কেমন আছে খালেদা জিয়ার প্রতীকী সাজ নেওয়া শিক্ষার্থী তাহা ও তার পরিবার
মহান স্বাধীনতা দিবসে স্কুলের মেয়ে শিক্ষার্থীরা নারী জাগরণের অগ্রদূতদের তুলে ধরতে একেকজন বেগম রোকেয়া থেকে শুরু করে সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতীকী সাজে সজ্জিত হয়ে ডিসপ্লে করে। ডিসপ্লে করে দেশে যুগে যুগে নারীদের অবদান তুলে ধরা হয়। কেউ সাজে স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী, ডা. দীপু মনি, বীর মুক্তিযোদ্ধা তারামন বিবি, নারী ফুটবলার, ক্রিকেটারসহ বিশিষ্ট নারীর প্রতীকী সাজ। শিক্ষার্থী আননূর জাহান তাহা সাজে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রতীকী রূপে।
এ ঘটনায় তাহা, তার পরিবার, স্কুলকে হতে হয় বিড়ম্বনার শিকার। এমনকি ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষককে করা হয় শোকজ। ঘটনাটি ঘটে ২০২৩ সালের ২৬ মার্চ নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলায়।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রতীকী সাজ নেওয়া শিক্ষার্থী আননূর জাহান তাহা লোহাগড়া উপজেলার লক্ষ্মীপাশা দি লিটল সেইন্ট ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ছাত্রী। তার বাবা স্থানীয় লোহাগড়া পৌরসভার চতুর্থ শ্রেণির চাকুরে। এ ঘটনায় তাঁকেও চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আজগর আলী দি লিটল সেইন্ট ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের প্রধান শিক্ষককে শোকজ করেন। শোকজলিপিতে লেখা হয়, দি লিটল সেইন্ট ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ডিসপ্লেটি মহান স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এ নিয়ে জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হওয়ায় উপজেলা প্রশাসনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে। তাই প্রধান শিক্ষক মো. তসলিম উদ্দিনের কাছে খালেদা জিয়ার ডিসপ্লে প্রদর্শনের বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হয় এবং পাঁচ কর্ম দিবসের মধ্যে লিখিত বক্তব্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
স্থানীয় প্রশাসন ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হুমকির মুখে তাহাসহ তার পরিবারের লোকজনকে দীর্ঘদিন নিজের বসতবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র গিয়ে থাকতে হয়। সামাজিকভাবেও হেয় প্রতিপন্ন হতে হয়।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর চাকরি ফিরে পেলেও অর্থকষ্টে মানবেতর জীবনযাপন করাসহ স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেনি পরিবারটি।
এ বিষয়ে দি লিটল সেইন্ট ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. তসলিম উদ্দিন বলেন, ‘আমার প্রতিষ্ঠান থেকে নারী জাগরণের প্রতি একটি থিম তুলে ধরা হয়। এই থিমে বেগম রোকেয়ার চরিত্রসহসহ যুগে যুগে নারীদের অবদান তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে একজন শিক্ষার্থী বেগম খালেদা জিয়ার প্রতীকী রূপে সাজার কারণে আমার স্কুলকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে শোকজ করা হয় এবং উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান কামাল ভুইয়া শিক্ষকদের হুমকি দেন। তিনি এ ঘটনায় জড়িতদের বিচার দাবি করেন।
এ বিষয়ে শিক্ষার্থী তাহা বলে, ‘ডিসপ্লেতে খালেদা জিয়ার প্রতীকী রূপে সাজায় আমার বাবাকে পৌরসভার চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে দেয় পৌর কর্তৃপক্ষ। এ কারণে খুবই কষ্টের মধ্য দিয়ে জীবনযাপন করেছি। এ কাজগুলো যারা করেছে তাদের বিচার চাই এবং স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ ও কথা বলার অধিকার চাই।’
তাহার মা হালিমা আক্তার বলেন, ‘স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে আমার মেয়ে খালেদা জিয়া সাজার কারনে প্রশাসনিকভাবে, সামাজিকভাবে এবং রাজনৈতিকভাবে আমাদের জীবনে ঝড় বয়ে গেছে। আমার স্বামীকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে আর্থিকভাবে পঙ্গু করে দিয়েছে। এ ঘটনার পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে বিএনপির নেতাকর্মীরা এসেছিলেন। তারেক রহমান শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। স্বাধীন দেশে সব মানুষ যেন স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারে। কোন শিশু যেন এভাবে মানসিক ট্রমায় না পড়ে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে বেগম খালেদা জিয়া সাজা শিক্ষার্থী তাহার পরিবারের পাশে জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা ছিল এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বর্তমান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, মহান স্বাধীনতা দিবসের কুঁচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে নারী জাগরণের যাঁরা অগ্রদূত তাঁদের প্রতীকী রূপ নিয়ে একটি ডিসপ্লে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেখানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার প্রতীকী রূপ নিয়ে একটি ডিসপ্লে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তখন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় প্রতিষ্ঠানকে শোকজ করা হয়েছিল। প্রতিষ্ঠানপ্রধান সন্তোষজনক জবাব দেওয়ায় আর কোনো কিছু হয়নি।