খণ্ড খণ্ড মিছিলে পল্টনে যোগ দিচ্ছে নেতাকর্মীরা
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশে যোগ দিচ্ছেন নেতাকর্মীরা। ইতোমধ্যে মূল সমাবেশ মঞ্চের চারপাশসহ পল্টন থানা পর্যন্ত নেতাকর্মীদের আনাগোনায় ভরে গেছে। অনেকে অবস্থান করছেন পল্টন এলাকার বিভিন্ন গলিপথ ও মার্কেটের সামনেও।
আজ শুক্রবার (২৮ জুলাই) রাজধানীর পনয়াপল্টন, ফকিরাপুল, দৈনিক বাংলা ও মতিঝিল এলাকা ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
এ সময় সমাবেশস্থলে আসা নেতাকর্মীরা দাবি করছেন, ঢাকা অভিমুখে পথে পথে তল্লাশি করা হয়েছে। অনেক নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এদিকে সরেজমিনে দেখা গেছে, সমাবেশস্থলের বাইরে মতিঝিল, ফকিরাপুল, দৈনিক বাংলা, কালভার্ট মোড় এলাকায় রয়েছে বিপুল সংখ্যক বিএনপিকর্মী। তারা নিজ নিজ এলাকার নিজ নেতার ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে অবস্থান নিয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতিও রয়েছে চোখে পড়ার মতো। পুলিশ-গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে বিপুল পরিমাণ আনসার সদস্যরাও রয়েছে।
রাত থেকে মহাসমাবেশে আসা তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা বলছেন, সরকার পতনের এক দফা দাবির আন্দোলনে তারা ঢাকায় এসেছেন। যতক্ষণ সরকার পদত্যাগ না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত তারা রাস্তায় অবস্থান করবেন। মহাসমাবেশ থেকে সর্বোচ্চ কঠোর কর্মসূচি প্রত্যাশা করছেন তারা।
এদিকে ২৩ শর্তে বিএনপি নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ করবে। তাছাড়া একই শর্তে আওয়ামী লীগে তিন সহযোগী সংগঠন বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে শান্তি সমাবেশ করবে।
মানতে হবে যে সব শর্ত
ডিএমপির কমিশনারের পক্ষে বিশেষ সহকারী সৈয়দ মামুন মোস্তফা স্বাক্ষরিত ২৩ শর্ত দেওয়া হয়েছে দল দুটিকে। এর মধ্যে শর্তের একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে। অপরটি দেওয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদকে। সেখানে বলা হয়েছে, আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২৩ শর্ত যথাযথভাবে পালন সাপেক্ষে ২৮ জুলাই দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হলো।
১. এ অনুমতিপত্র স্থান ব্যবহারের অনুমতি নয়, স্থান ব্যবহারের জন্য অবশ্যই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হবে।
২. স্থান ব্যবহারের অনুমতিপত্রের উল্লেখিত শর্তাবলি যথাযথভাবে পালন করতে হবে।
৩. অনুমদিত স্থানেই মহাসমাবেশের যাবতীয় কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখতে হবে।
৪. কোনো অবস্থাতেই অনুমোদিত স্থানের বাইরে কোনো ধরনের জনসমাগম করা যাবে না।
৫. নিরাপত্তার জন্য নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পর্যাপ্ত সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক (দৃশ্যমান আইডি কার্ডসহ) নিয়োগ করতে হবে।
৬. স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায় নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় মহাসমাবেশস্থলের চারদিকে উন্নত রেজ্যুলেশনযুক্ত সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে।
৭. নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় মহাসমাবেশস্থলে আগতদের হ্যান্ড মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে (ভদ্রচিতভাবে) চেকিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
৮. নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় মহাসমাবেশস্থলে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা রাখতে হবে।
৯. শব্দদূষণ প্রতিরোধে সীমিত আকারে মাইক বা শব্দযন্ত্র ব্যবহার করতে হবে, কোনোভাবেই অনুমোদিত স্থানের বাইরে মাইক বা শব্দযন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না।
১০. অনুমোদিত স্থানের বাইরে প্রজেক্টর স্থাপন করা যাবে না।
১১. আজান, নামাজ ও অন্যান্য ধর্মীয় সংবেদনশীল সময়ে মাইক ব্যবহার করা যাবে না।
১২. ধর্মীয় অনুভূতির ওপর আঘাত আসতে পারে, এমন কোনো বিষয়ে ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন, বক্তব্য প্রদান বা প্রচার করা যাবে না।
১৩. মহাসমাবেশের কার্যক্রম ছাড়া মঞ্চকে অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা যাবে না।
১৪. মহাসমাবেশ শুরুর দুই ঘণ্টা আগে লোকজন সমবেত হওয়ার জন্য আসতে পারবে।
১৫. অনুমোদিত সময়ের মধ্যে (দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা) মহাসমাবেশের সার্বিক কার্যক্রম শেষ করতে হবে।
১৬. কোনো অবস্থাতেই মূল সড়কে যানবাহন চলাচল প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না।
১৭. আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও জননিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়, এমন কার্যকলাপ করা যাবে না।
১৮. রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কার্যকলাপ বা বক্তব্য প্রদান করা যাবে না।
১৯. উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান বা প্রচারপত্র বিলি করা যাবে না।
২০. কোনো ধরনের লাঠিসোঁটা/ব্যানার, ফেস্টুন বহনের আড়ালে লাঠি, রড ব্যবহার করা যাবে না।
২১. আইনশৃঙ্খলার অবনতি ও কোনো বিরূপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে আয়োজনকারী কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না।
২২. উল্লেখিত শর্তাবলি পালন না করলে তাৎক্ষণিকভাবে এ অনুমতির আদেশ বাতিল বলে গণ্য হবে।
২৩. জনস্বার্থে কর্তৃপক্ষ কোনো কারণ দর্শানো ছাড়া এ অনুমতির আদেশ বাতিল করার ক্ষমতা সংরক্ষণ করেন।