কুমার নদ বাঁচাতে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদের ঘোষণা জেলা প্রশাসনের
ফরিদপুর জেলা প্রশাসন গত বছর কুমার নদ বাঁচাতে উদ্যোগ নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় তারা প্রথমেই শুরু করে নদীর কচুরিপানা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম। তখন অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের ঘোষণা দিলেও কার্যক্রমটি বাস্তবায়ন করতে পারেনি জেলা প্রশাসন। তবে তাদেরকে সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই সময়ের মধ্যে অবৈধ দখলদাররা তাদের জায়গা না ছাড়ায় এবার উচ্ছেদের ঘোষণা দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
ফরিদপুরে দুটি বড় বাজারের যাবতীয় বর্জ্য ফেলা হচ্ছে কুমার নদে। শহরের বুকে বয়ে চলা পৌরসভার ড্রেনগুলোর নিষ্কাশন মুখ এই নদে মিশেছে। ফলে যাবতীয় দূষিত পয়োঃবর্জ্য এসে পড়ছে নদে।
আর রাঘববোয়ালরা এখনো নদের দুইপাড়ের জমি দখল করে অনেকে পাকা বাড়িঘর, দোকানপাট গড়ে তুলেছে। একবছর আগে কুমার নদ রক্ষা অভিযান শুরুর পরে এখনও চলছে এই দখল-দূষণ। কিন্তু শহর ফরিদপুরকে বাঁচাতে হলে কুমার নদকে বাঁচাতেই হবে।
বিশ্ব পানি দিবস উপলক্ষে ফরিদপুরে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে এ তথ্য জানান ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার।
রোববার (২৪ মার্চ) সকালে জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের আয়োজনে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পানি ব্যবহারের ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়।
আলোচনা সভায় ফরিদপুরের পদ্মা, আড়িয়াল খাঁ, মধুমতি ও কুমার নদের নাব্য রক্ষাসহ অবৈধভাবে বালি উত্তোলন ও শহরের উপকণ্ঠে সিএন্ডবি ঘাটের পাশে ধলার মোড় সংলগ্ন পদ্মা নদীর সাথে কুমার নদের উৎসমুখে ভরাট ও নির্মাণের পরে এক বছর ধরে পড়ে থাকা ১৭৬ কোটি টাকা প্রকল্পব্যয়ে নির্মিত মদনখালী স্লুইচগেট অকার্যকর হয়ে পড়ে থাকার বিষয়টিও আলোচনায় উঠে আসে।
জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, পদ্মা ও মধুমতি থেকে অবৈধভাবে প্রচুর বালু তোলা হয়। যদি তুলতেই হয় তাহলে বালুমহাল ঘোষণা করে ইজারা দিয়ে তোলা হোক। আর শহরের প্রাণ কুমার নদ রক্ষায় রোজার পরে মাস্টারপ্ল্যান ধরে অবৈধস্থাপনা উচ্ছেদে জোরদার অভিযান শুরু করা হবে।
জেলা প্রশাসক বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে এবিষয়ে অবগত করে অভিযান চালানো হবে; যাতে কেউ এনিয়ে অপপ্রচার চালাতে না পারে। প্রভাবশালী হোক বা যেই হোক কারও আপত্তি গ্রাহ্য করা হবে না। রোজার পরে কুমার নদের দুই পাড়ে নদের জায়গায় যত স্থাপনা আছে সব ভেঙে দেওয়া হবে।
কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, কিছু টেকনিক্যাল সমস্যার কারণে মদনখালী রেগুলেটর চালু করতে পারিনি। কুমার নদের উৎসমুখের জমি অধিগ্রহণের টাকা ফেরত গেছে। সেখানে ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি রয়েছে। আমরা ওই জমি দীর্ঘমেয়াদি লিজ নিয়ে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করব। নদীর পাড়ে যাতে বর্জ্য ফেলতে না পারে সেজন্য কুমার নদের শহরের অংশের দুই পাড়ে মানুষ চলাচলের জন্য ওয়াকওয়ে তৈরি করতে হবে। মদনখালী স্লুইচগেটটি চালু করে নদীর উৎসমুখ হয়ে পদ্মা থেকে পানি প্রবাহ তৈরি করা গেলে সারাবছরই কুমার নদের নাব্য ধরে রাখা যাবে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ইয়াছীন কবির বলেন, ফরিদপুরে শহরের মধ্য দিয়ে নদী ও খাল প্রবাহিত হয়েছে এটি একটি সম্পদ। এই সম্পদ রক্ষা করতে হবে। আমাদের কোন মাস্টারপ্ল্যান ছিল না। তবে এখন ডেল্টা প্ল্যান তৈরি করা হয়েছে। শহরকেন্দ্রীক এই খাল ও নদীকে বিস্তীর্ণ প্ল্যানের আওতায় এনে কাজ করতে হবে।
ফরিদপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র মনিরুল হক মনির বলেন, কুমার নদে বর্জ্য না ফেলার জন্য ব্যবসায়ীদের বারবার সতর্ক করা হলেও কাজ হয়নি। রাতে পরিষ্কার করে দেই সকালে আবার ময়লা ভরে ওঠে। আর বিকল্প না থাকায় ড্রেনের মুখগুলো নদ থেকে অন্যস্থানে সরানো যায়নি। বর্জ্য সমস্যা নিরসনে নদের পাড়েই ডাস্টবিন স্থাপন করে বর্জ্য অপসারণ করতে বলা হয়।
ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থপ্রতিম সাহা বলেন, টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমিয়ে ভূউপরিভাগস্থ পানির ব্যবহার বাড়াতে হবে। কারণ সুপেয় পানি প্রাপ্তির ওপরে নির্ভর করছে আমাদের পরিবেশ-প্রতিবেশের নিশ্চয়তা। অন্যথায় আমরা সংকটে ভুগবো।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে আরও বক্তব্য দেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) রামানন্দ পাল, মধুখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামনুন রশীদ অনিক, সদরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোরাদ হোসেন প্রমুখ।