মৌলভীবাজারে বৃষ্টির পানিতে বেড়েছে কুঁচিয়া শিকার

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার খাল-বিল ও ধানক্ষেতের আইলজুড়ে সম্প্রতি বেড়েছে কুঁচিয়া (স্থানীয়ভাবে কুইচ্চা, কুঁইচা বা কুঁচে) শিকারীদের ব্যস্ততা। বৃষ্টির পানিতে জলস্তর বৃদ্ধি পাওয়ায় জীবিকার তাগিদে এই মাছ শিকার করে সংসার চালাচ্ছেন বহু মানুষ। প্রকৃতি যেন তাদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে।
কুঁচিয়া শিকারের বিশেষ কৌশল ‘রুহুঙ্গা’। স্থানীয়ভাবে এই মাছ ধরার ফাঁদটিকে বলা হয় ‘রুহুঙ্গা’, যা বাঁশ-বেত দিয়ে তৈরি। এটি দেখতে মাছ ধরার চাঁইয়ের মতো হলেও এর গঠন আলাদা। কোনো কোনো এলাকায় এটি ‘উকা’ নামেও পরিচিত।
নিকোলেস সরকার নামে একজন কুঁচিয়া শিকারী জানান, প্রতিদিন দুপুর তিনটে থেকে চারটের মধ্যে স্যাঁতসেঁতে জমি, বিল বা খালে যেখানে সামান্য পানি থাকে, সেখানে এই ফাঁদ পাতা হয়। ফাঁদের টোপ হিসেবে ব্যবহার করা হয় কেঁচো (জির)। টোপ দেওয়ার পর রুহুঙ্গাগুলো পানিতে ডুবিয়ে রাখা হয়। রাতভর পানির নিচে থাকা এসব ফাঁদে জির টোপ খেতে এসে কুঁচিয়াগুলো আটকা পড়ে। পরদিন ভোরে শিকারীরা রুহুঙ্গা তুলে কুঁচিয়া সংগ্রহ করেন।
প্রতিদিন ৭০ থেকে ১০০টি রুহুঙ্গা পেতে রাখেন শিকারীরা। সব ফাঁদে মাছ না ধরলেও সাধারণত তারা খালি হাতে ফেরেন না। ধরা পড়া কুঁচিয়াগুলো জীবিত রাখতে পানিভর্তি ড্রামে সংরক্ষণ করা হয়। সপ্তাহে দুই-তিন দিন পাইকাররা এসে এসব কুঁচিয়া কিনে নিয়ে যান। বর্তমানে প্রতি কেজি কুঁচিয়া বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা দরে।
শিকারীরা জানান, এই কাজে যথেষ্ট কষ্ট রয়েছে- কেঁচো তোলা, ফাঁদ তৈরি ও পাতানো সবকিছুই নিজেদের করতে হয়। আয়ের পরিমাণ মাসে কম-বেশি হলেও এই উপার্জন দিয়েই তাদের সংসার চলে। বাইম মাছের মতো দেখতে এই মাছ সাধারণত পুকুর, হাওর-বাঁওড়, খাল বা ধানখেতের তলদেশে মাটির গর্তে বাসা বাধে। স্থানীয়ভাবে এর চাহিদা কম হলেও বিদেশে এর চাহিদা অনেক বেশি, যা বহু পরিবারের জীবিকা নির্বাহের প্রধান উৎস।
কমলগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান কুঁচিয়া মাছের উচ্চ পুষ্টিগুণের কথা উল্লেখ করে বলেন, এটি মানবদেহের অনেক রোগ প্রতিরোধ করে। পুষ্টির চাহিদা পূরণের জন্য সবাই এটি খেতে পারেন। মৎস্য বিজ্ঞানে কুঁচিয়া খাওয়া নিয়ে কোনো বিধিনিষেধ নেই, যদিও ইসলামের দৃষ্টিতে অনেকে এটি খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করেন না।