মুক্ত সাংবাদিকতা চরম সঙ্কটে : রুহুল আমিন গাজী
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি রুহুল আমিন গাজী বলেছেন, মুক্ত পরিবেশ ছাড়া মুক্ত সাংবাদিকতা করা যায় না। দেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন নেই বলেই সাংবাদিকরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। আজ শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) দুপুরে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবের সভাকক্ষে সাংবাদিক ইউনিয়ন ময়মনসিংহের (জেইউএম) সভাপতি আইয়ুব আলীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলামের সঞ্চালনায় ইউনিয়নের বার্ষিক সাধারণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল আমীন গাজী বলেন, সাংবাদিক হত্যার কোনো বিচার হচ্ছে না। ১০৮ বার সাগর-রুনি হত্যার তদন্ত প্রতিবেদন পিছিয়েছে। চার শতাধিক গণমাধ্যম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বর্তমান সরকারের আমলে গণমাধ্যম সূচকে বাংলাদেশ ৪২ ধাপ পিছিয়েছে। সম্পাদক মাহফুজ আনাম-মতিউর রহমান থেকে শুরু করে কেউ রেহাই পাচ্ছে না সরকারি নিপীড়ন থেকে। আজ যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে—শুধু সাংবাদিক নয়, গণতন্ত্রকামী সব মানুষকে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার বিকল্প নেই।
সাংবাদিক নির্যাতনের ভয়াবহতা তুলে ধরে রুহুল আমিন গাজী বলেন, স্মরণকালের ইতিহাসে মিডিয়া এবং মিডিয়া কর্মীদের এমন দুর্দিন আর কখনও দেখা যায়নি। তিনি বলেন, সত্য প্রকাশ করতে কিংবা পেশাগত দায়িত্বপালন করতে গিয়ে হামলা-মামলা ও নিষ্ঠুর নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বহু সাংবাদিক। কখনও কখনও প্রাণ পর্যন্ত দিতে হচ্ছে। এ ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির শিকার হয়ে খোদ রাজধানীতে বহুল আলোচিত সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি, একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক আফতাব আহমেদ, সাংবাদিক দম্পতি ফরহাদ খাঁ-রহিমা বেগম, আবুল হাসান আসিফ, ফতেহ ওসমানি, শফিকুল ইসলাম টুটুল, মাহমুদ হাসান তারেক, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের সাংবাদিক আবদুল হাকিম,পাবনায় ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় সাংবাদিক সুবর্ণা আক্তার নদী, কুমিল্লায় আবুল কালাম আজাদ, নারায়নঞ্জে ইলিয়াস হোসেন, চুয়াডাঙ্গায় আবু সায়েম, সিলেটে রুহেল আহমেদ তালুকদার, নোয়াখালীতে বুরহান উদ্দিন মুজাক্কিরসহ বহু সাংবাদিক জীবন দিয়েছেন। কিন্তু, দেশে সাংবাদিক হত্যার বিচার হয় না। সাংবাদিক নির্যাতন-নিপীড়নের কোনো বিচার হয় না। ৬০ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হলো অথচ কোনো সাংবাদিক হত্যা ও নির্যাতনের বিচার হওয়ার দৃষ্টান্ত নেই। সাংবাদিকতা খুব ঝুঁকিপূর্ণ পেশা এটা ঠিক আছে। কিন্তু খুন হয়ে যাবে, নির্যাতিত হবে, বিচার হবে না, এটা কোনো স্বাভাবিক পরিবেশ নয়।
সাংবাদিকদের এ নেতা বলেন, মালিকদের লিপ্সার কারণে সেলফ সেন্সরশিপের সংস্কৃতিতে মিডিয়াকর্মীরা অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এর ফলে সরকারের বিধিনিষেধের চাইতেও মালিকদের দলদাস প্রবণতা গণমাধ্যমের চরিত্র নষ্ট করে ফেলছে। সম্পাদকেরা প্রধানমন্ত্রীর প্রেস কনফারেন্সে গিয়ে প্রশ্ন না করে তৈল মর্দনে ব্যস্ত থাকেন। প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রীর প্রেস কনফারেন্স এখন সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। তিনি আরও বলেন,ব্যক্তি, গোষ্ঠী, কিংবা সরকারের স্বার্থ সংরক্ষণের দায়িত্ব সংবাদমাধ্যমের নয়, সংবাদমাধ্যমের দায়িত্ব রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রের নাগরিক স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য কাজ করা।
জেইউএমের এজিএমে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী। আলোচনায় অংশ নেন বিএফইউজের সাংগঠনিক সম্পাদক এরফানুল হক নাহিদ, আবু বকর, ম. হামিদুল হক মানিক, আমান উল্লাহ আকন্দ জাহাঙ্গীর।