দেশের জনগণ ও গণতন্ত্রের জয় হয়েছে : রাষ্ট্রপতি
অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করায় নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেছেন, নির্বাচন কমিশনের সফলভাবে নির্বাচন পরিচালনার মাধ্যমে দেশে গণতান্ত্রিক শক্তি আরও সুদৃঢ় হয়েছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয় হয়েছে দেশের জনগণের, জয় হয়েছে গণতন্ত্রের।
আজ মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে দেওয়া ভাষণের শুরুতে এসব কথা বলেন রাষ্ট্রপতি।
রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, নির্বাচনে জয়-পরাজয় থাকবে। জনগণের এ রায় মেনে নিয়ে গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রাখাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। দেশের গণতন্ত্রের জন্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে আয়োজন অত্যন্ত যুগান্তকারী ঘটনা, যা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয় হয়েছে দেশের জনগণের, জয় হয়েছে গণতন্ত্রের।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, নির্বাচন ঘিরে একটি মহল সহিংসতা ও সংঘাত সৃষ্টি করে গণতন্ত্রের শান্ত-স্নিগ্ধ যাত্রাপথে বাধা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালিয়েছিল। তাদের গণতন্ত্র বিরোধী ও সহিংস কর্মকাণ্ড সাময়িকভাবে জনগণকে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে রাখলেও ভোটারদের ভোটদান থেকে বিরত রাখতে পারেনি। সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত ও সক্রিয় অংশগ্রহণের জন্যই সরকার ও নির্বাচন কমিশনের সব পদক্ষেপ সার্থক হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, নির্বাচন বর্জনকারী দলগুলো সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করেছে। আমি আশা করি— ভবিষ্যতে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো সহিংসতা ও নৈরাজ্যের পথ পরিহার করে সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং জনগণ ও গণতন্ত্রের কল্যাণে অহিংস পন্থায় গঠনমূলক কর্মসূচি পালন করবে। সরকারও এক্ষেত্রে সংযত আচরণ করবে- এটাই সবার প্রত্যাশা।
১৯৭৫-এর ১৫ই আগস্টের বর্বর হত্যাকাণ্ড ইতিহাসে সবচেয়ে বেদনাদায়ক অধ্যায় উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি নিহত বঙ্গবন্ধু পরিবারের আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি কামনা করেন।
মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, ২০০১ সালের নির্বাচন পরবর্তী দেশে যে নৃশংস সহিংসতা হয়েছিল তা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায়। এর মাধ্যমে আমাদের হাজার বছরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্যকে ভূলুণ্ঠিত করা হয়েছিল। কিন্তু ২০০৮ সালের নির্বাচনসহ পরবর্তীতে অনুষ্ঠিত সকল নির্বাচনে সহিংসতার পুনরাবৃত্তি থেকে মুক্তি পেয়েছি।
গণতন্ত্র ও উন্নয়নের নিষ্কণ্টক পথচলার জন্য রাজনৈতিক দলগুলো উদার ও গঠনমূলক মনোভাব নিয়ে জনগণের পাশে দাঁড়াবে এটাই দেশবাসীর কাছে প্রত্যাশা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, জাতীয় ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দ্বাদশ জাতীয় সংসদে ভাষণ দেওয়ায় আমি পরম করুণাময় আল্লাহর নিকট শুকরিয়া আদায় করছি। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসাবে এটাই আমার প্রথম ভাষণ। ইংরেজি নববর্ষ ও দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের সূচনা লগ্নে। জনাব স্পিকার আপনাকে এবং নবগঠিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব নেওয়ায় আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি। আমি অভিনন্দন জানাচ্ছি দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের মাননীয় সংসদ সদস্যগণদের। প্রিয় দেশবাসীর প্রতি আমার রইলো শুভেচ্ছা ও শুভকামনা। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে আমাকে নির্বাচিত করায় এবং গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা বজায় রাখায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং মাননীয় সংসদ সদস্যদের জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ।
