মৃত্যুকূপ থেকে ফিরে এসেছি : এমভি আবদুল্লাহর চিফ ইঞ্জিনিয়ার
বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহর চিফ ইঞ্জিনিয়ার নওগাঁর এ এস এম সাইদুজ্জামান ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাত থেকে মুক্তি পেয়ে নিজ বাড়িতে ফিরেছেন। নওগাঁ জেলা শহরের পলিটেকনিক এভিনিউয়ে দুবলহাটিতে পৌঁছে তিনি বলেন, ‘মৃত্যুকূপ থেকে ফিরে এসেছি।’
সাইদুজ্জামান নওগাঁর স্থানীয় একটি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল কাইয়ুমের ছেলে। আজ বুধবার (১৫ মে) দুপুরের দিকে রাজশাহী বিমানবন্দরে সাইদুজ্জামান পৌঁছালে তাকে ফুল দিয়ে বরণ করে পরিবারের সদস্যরা।
বিকেলে সাইদুজ্জামানের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার মেয়েকে কোলে নিয়ে আদর করছেন। স্ত্রী মানহা তাহরিন শতধার চোখে-মুখে হাসির ঝলক। অবাক চোখে তাকিয়ে রইলেন। শিশু সন্তানটিও যেন কোল থেকে নামছেই না। সব মিলে পরিবারে বইছে আনন্দের জোয়ার। চলছে নানা আয়োজন। তাকে দেখতে ভিড় করছেন আত্মীয়-স্বজন ও এলাকাবাসী।
কেমন গেল ৬৩ দিন জানতে চাইলে সাইদুজ্জামান বলেন, মৃত্যুকূপ থেকে ফিরে এসেছি, কৃতজ্ঞতা সৃষ্টিকর্তাসহ সবার প্রতি। কোন নিশ্চয়তা ছিল না পরিবারের কাছে ফিরতে পারব কি না। জীবনের ওই কটা দিন স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এখন অনেক ভালো লাগছে। ভেবেছিলাম হয়ত আর কোনদিন কারও সঙ্গে দেখা হবে না। আল্লাহর রহমতে বাবা মায়ের দোয়ায় সুস্থভাবে ফিরে এসেছি। আমাদের উদ্ধারে যারা এগিয়ে এসেছেন তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।
ওই ইঞ্জিনিয়ার বলেন, আমরা নির্বাধারিত রুট দিয়েই জাহাজ নিয়ে যাচ্ছিলাম। সেভ জোনে ছিলাম। রেড জোনের মধ্যে আমরা ছিলাম না বা অতিক্রম করিনি। প্রথমে জলদস্যুদের ছোট নৌকা দেখে মনে হয়েছিল তারা হয়ত মাছ ধরার নৌকা ব্যবহার করছে। পরে তো আমাদের ঘিরে ফেলল তারা। তারা সামান্য ধাক্কাধাক্কি করেছে আমাদের সঙ্গে। এর বেশি কিছু হয়নি। রোজার সময় খাবার ছিল জাহাজে পর্যাপ্ত। না থাকলেও খাবার নিয়ে তেমন সমস্যা হয়নি। তবে আমরা বেঁচে ফিরব কি না সেটা নিয়েই মানসিকভাবে চিন্তায় ছিলাম। জীবনে এমন কঠিন পরিস্থিতি আসবে তা কখনও ভাবতে পারিনি। দুর্বিষহ দিন কেটেছে। কখনও ভালো, আবার কখনও খারাপ। সব সময় আতঙ্কের মধ্যে দিয়ে দিন পার করতে হয়েছে। এরকম দিন যেন কারও জীবনে না আসে। তাপরও সুস্থভাবে বাড়ি ফিরতে পেরেছি, অনেক ভালো লাগছে। প্রধানমন্ত্রী, জাহাজ কোম্পানি, মিডিয়াসহ সবার প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা।
সাইদুজ্জামানের মা কোহিনূর বেগম বলেন, আমার কলিজার টুকরা সন্তান আমাদের কাছে ফিরে এসেছে। এর চেয়ে আনন্দের আর কিছু হতে পারেনা। ছেলেকে কাছে পেয়ে কি যে ভালো লাগছে তা বোঝাতে পারব না। নামাজ পরেছি আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করেছি। ছেলের পছন্দের বিভিন্ন খাবার রান্না করছি।
সাইদুজ্জামানের স্ত্রী মানহা তাহরিন শতধা বলেন, স্বামীকে ফিরে পেয়ে আমি খুবই আনন্দিত। এতগুলোদিন আমাদের জীবনে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। সুস্থভাবে বাড়িতে আসায় সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, জাহাজ কোম্পানিসহ দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন।
মোজাম্বিক মাতুপু বন্দর থেকে ৫৬ হাজার টন কয়লা নিয়ে দুবাই যাওয়ার পথে গত ১২ মার্চ সোমালিয়ার জলদস্যুরা ২৩ বাংলাদেশি নাবিকসহ এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটি জিম্মি করেছিল। গত ১৪ এপ্রিল ভোরে জাহাজটি জলদস্যুমুক্ত হয়। এ সময় ৬৫ জন জলদস্যু জাহাজটি থেকে বোটে নেমে যায়। এরপর গত ২২ এপ্রিল বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে জাহাজটি দুবাইয়ের আল হামরিয়া বন্দরে ভিড়েছিল। কয়লা খালাস শেষে ২৭ এপ্রিল স্থানীয় সময় বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে নতুন ট্রিপের পণ্য লোড করতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের মিনা সাকার বন্দরে যায় জাহাজটি। সেখান থেকে চুনাপাথর নিয়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা দেয় এমভি আবদুল্লাহ। সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্তির ঠিক এক মাস পর বাংলাদেশে পৌঁছায় এস আর শিপিংয়ের মালিকানাধীন জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ।