহেল রানাকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন ১০ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করেন আপিল বিভাগ। ওই দিন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
গত ৬ এপ্রিল এ মামলায় সোহেল রানাকে জামিন দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। পরে ৯ এপ্রিল হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত করে আপিল বিভাগে পাঠিয়ে দেন চেম্বার আদালত। ফলে রানার মুক্তিও স্থগিত হয়ে যায়।
তার আগে গত বছরের মার্চে রানাকে কেন জামিন দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। ওই রুলকে যথাযথ ঘোষণা করে গত ৬ এপ্রিল তাকে জামিন দেওয়া হয়েছিল।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা রানা প্লাজা ধসের মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় প্রায় ১৩শ মানুষের মৃত্যু হয়। যাদের প্রায় সবাই ছিলেন পোশাক কারখানার শ্রমিক। এ ঘটনায় হওয়া হত্যা মামলার প্রধান আসামি ভবনের মালিক সোহেল রানা।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভার বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন রানা প্লাজা (১০ তলা ভবন) ধসে নিহত হয় এক হাজার ১৩৬ জন মানুষ। এই ঘটনার পর ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পথে সোহেল রানাকে যশোরের বেনাপোল থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। সেই থেকে কারাগারে আছেন সোহেল রানা।