নেত্রকোনায় জঙ্গি আস্তানায় দুই দিনব্যাপী অভিযান শেষ
নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলায় জঙ্গি আস্তানায় দুই দিনব্যাপী অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করেছে পুলিশ। অভিযানে বিপুল জঙ্গি প্রশিক্ষণ সামগ্রী উদ্ধার করা হয় বলে জানানো হয়েছে । গত শুক্রবার রাত থেকে পুলিশ জঙ্গি আস্তানা ও প্রশিক্ষণকেন্দ্র সন্দেহে বাড়িটি ঘিরে রাখে।
আজ রোববার (৯ জুন) সকালে ঢাকা থেকে আসা অ্যান্টিটেরোরিজম ও বোম ডিস্পোজাল সোয়াট ইউনিট এবং পুলিশ সদস্যরা উদ্ধার অভিযান ও তল্লাশি শুরু করেন। তবে গতকাল শনিবার দুপুরে প্রাথমিক তল্লাশি চালিয়ে একটি ভারতীয় পিস্তল, ১৭ রাউন্ড গুলি এবং একটি ডামি এ কে ৪৭ রাইফেলসহ জিহাদি বই উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ছাড়া জেলা শহরের বনুয়াপাড়া নেওয়াজ নগরে তানভির কটেজ নামে আরও একটি বাড়িতে জঙ্গি সদস্য আছে সন্দেহ করে তল্লাশি চালায় পুলিশ। গতকাল রাত ১০টা থেকে বাড়িটি ঘেরাও করে রেখেছে পুলিশ। পুলিশের ধারণা ওই বাড়িতে জঙ্গি সদস্য রয়েছে। তাই বিশেষ নজরদারিতে আছে ওই বাড়িটিও।
আজ সন্ধ্যায় উদ্ধার অভিযান শেষে ময়মনসিংহ রেঞ্জ ডিআইজি শাহ মো. আবিদ হোসেন অভিযানের বর্ণনা দিয়ে সাংবাদিকদের জানান, ছয়টি ইলেকট্রিক বোমা নিষ্ক্রিয় করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। উদ্ধার করা আলামতের মধ্যে রয়েছে জঙ্গি প্রশিক্ষণে ব্যবহৃত ল্যাপটপ, খেলনা বন্ধুক, হ্যান্ডকাফ, ওয়াকিটকি, রামদা, প্লাস্টিকের খেলনা রাইফেল, বিভিন্ন ধরনের পোশাক, দূরবীণ, জিহাদি বইসহ প্রায় ৮০ ধরনের সরঞ্জামন উদ্ধার করা হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সন্ত্রাসবাদ বিরোধী ইউনিটের প্রধান পুলিশ সুপার সানোয়ার হোসেন। নেত্রকোনা পুলিশ সুপার ফয়েজ আহমেদ প্রমুখ।
এলাকাবাসী জানায়, সদর উপজেলার ভাসাপাড়া গ্রামে নির্জন স্থানে আটপাড়া উপজেলা নোয়াপাড়া গ্রামে প্রায় ২০ বছর আগে দ্বিতল বাড়িটি নির্মাণ করা হয়। বাড়ির সামনে বড় দুটি পুকুর রয়েছে। দুই বছর আগে বাড়িটি আরিফ নামে এক ব্যক্তির কাছে ভাড়া দেওয়া হয়। ওই বাড়িতে জঙ্গি প্রশিক্ষণ চলত বলে পুলিশ খবর পায়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে নেত্রকোনা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালামের নেতৃত্বে একদল পুলিশ বাড়িটি ঘেরাও করে। জঙ্গি আস্তানার খবরে ভাসাপাড়া ও আশপাশের গ্রামের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
এলাকাবাসী আরও জানায়, ভাড়া দেওয়ার পর থেকে ভাড়াটিয়ারা বাড়ির সীমানা প্রাচীর আরও উঁচু করে। এরপর নারকেলগাছ, আমগাছ ধরে সীমানাপ্রাচীরে প্রায় ২০টির মতো সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়। বাড়িতে স্থানীয় কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয় না। ওই বাড়িতে থাকা মানুষজন এলাকার মানুষের সঙ্গে বন্ধু সুলভ আচরণ করত। কখনও কারো সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করত না। সব সময় বিনয়ের সঙ্গে কথা বলত।
পুলিশ জানায় আজ সকাল ৮টা থেকে ওই বাড়িতে অ্যান্টিটেরোরিজম ইউনিটের সদস্য ও জেলা তল্লাশি অভিযান শুরু করে। দিনভর অভিযান চালানোর পর বিকেল সাড়ে ৫টায় অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। তবে এ ঘটনায় কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।
পুলিশ সুপার মো. ফয়েজ আহমদ বলেন, অ্যান্টিটেরোরিজম ইউনিটের সদস্যরা গতকাল রাতেই নেত্রকোনায় পৌঁছেন। সকাল থেকে বাড়িটিতে তল্লাশি অভিযান শুরু করেন।