সাবেক স্বামী আপত্তিকর ছবি-ভিডিও ছড়ানোয় তরুণীর আত্মহত্যা
সাবেক স্বামী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আপত্তিকর ছবি ছড়ানোয় মিম আক্তার (২০) নামে এক গৃহবধূ আত্মহত্যা করেছেন। গতকাল সোমবার (৪ নভেম্বর) রাতে অভিমান করে বিষপানে আত্মহত্যা করেন তিনি।
কয়েক মাস ধরে মিমের আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়াচ্ছিলেন হেলাল উদ্দিন সরদার নামে (২৭) তাঁর সাবেক স্বামী।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, গতকাল রাতে মিম রাগে-অভিমানে বিষ পান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। এরপর তাঁকে উদ্ধার করে নওগাঁ সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ২টার দিকে মারা যান তিনি।
মিম আক্তার রাণীনগর উপজেলার মালশন গ্রামের আসাদুল প্রামানিকের মেয়ে। আর অভিযুক্ত হেলাল উদ্দিন সরদার একই এলাকার আঁকনা গ্রামের মকলেছুর রহমান সরদারের ছেলে।
পারিবার সূত্রে জানা যায়য়, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে মালয়েশিয়া প্রবাসী হেলাল উদ্দিনের সঙ্গে মিম আক্তারের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের সাত মাসের মাথায় পারিবারিক কলহের জেরে গত ৭ জুলাই দুজনের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায়। এরপর থেকেই হেলাল মিমে আক্তারের নামে একটি ফেসবুক আইডি খুলে সেখানে আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও পোস্ট করতে থাকেন। শুধু ফেসবুকেই নয় হোয়াটস অ্যাপসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমেও মিমের অন্তরঙ্গ ছবি ও ভিডিও পোস্ট করেন। মিমের হোয়াটস অ্যাপে এসব ছবি ও ভিডিও পাঠিয়ে উত্ত্যক্ত করেন। এরপর মিম তাঁর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি ভেঙে ফেলেন। ঘটনাটি পরিবার ও এলাকাবাসীর মধ্যে জানাজানি হলে অভিমান করে গতকাল রাত ৮টার দিকে বিষ পান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। পরে পরিবারের লোকজনসহ স্থানীয়রা তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ২টায় মারা যান।
মিমের বাবা আসাদুল প্রামানিক বলেন, আমার মেয়ের বিবাহ বিচ্ছেদ হওয়ার পর থেকেই হেলাল নানাভাবে বিরক্ত ও উত্ত্যক্ত করে আসছিল। তার নামে ফেসবুক আইডি খুলে নানা রকম ছবি ও ভিডিও পোস্ট করত। আমার মেয়েকে হোয়াটস অ্যাপে সেসব দিয়ে ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে বলত তোর জীবন শেষ করে দিব। এসব জানাজানি হলে আমার মেয়ে সবার অজান্তে ঘরে বিষ খায়। হাসপাতালে নিয়ে আসার পর মেয়েটা মারা যায়। এসব ছবি-ভিডিও ছড়িয়ে আমার মেয়েকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করা হয়েছে। হেলালসহ যারাই জড়িত থাক, তাদের সবার কঠিন শাস্তি চাই। আমরা থানায় মামলা করব।
এদিকে ঘটনার পর থেকেই গা-ঢাকা দিয়েছেন অভিযুক্ত হেলাল উদ্দিন সরদারের পরিবারের লোকজন। গ্রামের বাড়ি আঁকনাতে গিয়ে তাঁদের কাউকে পাওয়া যায়নি। অভিযুক্ত মালয়েশিয়া প্রবাসী হেলালের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।
নওগাঁ সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ফজলুল হক নয়ন বলেন, মিম বিষ পান করার বেশ কয়েক ঘণ্টা পর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। আমরা আমাদের সাধ্যমতো চিকিৎসা দিয়েছি। পরে রাজশাহী বা বগুড়া নিয়ে যাওয়ারও পরামর্শ দিয়েছিলাম। তবে এখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থান মারা যান।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে রাণীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তারিকুল ইসলাম বলেন, মালশন গ্রামে মিম আক্তার নামের একজন বিষপান করে। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আবস্থান মারা গেছে। যেতেতু নওগাঁ সদর হাসপাতালে মারা গেছে তাই সদর থানা পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করছে। পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা আমরা নেব।