আশুলিয়ায় সংঘর্ষ : শ্রমিক নিহত, গুলিবিদ্ধসহ আহত অর্ধশতাধিক
আশুলিয়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে মারা গেছে এক শ্রমিক। আহত হয়েছে পুলিশ সদস্যসহ অর্ধশতাধিক। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ শ্রমিকরা বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করেছে। এ ঘটনার পর থমথমে গোটা শিল্পাঞ্চল।
শ্রমিক মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শিল্প পুলিশ আশুলিয়া জোনের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারওয়ার আলম। তিনি জানিয়েছেন নিহত শ্রমিকের নাম কাওসার হোসেন খান (২৮)। কাওসার আশুলিয়ার টংগা বাড়ি এলাকার ম্যাংগো টেক্স নামে তৈরি পোশাক কারখানার সুইং অপারেটর হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ থানার ভাষানচর মধ্য রতনপুরে।
স্থানীয় হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, আহতদের মধ্যে রাসেল ও নয়ন নামে গুলিবিদ্ধ দুই শ্রমিক ভর্তি করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকালে সিরাজগঞ্জ-৫ (বেলকুচি-চৌহালী) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বেলকুচি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মোমিন মন্ডলের মালিকানাধীন মন্ডল গ্রুপের শ্রমিকদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মালিকপক্ষ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আলোচনা চলছিল। এর আগেই শ্রমিকরা কারখানার বাইরে অবস্থান নেন। এদের মধ্যে ছিল ন্যাচারাল ডেনিম, ন্যাচারাল ইন্ডিগো ও ম্যাংগো টেক্সের শ্রমিকরা। পরে অন্যান্য কারখানার শ্রমিকরাও সেখানে জড়ো হতে থাকেন। একপর্যায়ে শ্রমিকরা মন্ডল ফ্যাশন গার্মেন্টসে হামলা চালায়। এ সময় যৌথ বাহিনী সদস্যরা শ্রমিকদের বাধা দিলে তাদের দিকে ইটপাটকেল ছুড়তে শুরু করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা লাঠিচার্জ শুরু করেন। পরে শ্রমিকরা র্যাব ও পুলিশের কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করেন। শ্রমিকরা আরও উত্তেজিত হয়ে উঠলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে আইনশৃঙ্খললা বাহিনীর পক্ষ থেকে গুলি চলে। এ সময় বেশ কয়েকজন শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হন। শিল্প পুলিশ আশুলিয়া জোনের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারওয়ার আলমসহ আহত হন অর্ধশতাধিক। আহত কাওসার হোসেন খানকে হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ছাত্র-জনতার বিপ্লবে গত ৫ আগস্ট স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান। এরপর পোশাক শিল্প কারখানাকে অস্থির করে রাখার আঙুল ওঠে স্বৈর-সরকারের দিকে। চলে আলোচনা-সমালোচনা। যদিও কারখানার পরিবেশ স্বাভাবিক করতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
গতকাল রোববারও শ্রম সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, শ্রমিকদের ১৮ দফার মধ্যে একটি বিশেষ দফা ছিল তাদের রেশনের বিষয়। সেটা নিয়ে কাজ শুরু করেছি। আগামী ১ তারিখ (অক্টোবর) আশুলিয়ায় টিসিবির পণ্য শ্রমিকদের বিতরণের জন্য উদ্বোধন করব। টিসিবির আওতায় এক কোটি পরিবারের বাইরে অতিরিক্ত হিসেবে শ্রমঘন এলাকায় আমরা বাড়াব। ৪০ লাখ শ্রমিককে পর্যায়ক্রমে টিসিবির ন্যায্য মূল্যের পণ্য দেওয়া হবে।
আর শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার কথা উল্লেখ করেছেন বিভিন্ন সময়ে। শ্রমিকদের কাজে ফেরার আহ্বান জানিয়েছেন। একইসঙ্গে শ্রমিকদের কল্যাণের জন্য শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের কথা উল্লেখ করে বলেন, যে কোম্পানিগুলো এ তহবিলে অংশগ্রহণ করছেন না, তাদের কীভাবে এর আওতাভুক্ত করা যায় আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করব।
এরপর আজ হতাহতের ঘটনা ঘটল। এ ঘটনায় নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। এতে সড়কে কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। ভোগান্তির কবলে পড়েছে যাত্রীরা।