আরসার শীর্ষ কমান্ডারসহ গ্রেপ্তার ছয়, আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার
কক্সবাজারে টেকনাফের গহীন পাহাড় থেকে মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি আরসার শীর্ষ কমান্ডারসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার ও বিপুল আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। শুক্রবার (২১ জুলাই) রাতে টেকনাফ উপজেলার বাহারছরা ইউনিয়নের শামলাপুর এলাকার গহীন পাহাড় থেকে অস্ত্রসহ তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় ঘটনাস্থল থেকে সাতটি দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি ও নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
‘আরসা’র গোপন আস্তানায় তারা ‘টর্চার সেল’ গড়ে তুলে অপহরণ, নির্যাতন ও মুক্তিপণ আদায় ছাড়াও হত্যার পর মরদেহ গুম করে আসছিল।
এসময় তাদের কাছ থেকে একটি ৭.৬৫ এমএম পিস্তল, একটি বিদেশি রিভলবার, একটি শটগান, চারটি দেশীয় এলজি, তিনটি রামদা ও গোলাবারুদসহ নগদ ৭০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তার আরসার সামরিক কমান্ডার হাফেজ নূর মোহাম্মদ (২৮) কুতুপালং ক্যাম্পের দিল মোহাম্মদের ছেলে। গ্রেপ্তার হওয়া অপর পাঁচ আরসা সদস্য হলেন- মোহাম্মদ হোসেন জোহার (৩০), মো. ফারুক হারেস (২৩), মনির আহাম্মদ (৩৬), নূর ইসলাম (২৯) ও মো. ইয়াছিন (২১)।
আজ শনিবার (২২ জুলাই) ১১টার দিকে কক্সবাজার র্যাব-১৫ এর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানিয়েছেন, টেকনাফের গহীন পাহাড়টিতে আরসা সন্ত্রাসীরা গোপন আস্তানা তৈরি করে ‘টর্চার সেল’ গড়ে তুলেছিল। ওখানে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এ অভিযান চালানো হয়।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, আরসার গোপন আস্তানার তথ্য নিশ্চিত হওয়ার পর গহীন পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে প্রথমে আরসার শীর্ষ সন্ত্রাসী ও কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্প এর অন্যতম সামরিক কমান্ডার হাফেজ নূর মোহাম্মদকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অপর পাঁচ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। উদ্ধার করা হয় অস্ত্র ও গুলি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা খুন ও অপহরণসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িত থাকার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে খন্দকার আল মঈন আরও জানান, হাফেজ নূর মোহাম্মদের ‘আরসা’র ৩০-৩৫ জন সদস্য কুতুপালং ক্যাম্প ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় খুন, অপহরণ, ডাকাতি, মাদক, চাঁদাবাজি, আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে থাকে। তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য তারা পার্শ্ববর্তী দেশ হতে দুর্গম সীমান্তবর্তী অঞ্চল দিয়ে অস্ত্র চোরাচালান করতো বলে জানা যায়। হাফেজ নূর মোহাম্মদ তার দলের সদস্যদের মাধ্যমে রোহিঙ্গা ও স্থানীয় জনগণকে খুন, অপহরণ ও গুমের ভয় দেখিয়ে চাঁদা দাবি করত। চাঁদার অর্থ না পেলে অপহরণপূর্বক শারীরিক ও পাশবিক নির্যাতনসহ মুক্তিপণ আদায় করত। মুক্তিপণ না পেলে তারা খুন করে গহীন পাহাড়ে অথবা জঙ্গলে লাশ গুম করতো।
খন্দকার আল মঈন জানান, গ্রেপ্তার হাফেজ নূর মোহাম্মদ উখিয়া উপজেলার কুতুপালং ৮ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা। সে মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) একজন শীর্ষ সামরিক কমান্ডার। ২০১৬ সালে ‘আরসা সদস্য আরিফ উদ্দিনের মাধ্যমে ‘আরসা’য় যোগ দেয়। নূর মোহাম্মদ কুংফুর ব্লেক বেল্টধারী ও বিস্ফোরক তৈরিতে পারদর্শী। তার নেতৃত্বেই ক্যাম্পে হেড মাঝি শফিউল্লাহ্ হত্যাকাণ্ড, সালাম হত্যাকাণ্ড, সলিম হত্যাকাণ্ড, মালেক হত্যাকাণ্ড, হাবুইয়া হত্যাকাণ্ড, ইমান হত্যাকাণ্ড, আবুল মুনসুর হত্যাকাণ্ড, সালেহ্ হত্যাকাণ্ড, জোরপূর্বক একজন মহিলার ঘরে প্রবেশের সময় মহিলা বাধা দিলে তাকে গুলি করে হত্যা এবং সাম্প্রতিক সময়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আলোচিত ৬ জন হত্যাসহ বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত থাকার তথ্য মিলিছে। সামরিক কমান্ডার হাফেজ নূর মোহাম্মদের বিরুদ্ধে ক্যাম্পে হত্যা, অপহরণ, চাঁদাবাজি, মানবপাচার, মাদকপাচার ও আধিপত্য বিস্তারসহ নানা অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগে তার বিরুদ্ধে উখিয়া ও টেকনাফ থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।
এ ব্যাপারে মামলা করে গ্রেপ্তারদের টেকনাফ থানায় সোপর্দ করার কথা জানিয়ে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ক্যাম্পে আরসার চার থেকে সাড়ে চারশ সন্ত্রাসী সক্রিয় রয়েছে। এদের ধরতে র্যাব অভিযান অব্যাহত রেখেছে।