রাষ্ট্রপতি বলেন, জনাব স্পিকার পঠিত ভাষণটিকে কার্যবিবরণীতে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আপনাকে অনুরোধ করছি। আমি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পরম শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি শহীদদের যাদের বীরত্ব ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে আমরা অর্জন করেছি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত জাতীয় সংসদ জনগণের সব প্রত্যাশার ধারক ও বাহক। তাদের চাহিদাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে নাগরিকদের কল্যাণে সংসদ যথাযথ ও কার্যকর ভূমিকা পালন করবে এটাই জনগণের প্রত্যাশা।
রাষ্ট্রপতি সংসদ সদস্যদের বলেন, আপনারা সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত। জনগণ অনেক আশা নিয়ে তাদের সেবা করার সুযোগ দিয়েছে যেন তাদের চাওয়া-পাওয়া আপনারা সংসদে তুলে ধরেন। এটাই সংসদ সদস্য হিসেবে আপনাদের মূল দায়িত্ব ও কর্তব্য। দ্বাদশ জাতীয় সংসদে অনেক সংসদ সদস্য প্রথমবারের মতো নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্যে অনেকে বয়সে নবীন। সংসদের কার্যপ্রণালি বিধি এবং সংশ্লিষ্ট রীতিনীতি আয়ত্ত করে তারা দক্ষ পার্লামেন্টারিয়ান হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলবেন, এটি তাদের কাছে আমার প্রত্যাশা। এক্ষেত্রে জাতীয় সংসদের অভিজ্ঞ সংসদ সদস্যরা তাদের মেধা ও অভিজ্ঞতা দিয়ে নবীন সংসদ সদস্যদের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিতে পারেন।
উন্নয়নের মূলভিত্তি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং গণতন্ত্রের অব্যাহত চর্চা উল্লেখ করে মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, গণতন্ত্রের স্বাভাবিক গতিপথ রুদ্ধ হলে উন্নয়নও বাধাগ্রস্ত হয়। গত দেড় দশকে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং ধারাবাহিক গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা বজায় থাকার কারণে দেশের উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। উন্নয়নের এ গতিধারা অব্যাহত রাখতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হবে। আমাদের লক্ষ্য— ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পর পরবর্তী লক্ষ্য স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে তরুণদের প্রশিক্ষিত করে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মেধা ও প্রযুক্তিনির্ভর উন্নত স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে স্মার্ট বাংলাদেশের চারটি স্তম্ভ- স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার ও স্মার্ট সমাজ ব্যবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গৃহীত স্বল্পমেয়াদি (২০২৫ সাল), মধ্যমেয়াদি (২০৩১ সাল) এবং দীর্ঘমেয়াদি (২০৪১ সাল) কর্মপরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন নবগঠিত মন্ত্রিসভাকে নিশ্চিত করতে হবে।
মো. সাহাবুদ্দিন আরও উল্লেখ করেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের ফলে কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, ব্যাংকিং, প্রশাসন, উদ্ভাবন, দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন, ডিজিটাল অর্থনীতি, আইসিটি শিল্পসহ প্রায় সব খাতে সমানভাবে উন্নতি হয়েছে। বিগত বছরে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের নানা উদ্যোগ বাস্তবায়নে সাফল্যের স্বীকৃতস্বরূপ বাংলাদেশ অসংখ্য আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। জাতিসংঘসহ ২৫টির অধিক বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং সংগঠনে বাংলাদেশ সক্রিয় সদস্য। প্রতিবেশীদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি