শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বদলে যাওয়ার গল্প
আজ বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট)। ঘড়ির কাটায় তখন দুপুর দেড়টা। শ্রীলঙ্কার একটি এয়ারলাইন্সে তৃতীয়বারের মতো দেশের মাটিতে পা রাখেন সোহাগ মিয়া। তিনি রেমিট্যান্স যোদ্ধা। কুমিল্লায় পরিবারের সদস্যদের রেখে দীর্ঘ ৯ বছর ধরে থাকেন কাতারে। সেখান থেকেই দেশ ফিরলেন আজ। তার সঙ্গে কথা হয় এনটিভি অনলাইনের। এই প্রতিবেদককে তিনি জানান প্রবাসজীবনের সুখ-দুঃখের গল্প। সেই গল্পে দেশের জন্য যেমন আক্ষেপ ছিল, তেমনই ছিল আশার বাণী।
সোহাগের মতো আরও অনেক রেমিট্যান্স যোদ্ধা এদিন ফিরেছেন দেশে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে, বহুদিনের আবেগ আজ অশ্রু হয়ে ঝরছে। সোহাগ মিয়া বলেন, আমরা অনেক কষ্ট করে দেশে টাকা পাঠাই, সেই টাকা দিয়ে যেমন আমার পরিবার চলে, তেমনই চলে আমার দেশও। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এর আগে দেশের বিমানবন্দরে পা রাখতেই মন খারাপ হয়ে যেত। বিমান থেকে নামার পর থেকে নানা হয়রানির শিকার হতে হতো। চেক করার নামে হয়রানি, ব্যাগেজ-লাগেজের হয়রানি, ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হতো। এরপর বাড়িতে যাওয়ার সময় শেষ হয়রানির শিকার হতে হতো গাড়ির সিন্ডিকেটের। এয়ারপোর্টের কর্মকর্তাদের ব্যবহারে মনে হতো নিজ দেশে যেন আমি আসামি। তবে, এবার চিত্রছিল ভিন্ন। দেড়টার দিকে প্লেন থেকে নামার ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যেই পেয়ে গেলাম মালামাল। ফ্রি ওয়াইফাই, টেলিফোন করার ব্যবস্থাও আছে। আমার বড় ভাই আসছেন, আমাকে নিতে। তাকে ফ্রি ওয়াইফাই ব্যবহার করে কল করেছি। সব দেখে বোঝাই যাচ্ছে, নতুন এক বাংলাদেশে এসেছি।
ঘড়িতে কাটা ঘুরছে। সময় গড়িয়ে এখন দুটো বাজে। বুসরা আরফিন আছেন তার বাবার অপেক্ষায়। সঙ্গে তার বোন তাসফিয়াও। বুসরা অনার্স ফাস্ট ইয়ারে আর তাসফিয়া দশম শ্রেণিতে পড়েন। চাচার সঙ্গে দাঁড়িয়ে বাবার জন্য অপেক্ষমান দুই বোনের সঙ্গেও কথা হয় এনটিভি অনলাইনের। বুসরা আরফিন বলেন, আমি এর আগেও বাবাকে নিতে কয়েকবার এসেছি। সে সময় বাইরে রোদে দাঁড়িয়ে থাকতে হতো। ডিসপ্লেতে দেখতাম, প্লেন পৌঁছে গেছে। অথচ বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করা যেত না, বরং ঘণ্টার পর ঘণ্টা দুঃশ্চিন্তা নিয়ে অপেক্ষায় থাকতে হতো। এবার বিমান থেকে নেমেই বাবা কল করেছেন। শুনেছি, ভেতরে ফ্রি ওয়াইফাই চালু আছে।
বুসরার সঙ্গে যখন কথা হচ্ছিল, তখন তার রেমিট্যান্স যোদ্ধা বাবা ফয়সাল আরিফে আসেন। দুই মেয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরেছেন। সুখাশ্রু সিক্ত দুই মেয়ে আর বাবা। জানতে চাইলে বাবা ফয়সাল আরিফ বলেন, ১৭ বছর বিদেশে থাকি। মাঝেমধ্যে দেশে আসি। প্রতিবারই কোনো না কোনোভাবে হয়রানি হই। লগেজ হারিয়েছি একবার, মাল পেতে সময় লাগত ঘণ্টারপর ঘণ্টা। কিন্তু এবারই প্রথম কম সময় আর হয়নি ছাড়া বিমানবন্দরের বাইরে এলাম।
দুবাইয়ের আরেক রেমিট্যান্স যোদ্ধা শারমিন। বাড়ি ময়মনসিংহের ভালুকায়। প্রথম বারের মতই দেশে ফিরেছেন। তিনি বলেন, সবাই খুবই আন্তরিক ছিল। কোনো সমস্যা হয়নি। আমার ভাই এসেছেন আমাকে নিতে। তিনি এখান থেকে গাড়ি ঠিক করেছেন। গাড়ি ঠিক করতেও কোনো ঝামেলায় পড়তে হয়নি।
এর আগে কথা হয়েছিল স্বপ্ন মাহমুদের সঙ্গে। তিনি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করেন। দেশ-বিদেশে ঘুরতে ভালোবাসেন। থাই এয়ারে দেশে ফিরেছেন দুপুর সাড়ে ১২টায়। ১৫ মিনিটে হাতে পেয়েছেন জিনিস পত্র। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যবহারেও সন্তোষ প্রকাশ করেছেন তিনি।
পরে আরও যাদের সঙ্গে কথা হয়, সবাই জানান একই কথা। এ যেন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বদলে যাওয়ার গল্প। যে কথাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একজন তুলে ধরেছেন এভাবে—৫৩ বছরের বিমানবন্দরের জট ২০ দিনে উধাও। যাত্রী আসার আগেই লাগেজ আসছে কাউন্টারে। সৎ নেতৃত্ব, দেশপ্রেম থাকলে পরিবর্তন আসবেই। শাহাজান নামে একজন লিখেছেন এমন কথা। নেটিজেনরা সেখানে বাহবা দিয়েছেন নেতৃত্বের। প্রত্যাশা তাদের আরও অনেক। সেখানে আছে সমালোচনাও। তবে সব কিছু ভালো হবে বলেই মনে করেন অধিকাংশরা।
এ বিষয়ে সিভিল এভিয়েশনের বিমান বন্দরে সেবার মান বৃদ্ধি ও যাত্রীদের বিশেষ সুবিধা প্রাপ্তির বিষয়ে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মুহম্মদ আশরাফ আলী ফারুক এনটিভি অনলাইনকে জানান, বিমানবন্দরে একজন যাত্রী যেসব সুবিধা পাওয়ার কথা, সেটা দেওয়ার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক চেষ্টা রয়েছে। এখানে অনেকগুলো সংস্থা দায়িত্ব পালন করছে। তারা সবাই এখন নিজ-নিজ দায়িত্বগুলো সুচারুরূপে পালন করছে। তিনি বলেন, সামনের দিনে এ ধরনের সুবিধাগুলো আরও বাড়ানোর জন্য আমাদের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।