কথা রাখেননি মোতালেব, পেটে এবারও কলম, ধারালো সুচ!
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2024/06/06/sirajgonj_photo_tham.jpg)
সিরাজগঞ্জের সেই মোতালেব কথা রাখেননি। পেট থেকে এবারও বের করা হলো তাঁতের কাজে ব্যবহৃত তিনটি লোহার লম্বা সুচ, একটি লম্বা বাঁশের কাঠি, একটি প্লাস্টিকের বেল্ট ও একটি কলম। ৩ জুন সোমবার ও ৪ জুন মঙ্গলবার দুই দফায় এন্ডোস্কপিক সার্জারির মাধ্যমে তাঁর পেট থেকে বের করা হয় এসব।
গত বছর এই মোতালেবের পেট থেকে দুই দফা এন্ডোস্কপিক সার্জারির মাধ্যমে বের করা হয়েছিল ২৩টি কলম। তখন তিনি অঙ্গীকার করেছিলেন আর কখনও কলম খাবেন না।
এবারও তো কলম খেয়েছেনই, সেইসঙ্গে খেয়েছেন তাঁতের কাজে ব্যবহৃত তিনটি লোহার লম্বা সুচ, একটি লম্বা বাঁশের কাঠি, একটি প্লাস্টিকের বেল্টও। এত ধারালো বস্তু কীভাবে গিলেছেন মোতালেব! তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছে চিকিৎসক।
চিকিৎসকের মতে পিকা সিনড্রোম নামে মানসিক রোগে আক্রান্ত মোতালেব। যে কারণে তিনি রাস্তায় কুড়িয়ে পাওয়া কলম, লোহার সুচসহ যা পাচ্ছেন গিলে খাচ্ছেন। তাঁকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসা শেষ হলে স্বাভাবিক জীবনের ফিরে আসবেন মোতালেব।
সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার দৌলতপুর মহল্লার মৃত আব্দুর রহিমের ছেলে আব্দুল মোতালেব। গত বছরের (২০২৩) মে মাসে পেটের তীব্র ব্যথা নিয়ে সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকরা এন্ডোস্কপি করে পেটের ভেতরে বেশ কয়েকটি কলম শনাক্ত করেন।
পরে মেডিকেল কলেজের আন্তরিক প্রচেষ্টায় দুই দফা এন্ডোস্কপিক সার্জারির মাধ্যমে পেটের ভেতর থেকে একে একে বের করা হয় ২৩টি কলম। যা ছিল রীতিমতো বিস্ময়কর। তখন আর কলম খাবেন না বলে অঙ্গীকার করেছিলেন। তবে সেই প্রতিশ্রুতি রাখেননি বিরল মানষিক রোগে আক্রান্ত মোতালেব। তবে এবার তাঁর অবস্থা ছিল আরও ভয়াবহ।
এক বছরের ব্যবধানে চলতি বছরের মে মাসের ১৩ তারিখে আবারও পেটের তীব্র ব্যথা শুরু হয় মোতালেবের। মা লায়লি খাতুন আবারও তাঁকে নিয়ে আসেন মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। চিকিৎসকের পরামর্শে আবারও তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে চিকিৎসক বুঝতে পারেন আবার মোতালেব কলম খেয়েছেন। কিন্তু এবার কলম ছাড়াও আরও ধারালো বস্তুর খোঁজ পাওয়া যায় তাঁর পেটে।
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2024/06/06/sirajgonj_photo_inset.jpg 687w)
বেলকুচি উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে মোতালেব হোসেন (৩৬)। তিনি ২০০০ সালে এসএসসি পাস করে কলেজে ভর্তি হন। এরপর থেকেই তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। ২০১৮ সাল থেকে তিনি বিভিন্ন স্থান থেকে কুড়িয়ে পাওয়া কলম খেতে শুরু করেন।
শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কনসালটেন্ট এবং এন্ডোস্কপিক সার্জন ডা. মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান বলেন, মোতালেব পিকা সিনড্রোম নামে মানসিক রোগে আক্রান্ত। এটি একটি ব্যতিক্রমী রোগ। যে কারণে তিনি কলম কুড়িয়ে খাচ্ছেন। এবারও কলম তো খেয়েছেনই সঙ্গে খেয়েছেন তিনটি লোহার লম্বা সুচ, একটি লম্বা বাঁশের কাঠি, একটি প্লাস্টিকের বেল্টও। এত ধারালো বস্তু কীভাবে গিলেছেন তা চিন্তা করাও কঠিন। তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসা শেষ হলে স্বাভাবিক জীবনের ফিরে আসবেন তিনি।
মোতালেবের মা লাইলী খাতুন বলেন, ‘সব সময় তো ওর সঙ্গে থাকা হয় না। আবারও কলম খায় এটি জানতাম না। চুপি চুপি হয়তো খেত। গত মাসে হঠাৎ করে আবারও পেটের ব্যথা শুরু হয়। নিয়ে আসি হাসপাতালে। ডাক্তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বলেন আবারও কলম খেয়েছে মোতালেব। ওর বাবা নেই। আমাকেই সংসার চালাতে হয়। ওর চিকিৎসা করার মতো সামর্থ্য আমার নেই। সরকারি সহায়তা পেলে ছেলের চিকিৎসা করাতে পারতাম।’