আমরা। পরিবেশ সুরক্ষার ক্ষেত্রে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ও ভূমিকা অত্যন্ত ইতিবাচক। পরিবেশ ও জীব-বৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও উন্নয়নকে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিতে অন্তর্ভুক্ত করে বাংলাদেশের সংবিধানে ১৮ক অনুচ্ছেদ সংযোজন করা হয়েছে। দেশের পরিবেশ দূষণরোধ ও সংরক্ষণে নানাবিধ আইন, নীতি, বিধিমালা ও নির্দেশিকা প্রণয়ন ও হালনাগাদপূর্বক তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে সুরক্ষার লক্ষ্যে মুজিব ক্লাইমেট প্রসপারিটি প্ল্যান ২০২২-২০৪১ প্রণয়ন করা হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত হয় স্বাধীন বাংলাদেশ। স্বাধীনতা অর্জনের পর বঙ্গবন্ধু যখন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে তার স্বপ্নের সোনার বাংলায় রূপান্তরের কাজে আত্মনিয়োগ করেন, তখনই একটি কুচক্রী মহল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তাকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করে সদ্য-স্বাধীন বাংলাদেশের উন্নয়ন ও প্রগতির পথ রুদ্ধ করে দিয়েছিল। তবে গত দেড় দশকে আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে ধারাবাহিক উন্নয়নের কারণে বাংলাদেশ বিশ্বে রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। এ সময় আমরা দারিদ্র্যের হার ৪১.১ থেকে ১৮.৭ ভাগে হ্রাস করতে সক্ষম হয়েছি। বেকারত্বের হার ২০১০ সালে ছিল ৪.১০ শতাংশ, যা কমে বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ৩.২ শতাংশে। আমাদের স্বাক্ষরতার হার ছিল মাত্র ৪৫ ভাগ, যা আজ ৭৬.৮ ভাগে উন্নীত হয়েছে; আয়ুষ্কাল মাত্র ৫৯ বছর থেকে প্রায় ৭৩ বছরে উন্নীত হয়েছে। মাতৃমৃত্যু উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে, শিশুমৃত্যু হার হ্রাসে সাফল্যের কারণে বাংলাদেশ পেয়েছে এমডিজি পুরস্কার, চিকিৎসাসেবা আজ জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছে।
রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, করোনা অতিমারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব সত্ত্বেও গত প্রায় দেড় দশক ধরে জিডিপির গড় প্রবৃদ্ধি প্রায় ৬.৭ শতাংশের অধিক। এ সময়ে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ৫ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ২ হাজার ৭৯৩ মার্কিন ডলার এবং জাতীয় বাজেটের আকার ৯ গুণের অধিক বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। গত দেড় দশকে বাংলাদেশের বার্ষিক রপ্তানি আয় প্রায় ৪ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ৫৫ দশমিক পাঁচ-ছয় বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বরাদ্দ ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি করে বর্তমান অর্থবছরে ১ লাখ ২৬ হাজার ২৭২ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়েছে, যার মোট উপকারভোগীর সংখ্যা প্রায় ১০ কোটি ৬১ লাখ। এর মধ্যে বর্তমানে বয়স্ক ভাতাভোগীর সংখ্যা প্রায় ৫৮ লাখ, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা নারী ভাতাভোগীর সংখ্যা প্রায় ২৬ লাখ, প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীর সংখ্যা প্রায় ২৯ লাখ, বীর মুক্তিযোদ্ধা উপকারভোগীর সংখ্যা ২ লাখ ৪০ হাজারের অধিক এবং প্রাথমিক শিক্ষার জন্য উপবৃত্তির উপকারভোগীর সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ১২ লাখ। অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের লক্ষ্যে গত বছর বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো সরকারি চাকরিজীবী ব্যতীত ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে দেশের সকল নাগরিকের জন্য সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করা হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন আরও বলেন, কৃষি জমির পরিমাণ ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাওয়া সত্ত্বেও সরকারের