এক মণ ধানেও মিলছে না একজন কৃষি শ্রমিক
মাঠজুড়ে দোল খাচ্ছে সোনালি ধান। প্রকৃতির এই মনোরম দৃশ্য দেখেও চিত্তজুড়ে শান্তি আসছে না কুমিল্লার কৃষকদের। কারণ ধান কেটে ঘরে তুলতে হিমশিম খেতে হচ্ছে শ্রমিক সংকট ও অতিরিক্ত মজুরির কারণে। শ্রমিক সংকটে অনেক কৃষক বাধ্য হয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে নেমে পড়ছেন ধান কাটতে।
কৃষকরা জানান, বর্তমানে এক মণ কাঁচা ধান বিক্রি হচ্ছে প্রায় ১ হাজার টাকায়। অথচ একজন কৃষি শ্রমিকের দৈনিক মজুরি ৯০০ টাকা, সঙ্গে দিতে হচ্ছে ৩ বেলা খাবার। এতে একজন শ্রমিকের পেছনে দৈনিক ব্যয় দাঁড়ায় ১১০০ টাকা, যা এক মণ ধান বিক্রির টাকাতেও উঠছে না। এতে লোকসান গুনতে হচ্ছে চাষিদের।
সদর দক্ষিণ উপজেলার বিজয়পুর এবং বুড়িচং উপজেলার সেনানিবাস এলাকায় দেখা গেছে, উত্তরবঙ্গ থেকে আগত কৃষি শ্রমিকরা দৈনিক ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা মজুরিতে কাজ করছেন।
সেনানিবাস এলাকায় কৃষি শ্রমিক নিতে আসা মনিরুল হক জানান, তিনি ১৬০ শতক জমিতে ধান আবাদ করেছেন। ধান তোলার খরচ হিসেবে চারজন কৃষি শ্রমিকের দৈনিক ৯০০ টাকা মজুরি এবং খাবার বাবদ তার মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭০ হাজার টাকা। ধানের ন্যায্য দাম না পেলে লোকসানে পড়বেন।
এমন অভিযোগ আরও অন্তত ১০ জন কৃষকের কাছ থেকে পাওয়া গেছে। তারা জানান, দিন দিন শ্রমিক মজুরি, সার, বীজের দাম বাড়লেও ধানের দাম বাড়ছে না। এতে চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন অনেকেই।
কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আইউব মাহমুদ জানান, এ বছর বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৬১ হাজার ৭৯০ হেক্টর জমিতে। আবাদ হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি ১ লাখ ৬১ হাজার ৯৭১ হেক্টরে। ফলনও ভালো হয়েছে। ধান সংগ্রহে আরও ১৫ থেকে ২০ দিন লাগবে।
কুমিল্লা খাদ্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক নিত্যানন্দ কুন্ডু জানান, কৃষকদের হতাশ হওয়ার কিছু নেই। সরকার এবার চিটামুক্ত শুকনো ধান ৩৬ টাকা কেজি দরে সংগ্রহ করছে। গত ২৪ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া এই সংগ্রহ অভিযান চলবে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। প্রতি কৃষক সর্বোচ্চ ৩ টন ধান বিক্রি করতে পারবেন। তবে এখন পর্যন্ত ধান সংগ্রহ শুরু হয়নি, চলতি সপ্তাহে তা শুরু হবে।

মাহফুজ নান্টু, কুমিল্লা