আ.লীগের নির্যাতনে পঙ্গু যুবদলনেতা রাসেলের যন্ত্রণাময় জীবন
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2025/02/07/rasel_bnp.jpg)
২০০৯ সালের ১১ই মে। তখন শেখ হাসিনা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের ছয় মাসও হয়নি। ওইদিন ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার তৎকালীন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল হাসান রাসেলের মৎস্য খামারে হামলা চালায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা। হামলায় আহত হন রাসেল। সেই হামলায় পঙ্গু হয়ে দুর্বিসহভাবে কাটছে মো. রকিবুল হাসান খান রাসেলের জীবন। রাসেল বর্তমানে ভালুকা উপজেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক।
জানা গেছে, সেদিন হামলায় নেতৃত্ব দেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানিজিম আহম্মেদ সোহেল তাজের ফুফাতো ভাই ভালুকা উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য নজরুল ইসলাম খান বাবুল। তার সহযোগী ছিলেন উপজেলা যুবলীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল হক খানের নেতৃত্বে আশিক, ফরহাদ, পাভেল, মোমেনসহ ছাত্রলীগ ও শ্রমিক লীগের ১০ থেকে ১২ জন নেতাকর্মী। ওইদিন তারা রাসেলকে বেলা ১২টার দিকে মৎস্য খামার থেকে তুলে নিয়ে যায়। তাকে ধিপপুর ইউনিয়ন ধলিয়া বাজার একটা হোটেলে নিয়ে চালানো হয় বর্বর নির্যাতন। সাপ মারার মতো বেধড়ক পেটানো হয় তাকে। ইটের ওপর রেখে পিটিয়ে বাম হাত ভেঙে দেওয়া হয়। দুই পা ইটের ওপর রেখে থেঁতলে দেওয়া হয়। একপর্যায়ে অচেতন হয়ে পড়েন রাসেল। তখন মৃত ভেবে তাকে সড়কের পাশে ফেলে দেয় পাষণ্ডরা। এসময় তারা লুটে নেয় রাসেলের মৎস্য খামারের অর্ধ কোটি টাকার মাছ।
খবর পেয়ে ঘণ্টা দুয়েক পর ঘটনাস্থলে আসে পুলিশ। মুমূর্ষু অবস্থায় তারা রাসেলকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রেফার করা হয় ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে। চিকিৎসা নেন দীর্ঘ ছয় মাস। প্রাণে বেঁচে গেলেও পঙ্গুত্ব বরণ করেন ৩২ বছরের টগবগে যুবক রাসেল। বাম হাত পুরোপুরি অবশ হয়ে যায়। দুই পায়ের আঙ্গুল বাঁকা হয়ে যায়। স্বাভাবিকভাবে হাঁটাচলা করতে পারেন না। নিজের জামা-কাপড়ও একা পরতে পারেন না। অন্যের সাহায্য ছাড়া চলাফেরাও করতে পারেন না। এখন বয়ে বেড়াচ্ছেন যন্ত্রণার জীবন। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নির্মম নির্যাতনে পঙ্গুত্ব বরণ করলেও দমে যাননি রাসেল। পঙ্গু শরীর নিয়েই ভালুকার রাজপথে নেতৃত্ব দেন স্বৈরাচার হাসিনা সরকার বিরোধী আন্দোলনে। সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রায় প্রতিটি কর্মসূচিই পালন করেন তিনি। গত ১৭ বছরে আন্দোলন করতে গিয়ে ৪৮টি রাজনৈতিক মামলায় আসামি করা হয় রাসেলকে। গ্রেপ্তার হয়ে কারাবরণ করেন একাধিকবার।
নির্মম নির্যাতনের কথা মনে হলে এখনও আঁতকে উঠেন রাসেল। আবেগাপ্লুত হয়ে নির্যাতনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে রাসেল এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকার মাছ লুট করে নিয়ে যায়। তখন স্কুলশিক্ষক পিতা আবদুল আওয়াল মাস্টারকেও মারধর করা হয়। পুলিশকে জানালে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।’
রাসেল বলেন, ‘রাজনৈতিক কারণে আমরা চার ভাইকে গ্রেপ্তার করা হয়। আমাদের চার ভাইয়ের গ্রেপ্তার আব্বা মেনে নিতে পারিনি। তিনি স্ট্রোক করে মারা যান। আমি প্যারোলে মুক্তি পেয়ে আব্বার জানাজায় অংশ নিই।’ তিনি বলেন, ‘আমি প্রাণে বেঁচে আছি। কিন্তু নির্যাতনের যন্ত্রনা এখন বয়ে বেড়াচ্ছি। শীতকাল এলে যন্ত্রণা বাড়ে। এখনও হাতের আঙ্গুল সোজা করতে পারি না। দুই পায়ের আঙ্গুল বাঁকা। আমি একটা চলতে পারি না। একা পায়জামাটাও পরতে পারি না।’
রাসেল বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে এই হামলার ঘটনায় ভালুকা থানায় মামলা করতে গেলে তৎকালীন ওসি মামলা নেয়নি। পরে আদালতে ১৯ জনকে আসামি করে মামলা করেন তিনি। কিন্তু মামলার স্বাক্ষীদের হুমকি ধামকি দিয়ে স্বাক্ষ্য দিতেও বাধা দেওয়া হয়।