বিভিন্ন কৃষিবান্ধব নীতির কারণে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পাওয়ায় খাদ্য উৎপাদনে আজ আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ। ধান, ভুট্টা, আলু, সবজি, সরিষাসহ বিভিন্ন ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে দেশে বর্তমান বার্ষিক খাদ্যশস্য উৎপাদন ৪৯২ লাখ টন। এর ফলে বৈশ্বিক সংকটের মধ্যেও দেশে খাদ্য নিরাপত্তা অব্যাহত রয়েছে। বর্তমানে বিশ্বে বাংলাদেশ ধান, সবজি, ও স্বাদু পানির মাছ উৎপাদনে তৃতীয়, পাট উৎপাদনে দ্বিতীয় এবং ইলিশ আহরণে প্রথম স্থানে রয়েছে। বাংলাদেশ মাছ, মাংস ও ডিম উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২০০৯ সালে ছিল মাত্র ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট, যা বর্তমানে বৃদ্ধি পেয়ে ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ ২৯ হাজার ৭২৭ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। ইতোমধ্যে শতভাগ মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনা হয়েছে। বাংলাদেশের জন্য মর্যাদাপূর্ণ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের অধিকাংশ স্থাপনার নির্মাণকাজ এবং পরমাণু জ্বালানি হস্তান্তর সম্পন্ন হয়েছে। আশা করছি, এ বছর এ কেন্দ্র হতে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। গত দেড় দশকে যোগাযোগ খাতে বৈপ্লবিক উন্নয়ন হয়েছে। আইকনিক পদ্মা সেতু, পায়রা সেতু, দ্বিতীয় মেঘনা, দ্বিতীয় গোমতী প্রভৃতি অসংখ্য সেতুসহ সড়ক, মহাসড়ক নির্মাণ, পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। জেলা, আঞ্চলিক ও জাতীয় পাকা মহাসড়কের পরিমাণ প্রায় তিন গুণ বৃদ্ধি করে ২২ হাজার ৪৭৬ কিলোমিটার এবং গ্রামীণ সড়কের পরিমাণ ৭৬ গুণ বৃদ্ধি করে প্রায় ২ লাখ ৩৮ হাজার কিলোমিটারে উন্নীত করা হয়েছে। ঢাকা শহরে জনগণের চলাচল সহজ ও নিরাপদ করতে এমআরটি লাইন-৬ উত্তরা হতে মতিঝিল পর্যন্ত চালু হয়েছে এবং এর কমলাপুর অংশের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল এবং ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত অংশ যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের সফটওপেনিং করেছেন।
মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ফলে কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, ব্যাংকিং, প্রশাসন, উদ্ভাবন, দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন, ডিজিটাল অর্থনীতি, আইসিটি শিল্পসহ প্রায় সব খাতে সমানভাবে উন্নতি হয়েছে। বিগত বছরে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের নানা উদ্যোগ বাস্তবায়নে সাফল্যের স্বীকৃতস্বরূপ বাংলাদেশ ভূষিত হয়েছে অসংখ্য আন্তর্জাতিক পুরস্কারে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিলে এর প্রভাব আমাদের উপরও পড়বে। এজন্য আমাদের প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি থাকতে হবে। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য কৃষি খাতের উৎপাদন ব্যবস্থা অব্যাহত রাখতে হবে। উচ্চ-মূল্য ফসল উৎপাদনে গুরুত্ব দিয়ে রপ্তানি নিশ্চিত করার জন্য উন্নত কৃষিপ্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে। কৃষিপণ্য সংরক্ষণাগার এবং কৃষি প্রক্রিয়াজাত শিল্প গড়ে তুলতে হবে। জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে গভীর সমুদ্রে গ্যাস ও তেল অনুসন্ধান কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির পাশাপাশি নতুন নতুন শ্রমবাজারের অনুসন্ধান করতে হবে যেন দক্ষ শ্রমশক্তি রপ্তানি সম্ভব হয়।
রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, বাংলাদেশের পণ্যগুলো রপ্তানি বাজারে যেন শুল্কমুক্ত সুবিধা পায় সে লক্ষ্যে দ্বিপাক্ষিক ও আঞ্চলিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষর ও কার্যকর করার ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন। আর্থিক খাতের সংস্কার এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।