আমি জানতাম, আমাকে ক্রসফায়ার করবে : সালাহউদ্দিন আহমদ

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, আমাকে যেদিন বর্ডার ক্রস করা হচ্ছিল, তখন আমি জানতাম না আমাকে বর্ডার ক্রস করানো হচ্ছে। আমি জানতাম, আমাকে ক্রসফায়ার করবে বা বনে জঙ্গলে ফেলে দেবে। শনিবার (১১ অক্টোবর) সিলেটে গুমবিষয়ক তথ্যচিত্রের শ্যুটিংকালে সেই দিনের স্মৃতিচারণ করে এই কথা বলেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুম-খুন নিয়ে ডকুমেন্টারি করা হচ্ছে। সেই ডকুমেন্টারির অংশের শ্যুটিংয়ে অংশ নিতে সালাহউদ্দিন আহমদ তামাবিল সীমান্তে আসেন।
সকালে তামাবিল সীমান্তে গিয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, যখন আমাকে এইখান থেকে ক্রস করে নিয়ে গেলো, হয়তো এই রাস্তা দিয়েই হবে, আমার এমনটিই মনে হচ্ছে। হাত পা ও চোখ বাঁধা অবস্থায় অবস্থায় তারা আমাকে ফেলে রেখে চলে যায়। পরে স্থানীয় মানুষ ও পুলিশ এলে বুঝতে পারি আমি শিলংয়ে আছি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, সেখানে যখন মেন্টাল হসপিটালে নিয়ে গেলো তখন ভেবেছিলাম পাগলের মতোই বাকি জীবনটা কাটাতে হবে।
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের গুমবিষয়ক তথ্যচিত্রের শ্যুটিংয়ের জন্য শনিবার সিলেটে আসেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। সকাল সাড়ে ৯টার ফ্লাইটে সিলেট আসার পর তিনি তামাবিল সীমান্ত এলাকায় যান। তিনি তাকে যে পথ দিয়ে গুম করে ভারতে নেওয়া হয়েছিল সেই স্থান পরিদর্শন করেন। এরপর গণমাধ্যমের সাথে আলাপকালে এসব কথা বলেন তিনি।
২০১৫ সালের ১০ মার্চ গুম হওয়ার ৬৩ দিন পর সালাহউদ্দিন আহমদকে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী শিলং শহরে পাওয়া যায়। আইনি জটিলতা ও মামলা মোকাবিলার কারণে তিনি প্রায় নয় বছর সেখানে অবস্থান করেন। দেশে ফেরার পথ সুগম হয় ২০২৪ সালের ৫ অগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর। ১১ আগস্ট তিনি দেশে ফেরেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গুমের ঘটনার তদন্ত করতে হাই কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের কমিশন গঠন করা হয়েছে।
দেশে ফেরার ১০ মাস পর ৩ জুন সালাহউদ্দিন আহমদ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে গুমের অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সাতজনের নাম উল্লেখ করা হয়।
এসব তথ্য জানিয়ে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, দলীয় কোনো কর্মসূচিতে নয়, সালাহউদ্দিন আহমদ আওয়ামী লীগ আমলে গুম হওয়ার ঘটনায় সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও গুম কমিশনের উদ্যোগে করা তথ্যচিত্রের শ্যুটিংয়ে অংশ নিতে এসেছেন। এ সময় তিনি ২০১৫ সালে তার গুম হওয়ার ঘটনার স্মৃতিচারণা করেন।
আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, সালাহউদ্দিন আহমদকে চোখ বেঁধে কাদামাটি দিয়ে হাঁটিয়ে নেওয়া হয়েছিল। এক পর্যায়ে তাকে সিঁড়ি বেয়ে উঠিয়ে কোনো এক উঁচু জায়গায় একটি বাড়িতে রাখা হয়েছিল। সেখানে ভারতীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা ইংরেজিতে ও হিন্দি ভাষায় কথা বলেছিলেন। সেই বিষয়গুলো তিনি বলেছেন।
সকালে বিমানবন্দরে সালাহউদ্দিন আহমদকে স্বাগত জানান বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদির, সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী, কেন্দ্রীয় সদস্য আবুল কাহের শামীম, বিএনপির সিলেট বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমেদ চৌধুরী, মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, যুক্তরাজ্য বিএনপি নেতা এম এ মালিক ও কামরুল হাসান চৌধুরী শাহীন।
সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, আওয়ামী সরকারের আমলে সিলেটের তামাবিল সীমান্তে গুম হওয়ার বিষয়ে একটি ডকুমেন্টারির শ্যুটিংয়ে তিনি সিলেটে এসেছিলেন। রাতে তিনি বিমানযোগে ঢাকায় ফিরেন।