জুলাই হত্যাকাণ্ডের পাল্টা বিচার চাইলেন শেখ হাসিনা
সহিংস প্রতিবাদের ফলে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত মাসে দেশজুড়ে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। আন্দোলনের মুখে ক্ষমতা হারনোর পর এবারই প্রথম সরব হলেন তিনি। খবর আলজাজিরার।
শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে বাংলাদেশের সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে শুরু হওয়া আন্দোলন ঘটনার ধারাবাহিকতায় একপর্যায়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারকে উৎখাতের আন্দোলনে পরিণত হয়। দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়া সহিংসতায় মারা যায় তিন শতাধিক মানুষ।
গতকাল মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) শেখ হাসিনার এই লিখিত বিবৃতিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে প্রকাশ করেন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ চলার সময় গুলিতে একজন মুদি দোকানদার নিহতের ঘটনায় শেখ হাসিনার ভূমিকা নিয়ে আদালতের নির্দেশে তদন্তের বিষয়টি প্রকাশ হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এই বিবৃতি প্রকাশ হলো।
বিবৃতিতে ৭৬ বছর বয়সী শেখ হাসিনা বলেন, জুলাই মাসে ‘বিপ্লবের নামে’ অনেক মানুষের প্রাণহানি হয়। তিনি বলেন, ‘এসব হত্যাকাণ্ড ও ধ্বংসযজ্ঞের ঘটনায় যারা জড়িত তাদের বিষয়ে যথাযথ তদন্তের দাবি জানাচ্ছি আমি এবং সে অনুযায়ী অপরাধীদের চিহ্নিত করে যেন শাস্তি দেওয়া হয়।’
ক্ষমতাচ্যুত এই নেত্রী তার সমর্থকদের আগামী বৃহস্পতিবার তার বাবার মৃত্যুবার্ষিকী পালন উপলক্ষে রাজধানী ঢাকায় জনসমাগম করার জন্যও আহ্বান জানান। বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘আগামী ১৫ আগস্ট যথাযোগ্য মর্যাদায় ভাবগাম্ভীর্য বজায় রেখে জাতীয় শোক দিবস পালনের আবেদন জানাচ্ছি।’
১৯৭৫ সালে এক সামরিক অভ্যুত্থানে আততায়ীর হাতে নিহত শেখ হাসিনার বাবা শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবিার্ষিকী আগামী বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট)। তার নেতৃত্বাধীন সরকার রাষ্ট্র ক্ষমতায় এসে ওই দিনটিকে জাতীয় ছুটি হিসেবে ঘোষণা করেছিল।
শেখ হাসিনা রাজধানী ঢাকায় তার শৈশবের স্মৃতি বিজরিত স্থান ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা ও দোয়ার মাধ্যমে নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় তার সমর্থকদের প্রতি আহ্বান জানান। এই বাড়িটি তার বাবার স্মরণে জাদুঘরে রূপান্তর করা হয়েছিল। কিন্তু এ মাসের শুরুর দিকে বিক্ষুব্ধ জনতা ওই বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে ও আগুন ধরিয়ে দেয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর রাজনৈতিক কারণে ঘোষণা করা এদিনের ছুটিও গতকাল বাতিল করেছে।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা হত্যা মামলাটি শুনানি শেষে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন মেজিস্ট্রেট আদালতে গ্রহণ করা হয়েছে এবং পুলিশকে ঘটনার তদন্ত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই মামলায় আরও ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং কয়েকজন পদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, মুদি দোকানদার আবু সাঈদ রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বিক্ষোভ চলার সময় রাস্তা পারাপার হতে গিয়ে গত ১৯ জুলাই পুলিশের গুলিতে নিহত হন। অভিযোগে শেখ হাসিনাকে দোষারোপ করে বলা হয়, তিনি সংঘাত দমনে পুলিশকে কঠোর হতে ও গুলি করতে বলেছিলেন। আমির হামজা আবু সাঈদের আত্মীয় না হলেও আদালতে এই মামলা উত্থাপন করেন, কেননা সাঈদের পরিবারের মামলা চালানোর সঙ্গতি নেই।
এ বিষয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে আমির হামজা বলেন, ‘একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে বিবেকের তাড়নায় আমি শেখ হাসিনার অপরাধের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে এই মামলা করেছি। আমি মামলার শেষ পর্যন্ত দেখব।’
শেখ হাসিনার সরকারে থাকা আরও কিছু লোকের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এদের মধ্যে আছেন সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও তার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। গতকাল পুলিশ জানিয়েছে, দুজন লোকের হত্যাকাণ্ডে প্ররোচণার দায়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা ও ছাত্রনেতা নাহিদ ইসলাম সম্প্রতি বলেছেন, শেখ হাসিনাকে তার শাসনের সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের জন্য অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।
অন্যদিকে শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্বাচন আয়োজন করার সিদ্ধান্ত নিলে তার মা দেশে ফিরে আসবেন।