ফসলের ক্ষেতে ধান গাছের শীষে আঁকা দেশের পতাকা

নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার রশিদপুর গ্রামের তরুণ কৃষক ইমরান হোসাইন তার কৃষি জমিতে ফুটিয়ে তুলেছেন দেশপ্রেমের এক অনন্য শিল্প। প্রায় ৪৫ শতক ধানের জমিতে তিনি চাষের মাধ্যমে এঁকেছেন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার এক জীবন্ত প্রতিরূপ। দূর থেকে দেখলে মনে হয়, সবুজ মাঠে লাল সূর্যের প্রতীক নিয়ে একটি বিশাল পতাকা বাতাসে উড়ছে, তবে সেটি কাপড় নয়- ধান গাছের শীষে আঁকা এক নিপুণ সৃষ্টি।
কৃষক ইমরান হোসাইনের কাছে কৃষি কেবল জীবিকা নয়, এটি দেশপ্রেম প্রকাশের মাধ্যম। এই ভাবনা থেকেই তিনি তার জমিতে পতাকার নকশা তৈরি করেন। পতাকার সবুজ অংশে ব্যবহার করা হয়েছে পাকিস্তানি লং বাসমতি ধানের চারা, আর মাঝের লাল সূর্যের প্রতীক ফুটিয়ে তোলার জন্য রোপণ করেছেন বেগুনি রঙের পারপোল রাইস।
ইমরান হোসাইন বলেন, দেশকে ভালোবাসা শুধু মুখের কথা নয়, কাজের মাধ্যমে প্রকাশ পেলে তা হৃদয়ে পৌঁছে যায়। এই জমি আমার কাছে শুধু ফসলের নয়, এটি আমার মাতৃভূমির প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার প্রতীক।
তার এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ বর্তমানে রশিদপুর গ্রামের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন ভিড় জমাচ্ছেন অসংখ্য দর্শনার্থী। তারা এই সৃজনশীল কৃষিশিল্পের ছবি তুলছেন, ভিডিও করছেন এবং সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। এর ফলে এলাকায় এক ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি হয়েছে, যেখানে কৃষি শুধু জীবিকার মাধ্যম নয়, সৃজনশীলতারও প্রকাশ।
গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কে এম রাফিউল ইসলাম জানান, ইমরানের এই কাজ দেশপ্রেমের পাশাপাশি কৃষি উদ্ভাবনেরও এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এমন উদ্যোগ তরুণ প্রজন্মকে কৃষির প্রতি আগ্রহী করবে এবং দেশপ্রেমের মূল্যবোধ ছড়িয়ে দেবে মাঠে, সমাজে ও মানুষের মনে। দেশপ্রেম, সৃজনশীলতা আর কৃষির অপূর্ব সমন্বয়ে ইমরান হোসাইন দেখিয়েছেন যে, ভালোবাসা প্রকাশের ভাষা শুধু কবিতা বা গানে সীমাবদ্ধ নয়- ধানের শীষেও ফুটে উঠতে পারে এক পতাকার গল্প, এক মাতৃভূমির প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি।