ভূতগাড়ি এখন ‘তরমুজ নগরী’

জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার আওলাই ইউনিয়নের ভূতগাড়ি গ্রামের নাম এখন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে এক নতুন পরিচয়ে ‘তরমুজ নগরী’ হিসেবে। সাধারণত তরমুজের মৌসুম থাকে কয়েক মাস, কিন্তু এই এলাকায় সারা বছরই জমজমাট তরমুজের চাষ ও চলে বেচাকেনা। গ্রামের চারপাশে মাচা পদ্ধতিতে চাষ করা ঝুলন্ত তরমুজ আর রাস্তার দুই পাশে সারি সারি দোকান- এই অনন্য দৃশ্যপট আকর্ষণ করছে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে পাইকারদেরও।
তরমুজের মৌসুম অনেক আগেই পার হয়েছে, কিন্তু ভূতগাড়িতে থেমে নেই চাষাবাদ কিংবা বাণিজ্য। মাঠজুড়ে মাচার ওপর সবুজ পাতার আড়ালে লুকিয়ে থাকা বিভিন্ন রঙের তরমুজ প্রকৃতির এক নিপুণ শিল্পকর্মের মতো চোখে পড়ে। দূর থেকে দেখলেই দৃষ্টি কাড়ে সবুজ, কালো ও হলুদ রঙের বাহারি তরমুজ। অনেকেই রাস্তার পাশের দোকান থেকে কিনে নিচ্ছেন সতেজ ফলটি।
স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, প্রতি বিঘা জমিতে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা খরচ করে তারা আয় করছেন এক লাখ থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত। এ লাভজনক ফল চাষে উৎসাহিত হয়ে দিন দিন বাড়ছে তরমুজ চাষের পরিধি। অনেকেই ধান বা গমের পরিবর্তে তরমুজ চাষে ঝুঁকছেন। উন্নত জাত এবং মাচা পদ্ধতির আধুনিক চাষের কৌশলে ফলনে সফলতা এসেছে।
এলাকার কৃষক তোতা মিয়া বলেন, এর আগে দুইবার তরমুজ চাষ করেছি, কিন্তু এত ভালো ফলন হয়নি। এইবার ফলন অনেক ভালো হয়েছে। কৃষি অফিস যদি নিয়মিত সহযোগিতা ও পরামর্শ দিত, তাহলে ফলন আরও ভালো হতো।

পাইকার ও ব্যবসায়ী মাবিদুল ইসলাম বলেন, ভূতগাড়ির তরমুজ খুবই সুস্বাদু এবং অসময়ে বাজারে এর দামও ভালো। এখন প্রতিমণ তরমুজ ২ হাজার ১৫০ থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। আমরা সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে কিনে নিই। মানের দিক থেকেও এই এলাকার তরমুজ অনেক উন্নত।
এই অঞ্চলের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো, এখানকার তরমুজ বাজার শুধু মৌসুমি নয় বরং বছরজুড়ে সক্রিয় থাকে। দেশের নানা প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা আসেন, সরাসরি মাঠে গিয়ে কৃষকদের কাছ থেকে তারা তরমুজ কিনে নেন। এতে কৃষকরা পাচ্ছেন ন্যায্য মূল্য এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যও অনেকটাই কমেছে।
পাঁচবিবি উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মেহেদী হাসান বলেন, ভূতগাড়ি এলাকায় মাচা পদ্ধতিতে তরমুজ চাষ হচ্ছে। মধুমতি, তৃপ্তি ও ব্ল্যাক বেবি এই তিন জাতের তরমুজ এখানে চাষ হচ্ছে। আমরা কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। এটি একটি সম্ভাবনাময় ফসল, বিশেষ করে তরুণ ও বেকার যুবকদের কৃষির দিকে আগ্রহী করতে আমরা উৎসাহ দিচ্ছি।