কুমিল্লায় ফের ডেঙ্গুর চোখ রাঙানি, বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা

কুমিল্লায় আবারও ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। সরকারি হিসাবে আক্রান্তের সংখ্যা কম হলেও বেসরকারি তথ্যে প্রতিদিন রোগী বাড়ছে। সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার মশক নিধন কার্যক্রমের অপর্যাপ্ততার কারণে মশার উপদ্রব এবং ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। এতে নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ২০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এদের মধ্যে শুধু দাউদকান্দি উপজেলাতেই ১০ জন রয়েছেন। এখন পর্যন্ত জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৯ হাজার ৫৯০ জনে দাঁড়িয়েছে এবং ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৬ জন মারা গেছেন।
চলতি বছরের জুন মাসে দাউদকান্দি পৌরসভায় ডেঙ্গু মহামারী আকার ধারণ করেছিল। সে সময় দোনারচর গ্রামের ইউসুফ আলী, মাকসুদা বেগম এবং শাহিনুর আক্তারসহ তিনজন রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ওই সময় শুধু দাউদকান্দি পৌরসভার ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডেই ৬ শতাধিক মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন, যার ফলে ওই দুই ওয়ার্ডে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছিল। পরে জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে ডেঙ্গু সংক্রমণ কমে এলেও সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে এটি আবার বাড়তে শুরু করেছে।
কুমিল্লা সরকারি কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের প্রধান, সহকারী অধ্যাপক আনোয়ারুল হক জানান, তিনদিন আগে তিনি ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। জ্বর কমলেও তার শরীর দুর্বল। তার পরিবারের আরও দুজন এবং কয়েকজন সহকর্মীও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। তিনি অভিযোগ করেন, সিটি করপোরেশনের মশক নিধন কর্মসূচি উল্লেখযোগ্য নয়। ফগার মেশিন দিয়ে লোক দেখানো স্প্রে করে চলে যায়, যার ফলে নগরীতে ডেঙ্গু মহামারী রূপ নিচ্ছে।
একই কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রধান, সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন জানান, আটদিন আগে তিনি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তার তিনজন সহকর্মীও আক্রান্ত। তারা বলছেন, নগরীতে মশক নিধন কর্মসূচি নেই বললেই চলে। যার কারণে এডিস মশার বংশবৃদ্ধি ব্যাপক হারে হচ্ছে।
কুমিল্লা নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী জুয়েল খন্দকারও ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। তিনি জানান, ওই মার্কেটের অন্তত ৮ থেকে ১০ জন ব্যবসায়ী আক্রান্ত। সরকারি হাসপাতালে রোগীর চাপ বেশি থাকায় অনেকেই বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন।
পশ্চিম বাগিচাগাঁও এলাকার বাসিন্দা আসিফ অরুণাভ জানান, সিটি করপোরেশন ও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের উদাসীনতার কারণেই ঘরে ঘরে ডেঙ্গু বাড়ছে।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সচিব মোহাম্মদ মামুন মশক নিধন কর্মসূচিতে লোকবলের অভাবের কথা স্বীকার করেছেন। তিনি জানান, ২৭টি ওয়ার্ডের জন্য মাত্র ১০টি ফগার মেশিন ও ২০টি স্প্রে মেশিন রয়েছে। আর এই কাজে নিয়োজিত লোকবল মাত্র ২০ জন। এত কম সংখ্যক সরঞ্জাম ও লোকবল দিয়ে এত বড় নগরীতে যথাযথভাবে মশক নিধন করা সম্ভব নয়।
কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জন ডা. আলী নুর মোহাম্মদ বশির আহমেদ বলেন, সচেতনতা বৃদ্ধি ছাড়া ডেঙ্গু সংক্রমণ কমানো সম্ভব নয়। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ প্রতিনিয়ত সভা-সেমিনার করছে। আমি সবাইকে বাড়ির আঙিনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা এবং জমে থাকা পানি সরিয়ে ফেলার আহ্বান জানাচ্ছি। এমন পদক্ষেপ নিলে এডিস মশার বংশবৃদ্ধি ও ডেঙ্গু সংক্রমণ উভয়ই কমবে।