সাংবাদিকদের ‘সন্ত্রাসী’ বলার অভিযোগ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে!

বদেশ্বরী মন্দিরের মহালয়ার সংবাদ সংগ্রহের জন্য নৌকায় মোটরসাইকেল পারাপারের চেষ্টার জেরে সাংবাদিকদের ভিডিও ধারণকে ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ বলে মন্তব্য করেছেন জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তাহমিদুর রহমান। আজ রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় করতোয়া নদীর আওলিয়া ঘাটে এ ঘটনা ঘটে।
সাংবাদিকরা জানান, শারদীয় দুর্গোৎসবের মহালয়ার সংবাদ সংগ্রহে বড়শশী ইউনিয়নের বদেশ্বরী মন্দিরের দিকে যাচ্ছিলেন তারা। তখন নদীতে তিন-চারটি নৌকা চলাচল করছিল এবং নৌকায় মোটরসাইকেলও পারাপার হচ্ছিল। কিন্তু সাংবাদিকরা নৌকায় উঠতে চাইলে তিনি বাধা দিয়ে বলেন, ‘মোটরসাইকেল নেওয়া যাবে না।’ তখন সাংবাদিকরা প্রশ্ন তোলেন, ‘যখন অন্যরা মোটরসাইকেল নিয়ে পার হচ্ছে, আমরা কেন নিউজ কভারেজ কাজে যেতে পারব না?’ এতে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনি আল জাজিরার সাংবাদিক হন আর যেই সাংবাদিক হন, তাতে আমার কিছু যায়-আসে না। যেতে পারবেন না।’ তাঁর এমন আচরণে সাংবাদিকরা ক্যামেরায় ভিডিও ধারণ করতে থাকলে তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, “আপনাদের কাজ সন্ত্রাসীর মতো।’
এ বিষয়ে ঢাকা পোস্টের জেলা প্রতিনিধি নূর হাসান বলেন, ‘আমরা মহালয়ার সংবাদ সংগ্রহ করতে যাচ্ছিলাম। তখন দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেট আমাদের মোটরসাইকেল নিয়ে যেতে বাধা দেন। ঘাট একেবারে ফাঁকা ছিল এবং অনেককে মোটরসাইকেল নিয়ে নৌকায় পারাপার হতে দেখা যায়। ইউএনও নিজেও নৌকায় করে মোটরসাইকেল নিয়ে ঘাট পারাপার হন। তাহলে সাংবাদিকদের যেতে বাধা কেন?’
বাংলাভিশন টেলিভিশনের সাংবাদিক মোশারফ হোসেন বলেন, “ম্যাজিস্ট্রেট আমাদের সাংবাদিক পরিচয় শুনে রেগে গিয়ে বলেন, ‘আল জাজিরা সাংবাদিক হন যে সাংবাদিক হন, যেতে পারবেন না।’ অন্যরা যেতে পারলে আমরা কেন যেতে পারব না, এ কথা বললে তিনি আমাদের বলেন, ‘আপনারা তো সন্ত্রাসী।’”
এনটিভি অনলাইন থেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তাহমিদুর রহমানের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২০২২ সালে নৌদুর্ঘটনার বিষয়টি মাথায় রেখে বোদা উপজেলা প্রশাসন এ বছর নৌকায় ৩০ জনের বেশি যাত্রী বহন এবং যেকোনো ধরনের যন্ত্রচালিত ভ্যাহিকল পারাপার না করার সিদ্ধান্ত নেয়। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে জনপ্রতিনিধি, পুলিশ, আনসারসহ দুই পাড়ে আমরা পাঁচজন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছিলাম। তখন বেশ কয়েকজন সাংবাদিক নৌকায় মোটরসাইকেল নিয়ে পার হওয়ার চেষ্টা করেন। আমি তাদের নিষেধ করলে তারা একযোগে ক্যামেরা নিয়ে ভিডিও ধারণ করতে থাকেন। এরপর তারা আমার বক্তব্যের খণ্ডিতাংশ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার করেন।
বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রবিউল ইসলাম মোটরসাইকেল নিয়ে পারাপার হয়েছেন কি না জানতে চাইলে নির্বাহী ম্যোজিস্ট্রেট বলেন, এখানে তিনটি ঘাট রয়েছে। আমার দায়িত্ব পালনরত ঘাট দিয়ে এই ঘটনা ঘটেনি। এ ছাড়া তিনিও এক্সিকিউটিভ।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রবিউল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে তিনটি ঘাটের দুটিতে মোটরসাইকেল পারাপার নিষেধ ছিল। সাংবাদিকদের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। পরে সমাধান হয়ে গেছে। দায়িত্বরত ওই নির্বাহী মেজিস্ট্রেটকে পরে জেলার অন্য একটি কাজে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
ঘটনা সম্পর্কে জেলা প্রশাসক সাবেত আলী সাংবাদিকদের বলেন, ওই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে এই ঘাটের কার্যক্রম থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।