নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকলে আ.লীগের ভাত নেই : মির্জা ফখরুল
তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নিরপেক্ষ সরকার, নির্দলীয় সরকার থাকলে আওয়ামী লীগের ভাত নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ শুক্রবার বিকেল পৌনে ৫টায় নোয়াখালীর শহীদ ভুলু স্টেডিয়ামে বিএনপির পদযাত্রা সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ মন্তব্য করেন।
পদযাত্রায় বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘২০১১ সালে সবাইকে বোকা বানিয়ে বিচার ব্যবস্থায় জোর খাটিয়ে খায়রুল হককে দিয়ে পার্লামেন্টে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিধান বাতিল করে দেন। কেন, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে। কারণ তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকলে, নিরপেক্ষ সরকার থাকলে, নির্দলীয় সরকার থাকলে আওয়ামী লীগের ভাত নেই। ৩০টি আসনও পেত না।’
মির্জা ফখরুল আওয়ামী লীগের নেতাদের উদ্দেশে বলেন, ‘তারা বলে নির্বাচন আমাদের অধীনে হবে। আমরাই ভোটকেন্দ্র নিয়ন্ত্রণ করব। আমরাই ভোট দেওয়াব, আমাদের মতো করে সবাইকে ভোট দিতে হবে। নইলে চলে যেতে হবে। এমনকি আমাদের ভোটারদের এখনও বলে ভোট কাকে দিবা। যদি বিএনপিকে ভোট দিতে চাও তাহলে তোমার ভোট হয়ে গেছে। ভোট কেন্দ্রে যাইতেই দেয় না।’
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘আমাদের বলে তাদের অধীনে নাকি ভোট দিতে হবে। ২০২১ সালে শেখ হাসিনা আমাদের ডেকে বলে নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে সবাই ভোট করতে পারবেন। সবাইকে বলেন ভোট করতে আমি কোন বাধা দেব না। আমরা ভাবলাম বোধ হয় শুভ বুদ্ধির উদয় হয়েছে। কী করা যাবে বলেন? ভূতের মুখের রাম রাম। আগের রাতে ভোট হয়ে গেল। এখন আবার বলছে আমরা সুন্দর ভোট করব। আমাদের অধীনেই ভোট হবে। ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশন হবে। আহা রে কী আবদার। শিয়ালের কাছে বারবার কুমিরের বাচ্চা দেওয়া যাবে না। বারবারই খেয়ে ফেলবে। আমরা এবার আর খেতে দিব না।’
এবার মানুষ জেগে উঠেছে। এক দফা এক দাবি শেখ হাসিনা কবে যাবি উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কীভাবে তাদের বিশ্বাস করব। সুবর্ণচরে একজনকে শুধু ধানের শীষে ভোট দেওয়ার অপরাধে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। এভাবে তারা অসংখ্য মা-বোনকে বেইজ্জতি করেছে। আজকে শ্রমিক ভাইয়েরা বাজারে যেতে পারে না। বাজারে গিয়ে চাল কিনলে ডাল কিনতে পারে না, মাংস কিনতে পারে না, সবজি কিনতে পারে না। ১০ টাকায় চাল দিবে বলেছে। এখন সেই চাল ৯০ টাকা। ঘরে ঘরে চাকরি দিবে বলেছে। কোনো চাকরি হয়নি। তাদের লোকদের কাছ থেকে তারা ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে চাকরি দিচ্ছে।’
সরকারের দুর্নীতির প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, বিচার ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে। আমাদের অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে। দেশটা একটা লুটের রাজত্বে পরিণত করেছে। ব্যাংকগুলো সব লুট করতে করতে খালি করে দিয়েছে। হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। আবার পাচারের টাকা দেশে নিয়ে আসার একটা বিধান করেছে। দেশে নিয়ে আসলে আবার আড়াই পার্সেন্ট ইনসেন্টটিভ পাবে। কী মজা, আমাদের পকেট থেকে টাকা কেটে রেখে ট্রাক্সের টাকা নিয়ে তারা আবার চোরদের পুরস্কার দিচ্ছে। এ সমস্যা শুধু বিএনপির নয়, এ সমস্যা শুধু খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নয়। এ সমস্যা সমগ্র জাতির। আমাদের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব আজকে বিপন্ন। আমাদের আজকে ভোট দেওয়ার অধিকার নেই।’
আওয়ামী লীগকে হুঁশিয়ারি দিয়ে ফখরুল বলেন, ‘আর কোনো সময় নেই, তাদের সময় শেষ। আমি পরিষ্কারভাবে বলেছি। আবারও বলছি—ভালো ছেলের মতো, সুবোধ বালক-বালিকার মতো পদত্যাগ করেন। সংসদ ভেঙে দেন। যদি ভালোয় ভালোয় শুনে পদত্যাগ করেন তাহলে তো ভালো। তা না হলে ফয়সালা হবে রাজপথে।’
বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলা দিয়ে আট বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তিনি গণতন্ত্রের জন্য আপসহীন সংগ্রাম করেছেন। আমরা নির্বাচিত হলে রাষ্ট্র মেরামতের জন্য আমরা ৩১ দফা দিয়েছি। আমাদের নেতা তারেক রহমান এই ৩১ দফা দিয়ে আমাদের একটি নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখিয়েছেন।’
কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিনের সভাপতিত্বে পদযাত্রায় আরও বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলু, ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নাল আবেদীন ফারুক, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আন্তর্জাতিকবিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেন, বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম প্রমুখ।
পদযাত্রায় নেতৃত্ব দেন নোয়াখালী জেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম হায়দার, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুর রহমান, নোয়াখালী জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ আজাদ, নোয়াখালী জেলা যুবদলের সভাপতি মনজুরুল আজম সুমন, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন খান, জেলা বিএনপির সদস্য মো.গোলাম মোমিত ফয়সাল, জেলা শ্রমিকদলের সদস্য সচিব নিজাম উদ্দিন প্রমুখ।
বিএনপির সহযোগী সংগঠন কৃষকদল, শ্রমিকদল, মৎসজীবীদল,তাঁতীদল ও জাসাসের উদ্যেগে এই পদযাত্রার আয়োজন করা হয়। এ পদযাত্রায় বৃহত্তর নোয়াখালীর পাঁচটি জেলার নেতাকর্মী অংশ নেন।