ইউএনডিপি নির্বাচন কমিশনে ৮০ কোটি টাকার প্রযুক্তিপণ্য দিয়েছে

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পথে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর অংশ হিসেবে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করছে ইসি। দেশে যেন একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয় সেজন্য সহায়তা করছে জাতিসংঘ উন্নয়ন প্রকল্প (ইউএনডিপি)। সংস্থাটি ইতোমধ্যে ল্যাপটপসহ বিভিন্ন প্রযুক্তি দিয়েছে, যার আর্থিক মূল্য প্রায় ৮০ কোটি টাকা।
আজ বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) নির্বাচন কমিশনের সংশ্লিষ্ট সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে। সূত্রটি বলছে, চলমান হালনাগাদে ইউএনডিপি ল্যাপটপ দিয়েছে (ব্যাগ, হাব ও মাউসসহ) ১ হাজার ৩২১টি, ফিঙ্গার প্রিন্ট স্ক্যানার দিয়েছে ৫৭৪টি, আইরিশ স্ক্যানার ৫৬১টি, ক্যামেরা (ট্রাইপড, ব্যাগ, ক্যাবল, চার্জার ও ব্যাটারি) ১ হাজার ১০টি। ডকুমেন্টস স্ক্যানার দিয়েছে ৪৬৪টি। এ ছাড়া ৬৯৯টি সিগনেচার প্যাডের চাহিদার মধ্যে ইউএনডিপি দিয়েছে ৩০০টি। আর বাকিটা পরে দেওয়া হবে। এ সকল পণ্যের বাজার মূল্যে দাম ধরলে যা দাঁড়াবে তা ৮০ কোটি টাকার মতো। এর বেশিভাগ উপকরণ মাঠ পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে।
ইসির অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী নেওয়াজ গণমাধ্যমকে বলেন, চলমান ভোটার তালিকা হালনাগাদে ইউএনডিপি’র সহায়তা করছে। ইউএনডিপি আমাদের ইতোমধ্যে বিভিন্ন প্রোডাক্ট দিয়েছে। তারা তাদের আর্থিক হিসাব আমাদের তো আর জানাবে না। আর এটা জানতে চাওয়াটাও আমাদের ঠিক হবে না। তবে আমরা বুঝতে পেরেছি ইউএনডিপি প্রায় আমাদের ৭০-৮০ কোটি টাকার মতো প্রযুক্তিপণ্য দিয়ে সহায়তা করছে। এটা আরও বেশি হতো যদি এসব প্রোডাক্টের বিপরীতে কাস্টমস ফি দেওয়া লাগত।
এর আগে জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচি ইউএনডিপি’র আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার বলেছিলেন, নির্বাচনে সহায়তা দেওয়ার জন্য গত ডিসেম্বরে আমাদের অনুরোধ করা হয়েছিল। সেই অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে কী ধরনের কারিগরি সহায়তা দেওয়া যায় সেজন্য ইউএন’র একটি প্রয়োজনীয় মূল্যায়ন দল দুই সপ্তাহ সফর করেছে। তাদের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে ভোটারদের অংশগ্রহণের জন্য ইসিকে শক্তিশালী করা, নির্বাচনি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটকে শক্তিশালী করা; যেমন-ভোটার নিবন্ধন, ভোটার নিবন্ধন প্রচার, ভোটার শিখন কার্যক্রম নিয়ে সহায়তা প্রদান করা।
স্টেফান লিলার বলেন, আমরা নির্বাচন কমিশনকে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সহায়তা করছি। আশা করছি এটা বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে সেরা নির্বাচন হবে। এক্ষেত্রে নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে অন্তর্বর্তী সরকার ও নির্বাচন কমিশন।
ইসি সূত্র জানিয়েছে, ইউনডিপি নির্বাচন কমিশনকে বরাবরই কারিগরি সহায়তা দিয়ে থাকে। চলমান হালনাগাদে যেমন দিয়েছে। তেমনি ২০০৭-২০০৮ সালে প্রথমবারের মতো ভোটার ডাটা তৈরিতেও তারা সহায়তা করছে। এ ছাড়া তাদের সহযোগিতায় বাংলাদেশের নির্বাচনে স্বচ্ছ ব্যালট বক্সের ব্যবহার হয়েছে যা ওই সময়ে এ দেশের সব নাগরিকের একটা চাওয়া ছিল। শুধু ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ ছাড়া প্রায় সব নির্বাচনে ইউএনডিপি নির্বাচন কমিশনকে কারিগরি সহায়তা দিয়ে থাকে।
জানা যায়, নির্বাচনের আগে বড় প্রস্তুতির মধ্যে আছে ভোটার তালিকা হালনাগাদ যা শেষ হবে জুনে। সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ যেটির আইন সংশোধনের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য দেওয়া হয়েছে। নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন দেওয়ার লক্ষে আবেদন আহবান করেছে নির্বাচন কমিশন যেখানে নতুন রাজনৈতিক দল আবেদন করতে পারবে আগামী ২০ এপ্রিল পর্যন্ত। এছাড়া পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধনের জন্য বিদ্যমান নিবন্ধিত পর্যবেক্ষক সংস্থার পুনঃমূল্যায়ন কাজ চলমান। এর বাইরে নির্বাচনি কর্মকর্তা নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ, ব্যালট পেপার তৈরির মতো কাজগুলো নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর শুরু করা হয়।