ডাকসুতে যেভাবে ভিপি নির্বাচিত হলেন প্রত্যন্ত গ্রামের কানিজ

স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েও বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য ও আত্মবিশ্বাসকে পুঁজি করে শেষ পর্যন্ত ডাকসু নির্বাচনে শামসুন নাহার হলের ভিপি (সহ-সভাপতি) নির্বাচিত হয়েছেন প্রত্যন্ত গ্রামের কুররাতুল আইন কানিজ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী কানিজ ছোটবেলা থেকেই নেতৃত্ব জ্ঞানসম্পন্ন ও মেধার অধিকারী ছিলেন।
মেয়েদের অধিকার ও পরিবেশ নিয়ে দেশ-জাতির স্বার্থে নিজেকে সংযুক্ত করেছিলেন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বারান্দা থেকেই। স্বর্ণ কিশোরী ফাউন্ডেশন ও নেটওয়ার্কের সঙ্গে তিনি কাজ করছেন দীর্ঘদিন। যা বাংলাদেশের কিশোর-কিশোরীদের প্রজনন স্বাস্থ্য, জীবনমান উন্নয়ন ও নারীর ক্ষমতায়নে কাজ করে। পরিবেশ রক্ষায় কাজ করেছেন গ্রীন ভয়েস এর সঙ্গে চার বছর। এ ছাড়াও গার্লস গাইডেও কাজ করেছেন কানিজ।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলার ধরমপুর গ্রামে কুররাতুল আইন কানিজ ২০০২ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মো. কুরবান আলী ভোলাহাট রামেশ্বর পাইলট মডেল ইন্সটিটিউশনের প্রধান শিক্ষক ও মা মোসা. নুরুননাহার পারভিন নেকজান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। বর্তমানে তারা দুজনই নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন।
কানিজের শিক্ষাজীবন শুরু হয় উপজেলা পরিষদ হাজি আবেদ আলী কেজি স্কুলে। এরপর তিনি তেলিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণীতে ও নেকজান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে অষ্টম শ্রেণীতে বৃত্তি লাভ করেন। ২০১৮ সালে নেকজান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে তিনি উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীতে ২০২০ সালে রাজশাহী নিউ গভ. ডিগ্রি কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগে ভর্তি হয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছেন।
কুররাতুল আইন কানিজ বলেন, আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ডাকসু নির্বাচন করার জন্য কোনো প্রকার সাপোর্ট পায়নি। তবে আমার হলের আপুরা আমাকে পর্যাপ্ত মানসিকভাবে সাপোর্ট দিয়ে সাহস যুগিয়েছে। সব সময় আত্মবিশ্বাসকে পুঁজি করে জুলাই বিপ্লবসহ ডাকসু নির্বাচনে অদম্য মনোবল ওপর ভর করে ছুটে চলেছি। আমি ভবিষ্যতে আরও বেশি দেশ-জাতির স্বার্থে নিজেকে নিয়োজিত করতে চাই।

তেলিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোসা. রিজিয়া খাতুন বলেন, আমি কানিজকে ছোট থেকেই লক্ষ করেছি কালচারাল প্রোগ্রাম গুলোতে খুব সহজেই উপস্থাপন করতে পারত। পড়াশোনাতে ভালো হওয়ায় আমাদের স্কুল থেকে পঞ্চম শ্রেণীতে বৃত্তি পেয়েছিল।
নেকজান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মনিরুল ইসলাম ডাবলু বলেন, কানিজ লেখাপড়ার পাশাপাশি সহশিক্ষা কার্যক্রমেও ছিল খুবই পারদর্শী। খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, উপস্থিত বক্তব্যসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের সঙ্গে সক্ষমতা ছিল।
পিতা কুরবান আলী বলেন, সর্বোপরি মহান আল্লাহর প্রতি শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি, আলহামদুলিল্লাহ। শামসুন নাহার হলের শিক্ষার্থীদের সঠিক মূল্যায়নের ফলে আমার মেয়ে ভিপি নির্বাচিত হয়েছেন। কানিজকে এ পর্যায়ে আসতে গিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ যারা অনেকভাবেই সহযোগিতা করেছেন, তাদের প্রতি আমার পরিবারের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।