ফরিদপুরে অজ্ঞান করে চলছে চুরি, হাসপাতালে ভর্তি ১৯
ফরিদপুরে খাবারের মসলা বা লবণের সাথে চেতনানাশক ওষুধ মিশিয়ে বাড়ির সকলকে অজ্ঞান করে একাধিক চুরির ঘটনা ঘটেছে। শহরের শোভারামপুর ও ডোমরাকান্দিতে গত কয়েকদিনে তিনটি বাড়িতে এমন ঘটনার খবর জানা গেছে। এ ঘটনায় অসুস্থ প্রায় ২০ জনকে শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ডাকাতির অভিযোগও পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, শহরের উপকণ্ঠে ডোমরাকান্দিতে পরপর তিন রাতে তিনটি বাড়িতে দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনা ঘটেছে। ওই এলাকার মৃত নেছারউদ্দিনের ছেলে মো. আবুল মন্ডল (৪৫) জানান, গত বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে তার বাড়ির সদস্যরা সকালের খাবার খাওয়ার মিনিট দশেক পরে অসুস্থ হয়ে যান। এরপর তাকে সহ তার স্ত্রী শিরিনা বেগম (৩৫), ছেলে সিয়াম (১৬) ও মেয়ে সিনহাকে (১২) ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
আবুল মন্ডল বলেন, সকালে বাড়ির পাশে ধান ক্ষেতে গেলে সেখানে মাথা ঘুরে ঢুলে পড়ে যাচ্ছিলাম। এতে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য বাড়ি এসে দেখি আমার স্ত্রী, ছেলে মেয়ে সবাই অসুস্থ হয়ে পড়ে আছে। এরপর অশেপাশের লোক ডাক দিলে তারা আমাদের হাসপাতালে নিয়ে যায়। একরাত হাসপাতালে ভর্তি থেকে শুক্রবার বিকেলে বাড়িতে ফিরে আসি।
শিরিনা বেগম (৪০) জানান, সকালে রান্না করতে গিয়ে দেখেন লবণের মধ্যে হলুদের মতো রঙ লেগে আছে। আর কেমন যেন পাউডারের মতো মেশানো। তবে বিষয়টি তেমন গুরুত্ব দেইনি। ভেবেছিলাম বাচ্চারা লবণ দিয়ে আম মাখিয়ে খেয়েছে কিংবা আটা মাখিয়েছে হয়তো।
আবুল মন্ডল বলেন, গত বছরও এসময় আমার গরু চুরি হয়েছিল। মনে হচ্ছে এবারও তারা আমার তিনটি গরু চুরির চেষ্টা করেছিল। তবে আমরা অসুস্থ হয়ে যাওয়ার পরে আত্মীয় স্বজনেরা বাড়িতে এসে পড়ায় তারা সফল হতে পারেনি। এ ঘটনায় আবুল মন্ডল কোতোয়ালি থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন।
এদিকে, এর পরের রাতে ওই গ্রামের ওমর আলী (৪৭) নামে এক চা দোকানির বাড়িতে লুট হয়। ওমর আলী বলেন, একদল ডাকাত বাড়ির সবাইকে জিম্মি করে মারপিটের পর নগদ টাকা ও সোনার গহনা নিয়ে নিয়ে যায়। দুজন ডাকাত প্রথমে এসে দরজা ভাঙ্গার চেষ্টা চালালে তাদের সাথে আমার ধস্তাধস্তিও হয়। তাদের দলে ১০ জনের মতো ছিল। সবাই লম্বা গড়নের, কমলা রঙের গেঞ্জি ও হাফ প্যান্ট পড়া ছিল। চারজন ছিল মুখোশ পড়া।
এছাড়া দুদিন আগে ওই গ্রামে সাজেদা বেগম (৫০) নামে এক নারীর বাড়িতে হানা দেয় দুর্বৃত্তরা। তারা জানালার গ্রিল কেটে ঘরে ঢুকে সাজেদার হাত-পা বেঁধে রেখে টাকা পয়সা ও সোনার চেইন নিয়ে যায়। এ ঘটনার পর সাজেদা বেগম অসুস্থ হয়ে পড়েন। কাউকে দেখলে ডাকাত ডাকাত বলে চিৎকার করে উঠছেন বলে জানান তার বোন লাইলী বেগম।
এদিকে শহরের শোভারামপুরে শুক্রবার সকালে বাড়ির রান্না খাবার খেয়ে দুটি পরিবারের ১৫ জন সদস্য অসুস্থ হয়ে যান। তাদের ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে একটি পরিবারের বাড়িতে রাতে দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনায় প্রায় ছয় সাত ভরি স্বর্ণ ও নগদ লাখ টাকা খোয়া গেছে।
ওই গ্রামের হৃদয় কুমার শীল (২২) জানান, শুক্রবার সকালে তার কাকা সুকুমার শীলের (৭০) বাড়িতে রান্না করা খাবার খেয়ে পরিবারের ৫ সদস্য অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শনিবার দুপুরে তারা হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে বাড়ি ফিরেন। তবে তার আগে শুক্রবার রাতে সুকুমার শীলের বাড়িতে নগদ টাকা ও মালামাল চুরি হয়ে যায়।
হৃদয় জানান, শুক্রবার রাতে তার কাকা সুকুমার সহ পাশের উত্তম শীল (৪৫) ও কার্তিক শীলের (৫৪) বাড়ির রান্না ঘরে হলুদের সাথে কিছু মিশিয়ে রেখেছিল চোরেরা। তবে অন্য দুই বাড়ির লোকেরা উপোস থাকায় তাদের বাড়িতে রান্না হয়নি। এছাড়া শোভারামপুর মহল্লার নিরোদ মন্ডল (৫২) নামে আরও এক ব্যক্তির বাড়িতে এভাবে খাবারের উপকরণের সাথে চেতনানাশক ওষুধ মিশিয়ে রাখা হয়। এরপর রান্না করা খাবার খেয়ে শুক্রবার সকালে নিরোদ মন্ডলের বাড়ির প্রায় ১০ জন সদস্য অসুস্থ হয়ে পড়েন। তবে রাতে তাদের বাড়িতে আত্মীয় স্বজন ও লোকজন থাকায় কোন অঘটনের খবর পাওয়া যায়নি।
এবিষয়ে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাসানুজ্জামান বলেন, এমন একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে অন্য ঘটনাগুলোর ব্যাপারে কেউ কোন অভিযোগ জানায়নি থানায়।