গোপালগঞ্জে চার হত্যা মামলায় আসামি ৫ হাজার ৪০০

গোপালগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রা ও সমাবেশকে কেন্দ্র করে সহিংসতার ঘটনায় পাঁচজনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনার চার দিনের মাথায় পৃথক চারটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। ওই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ রমজান মুন্সি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। সে বিষয়ে একটি হত্যা মামলা হবে বলে জানা গেছে।
ময়না তদন্ত ছাড়া দাফন ও সৎকার করা চারজনের মৃত্যুর ঘটনায় চার পুলিশ কর্মকর্তা বাদী হয়ে গোপালগঞ্জ সদর থানায় গতকাল শনিবার (১৯ জুলাই) গভীর রাতে হত্যা মামলা চারটি দায়ের করেন । দায়েরকৃত প্রতিটি মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ জনকে। এ চারটি মামলায় ৫ হাজার ৪০০ দুষ্কৃতকারীকে আসামি করা হয়েছে।
গোপালগঞ্জ সদর থানার এস আই মো. আইয়ুব হোসেন বাদী হয়ে রমজান কাজী হত্যাকাণ্ডের ঘটনার মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ১৭, তারিখ ১৯/০৭/২০২৫। মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণের জানা যায় গত বুধবার (১৬ জুলাই) এনসিপির শান্তিপূর্ণ সমাবেশ শেষে পৌর পার্ক থেকে দুপুরে মাদারীপুরের উদ্দেশে গাড়িবহর নিয়ে রওনা দিয়ে নেতৃবৃন্দ গোপালগঞ্জ শহরের এসকে সালেহিয়া মাদ্রাসার কাছে পৌঁছালে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী এবং দুষ্কৃতকারীরা গাড়ি বহরে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা করে। পুলিশ, সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী এতে বাধা দেয়। এসময় তাদের আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে থাকা কতিপয় দুষ্কৃতকারী ক্ষিপ্ত হয়ে আইনশৃংখলা বাহিনীর উপর গুলি চালায়। এ সময় রমজান কাজী (১৭) গুলিবিদ্ধ হয়ে মারাত্মক আহত হন। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় ৮০০ থেকে ৯০০ দুষ্কৃতকারীকে আসামি করা হয় ।
সদর থানার এস আই মো. শামীম হোসেন বাদী হয়ে দীপ্ত সাহা (২৭) হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গোপালগঞ্জ সদর থানায় ১৯ জুলাই গভীর রাতে অজ্ঞাত নামা ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ জনকে আসামি করে ওই থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ১৮, তারিখ ১৯/০৭/২০২৫।
মামলার বিবরণে জানা গেছে, গত বুধবার (১৬ জুলাই) এনসিপির গাড়ি বহরে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী এবং দুষ্কৃতকারীদের হামলার ঘটনা শহরে ছড়িয়ে পড়ে। কলেজ মসজিদের পাশে মিলন ফার্মেসীর সামনের আইন শৃংখলা রক্ষা বাহিনী এটি প্রতিরোধ করতে গেলে হামলাকারীরা গুলি করে। সেখানে দীপ্ত সাহা গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন। সংকটজনক অবস্থায় তাকে গোপালগঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। দণ্ডবিধি আইনের ১৪৭/১৪৮/১৪৯/১৮৬/৩৫৩/৩০৭/৩০২/৩৪ প্যানেল কোড ধারায় ১৫০০ দুষ্কৃতকারীকে আসামি করে মামলাটি দায়ের করা হয়।
একই থানার এস আই আবুল কালাম আজাদ বাদী হয়ে সোহেল রানা মোল্লা (৩০) হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শনিবার গভীর রাতে সদর থানায় ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ জন দুষ্কৃতকারীকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ১৯, তারিখ ১৯/০৭/২০২৫।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা যায়, লঞ্চ ঘাট এলাকায় হোটেল রাজের সামনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দুষ্কৃতকারীরা এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের ওপর হামলা চালায়। পুলিশ ও সেনাবাহিনী এগিয়ে আসলে তাদেরকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় দুষ্কৃতকারীরা। এ সময় সোহেল রানা মোল্লা মারাত্মক আহত হন। তাকে উদ্ধার করে গোপালগঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করে।
পুলিশের এসআই শেখ মিজানুর রহমান বাদী হয়ে ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ দুষ্কৃতকারীকে অজ্ঞাত আসামি করে ইমন তালুকদার হত্যা মামলা দায়ের করেন ।
ঘটনার দিন গত ১৬ জুলাই আসামিরা শহরের পুরাতন সোনালী ব্যাংকের সামনে এনসিপির গাড়ি বহরে হামলা করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এতে বাধা দিলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ওৎ পেতে থাকা দুষ্কৃতকারীরা গুলি করে। গুলিবিদ্ধ হয়ে ইমন তালুকদার আহত হয়। পরে হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। এ ঘটনায় ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ জন দুষ্কৃতকারীকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়।
এ পর্যন্ত গোপালগঞ্জে এ ঘটনায় চারটি হত্যা মামলাসহ আটটি মামলা দায়ের করা করা হয়েছে। প্রতিটি মামলায় পুলিশ বাদী হয়েছে। আট মামলায় আট হাজার ৪০৮ জন দুষ্কৃতকারীকে আসামি করা হয়েছে। আজ রোববার (২০ জুলাই) পুলিশ ২৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এ নিয়ে গ্রেপ্তারের সংখ্যা দাঁড়াল ৩০১ জনে।