গোয়ালঘরের তালা ভেঙে গরু চুরি, গ্রামে আতঙ্ক
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ঢেপা পাঙ্গাসিপাড়ায় আবারও গরু চুরির ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) মধ্যরাতে একটি গোয়ালঘরের তালা ভেঙে এইড়ে (ষাঁড়) ও গাভিন (গর্ভবতী) জাতের দুটি গরু চুরি করেছে চোরের একটি সংঘবদ্ধ দল। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুরো গ্রামে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে- আবারও রাত জেগে গ্রাম পাহারা দিতে হবে কি না, এমন দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় সূত্র ও ভুক্তভোগী পরিবার জানায়, মঙ্গলবার মধ্যরাতে মানিক মিয়ার গোয়ালঘরের তালা ভেঙে দুর্বৃত্তরা দুটি গরু নিয়ে যায়। ভোরে মানিকের ছোট ছেলে গোয়ালে গিয়ে দেখে-দরজা খোলা আর ভেতরে গরু নেই।
চুরির সময় গোয়ালঘরে মোট তিনটি গরু ছিল। চোরেরা একটি এইড়ে (ষাঁড়) ও একটি গাভিন গরু চুরি করে নিয়ে গেলেও বাছুরটিকে ফেলে গেছে। সকালে সবাই গিয়ে দেখে বাছুরটি এক কোণে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে, নির্বাক চোখে ফাঁকা গোয়ালের দিকে তাকিয়ে আছে।
গরুর মালিক মানিক মিয়া বলেন, রাত ১০টার দিকে পাড়া থেকে বাড়ি ফিরে গোয়াল পরিষ্কার করে গরু বেঁধে তালা লাগাই। সবকিছু ঠিকঠাক ছিল। সকালবেলা ছেলে বলে- ‘বাবা, গরু নাই’। তখন দেখি তালা ভাঙা। চুরি হওয়া দুটি গরুর মধ্যে এইড়ে গরুটির বাজারমূল্য প্রায় দুই লাখ টাকা এবং গাভিন গরুটির মূল্য প্রায় পঁচাত্তর হাজার টাকা বলে তিনি দাবি করেন।
চুরির পর মানিক মিয়ার পরিবারে চলছে কান্না-আহাজারি। মানিকের বোন কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, আমার ভাইয়ের এত বড় ক্ষতি হলো, কীভাবে সে ঘুরে দাঁড়াবে- আল্লাহই জানেন। গরু দুটোই ছিল তার সম্বল।
মানিকের মা বলেন, যত্ন করে, কষ্ট করে গরুগুলো বড় করছিলাম। এখন আমার ছেলের কী হবে? এভাবে যদি চুরি হয়, গরু পালব কীভাবে? পরিবারের সদস্যদের দাবি- এ ধরনের বড় ক্ষতি সামাল দেওয়া তাদের জন্য খুবই কঠিন।
ঘটনার পর গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে মানুষের মধ্যে চরম দুশ্চিন্তা। অনেকেই রাতের ঘুম হারাম করে পাহারার প্রসঙ্গ তুলেছেন। গ্রামবাসীর কয়েকজনের বক্তব্যে ভয় ও ক্ষোভের চিত্র ফুটে উঠেছে।
এক প্রতিবেশী জানান, এভাবে যদি চুরি হতে থাকে তাহলে কেউই নিরাপদ থাকবে না। আবার কী আগের মতো রাতে লাঠিসোঁটা নিয়ে গ্রামের সবাইকে পাহারা দিতে হবে?
স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, কয়েক বছর আগে চোরের উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় পুরো গ্রাম পালা করে পাহারা দিত। এখন আবার সেই দিন ফিরে আসবে কি না- এই চিন্তায় সবাই।
ঘটনার খবর পেয়ে সকালে গাংনী থানার পরিদর্শক (এসআই) শিমুল হোসেনের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। তারা গোয়ালঘরের ভাঙা তালা, গরু রাখার স্থান ও আশপাশ ঘুরে দেখেন।
গাংনী থানার পরিদর্শক (এসআই) শিমুল হোসেন বলেন, খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়েছি। আশেপাশের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে চোর শনাক্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছি। চুরি যাওয়া গরু উদ্ধার ও চোরদের আইনের আওতায় আনার জোর চেষ্টা চলছে।

রেজ আন উল বাসার তাপস, মেহেরপুর