গাজীপুর সাফারি পার্কে ফের চুরি, ম্যাকাওয়ের পর এবার লেমুর উধাও

পশু পাখিদের নিরাপদ আবাসস্থল হওয়ার কথা ছিল গাজীপুরের সাফারি পার্ক। তবে পার্কটি যেন চোরের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। ম্যাকাও পাখির পর এবার পার্ক থেকে বিরল প্রজাতির তিনটি আফ্রিকান লেমুর রহস্যজনকভাবে চুরির ঘটনা ঘটেছে। ফলে পার্ক কর্তৃপক্ষের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে উঠেছে গুরুতর প্রশ্ন। পরিবেশবাদীরা বলছেন, একের পর এক মূল্যবান প্রাণী চুরির ঘটনা পার্কের অব্যবস্থাপনা ও দুর্বল নজরদারিরই প্রমাণ, যা শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশে লেমুরের অস্তিত্বকে বিলুপ্তির দিকে ঠেলে দিল।
পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম জানান, গত ২৩ মার্চ দিনগত রাতে পার্কের লেমুর বেষ্টনী থেকে একটি প্রাপ্তবয়স্ক ও দুটি শাবকসহ তিনটি লেমুর চুরি হয়। তারের প্রাচীর কেটে রাতের অন্ধকারে কে বা কারা লেমুরগুলো নিয়ে যায়। এ ঘটনায় পরদিন থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হলেও এখনো তদন্তে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখা যায়নি।
বন বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে সারা দেশে আর কোনো লেমুর অবশিষ্ট নেই। অর্থাৎ এই চুরির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে লেমুরের অস্তিত্ব পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে গেল।
পার্কের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানায়, কয়েকমাস ধরেই সাফারি পার্কে একের পর এক প্রাণী চুরি ও অব্যবস্থাপনার ঘটনা ঘটছে। গত বছরের নভেম্বরে দুটি ম্যাকাও পাখি চুরি হয় এবং চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি একটি নীলগাই নিখোঁজ হয়। এসব ঘটনায় বন বিভাগের কয়েকজন কর্মচারীর সম্পৃক্ততার সন্দেহ থাকলেও কাউকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা হয়নি।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা শারমিন আক্তার বলেন, তিনটি লেমুর চুরির ঘটনা তদন্তাধীন রয়েছে। ইতোমধ্যে থানায় মামলা হয়েছে। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ৬ আগস্ট হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একটি আন্তর্জাতিক চোরাচালান চক্রের কাছ থেকে ২০২ জোড়া বিপন্ন পাখি ও বন্যপ্রাণী উদ্ধার করা হয়, যার মধ্যে ছিল দুটি লেমুর। উদ্ধারকৃত এসব প্রাণী পরে বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের মাধ্যমে সাফারি পার্কে হস্তান্তর করা হয়। সেখানেই প্রথমবারের মতো লেমুর জোড়াটি দুটি বাচ্চা দেয়। ২০২২ সালে একটি লেমুর মারা গেলে বাকি থাকে তিনটি। সর্বশেষ এই তিনটিই চুরি যাওয়ায় এখন পুরো বেষ্টনী লেমুর শূন্য।