মেহেরপুরে আমে অজানা রোগের প্রাদুর্ভাব

চলতি মৌসুমে মেহেরপুর জেলার আমবাগানগুলোতে এক অজানা রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এই রোগে গাছ থেকে সংগ্রহের মাত্র ২-৩ দিনের মধ্যেই আম বোটার দিক থেকে পচে যাচ্ছে এবং তা খাওয়ার অনুপযুক্ত হয়ে পড়ছে। এতে আমচাষীদের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে।
কৃষি বিশেষজ্ঞদের প্রাথমিক ধারণা, এটি ছত্রাকজনিত ‘স্টেম-এন্ড রট’ রোগ, যা পরিবেশগত কারণে বিস্তার লাভ করতে পারে। বর্তমানে জেলার প্রায় দুই হাজার হেক্টর আমবাগানে এই রোগের প্রকোপ দেখা গেছে, যা আগে কখনও দেখা যায়নি।
ভোক্তারাও এ বিপদ থেকে বাদ যাচ্ছেন না। বাজার বা বাগান থেকে কেনা আম দুদিনের মধ্যে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় অনেকে তা ডাস্টবিনে ফেলতে বাধ্য হচ্ছেন।
এদিকে, কুরিয়ারে প্রিয়জনদের কাছে পাঠানো মেহেরপুরের বিখ্যাত হিমসাগর আম পচে যাওয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে। এতে জেলার সুস্বাদু আমের সুনাম মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বাজারে ভোক্তা কমে যাওয়ায় আম বিক্রিও কমে গেছে।
জেলার কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, এই রোগের পেছনে আবহাওয়ার হঠাৎ পরিবর্তন ও অতিরিক্ত আর্দ্রতা দায়ী হতে পারে। আমচাষীরা অভিযোগ না করায় এখনও কোনো কারিগরি টিম মাঠে যায়নি। তবে মেহেরপুর কৃষি অফিসের এক কর্মকর্তাও ব্যক্তিগতভাবে আম পচে যাওয়ার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন।
শহরের গড় পাড়া এলাকার শিখা বেগম বলেন, বাজার থেকে আনা আম দুই দিন পরেই পচে যায়। শেষমেশ ডাস্টবিনেই ফেলতে হয়েছে।
সদর উপজেলার চাষি রুস্তুম আলী জানান, ১৮ মে পর থেকে বৃষ্টির পর গাছ থেকে আম সংগ্রহের পর সেগুলো আর সংরক্ষণ করা যাচ্ছে না। তিনি ধারণা করছেন, এটি কোনো ভাইরাসজনিত সংক্রমণ হতে পারে।
মেহেরপুরে মোট ২ হাজার ৩৬৬ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয় এবং চলতি মৌসুমে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৫ হাজার ৫১০ মেট্রিক টন। যদি এক হাজার মেট্রিক টন আমও নষ্ট হয়, তবে প্রতি মণে গড়ে ১৫০০ টাকা ধরে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় দেড়শ’ কোটি টাকা।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সামসুল আলম বলেন, ‘আবহাওয়াজনিত ছত্রাকবাহিত ‘স্টেম-এন্ড রট’ রোগে এমন হতে পারে। আম সংগ্রহের অন্তত পনেরো দিন আগে ফলবান গাছে কোনো ধরনের ওষুধ স্প্রে করা যাবে না।’ কোনো আমচাষী বা ভোক্তা থেকে অভিযোগ না পাওয়াতে কারিগরি টিম সরেজমিন পর্যবেক্ষণ করা হয়নি। বিষয়টি তিনি দেখবেন বলে জানান।