ভান্তির চরে আগাম মূলা চাষে কৃষকের মুখে হাসি

কুমিল্লা জেলার বুড়িচং উপজেলার গোমতী নদীর ভান্তির চরের সকালটা অন্যান্য দিনের মতোই কর্মচঞ্চল। এখন চোখে পড়ছে সাদা মূলার স্তূপ- কেউ জমি থেকে তুলছে, কেউ গোছাচ্ছে, কেউ আঁটি বেঁধে বাজারে পাঠানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। চরের প্রতিটি ধাপে যেন শীতের আগাম আনন্দ বয়ে আসছে।
ভান্তি গ্রামে ঘুরে দেখা যায়, নারী-পুরুষ সবাই এই মৌসুমের মূলা চাষের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন। কৃষক আব্দুল ওহাব ও ফারুক হোসেন জানান, বর্ষার শেষে শরৎকালের শুরুতেই তারা বীজ বুনেছিলেন। শীত এখনও দেরি থাকলেও মূলা তোলা শুরু হয়েছে। পাইকারেরা ক্ষেত থেকে কিনে নিচ্ছেন। প্রতি কেজি ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা মৌসুমে এর চেয়ে বেশি দাম পাওয়া যায় না। এতে কৃষকরা খুশি।
চরের পথে হাঁটতে হাঁটতে মনির হোসেনের ক্ষেত চোখে পড়ে। তিনি জানান, বেশিরভাগ কৃষকই পুরো জমির ফলন পাইকারদের কাছে বিক্রি করছেন। তিনি নিজে ২৪ শতাংশ জমির মূলা ৫৮ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। সব খরচ বাদ দিয়ে তার প্রায় ২০ হাজার টাকার মতো লাভ হয়েছে। তাদের চরের মূলা কুমিল্লার নিমসার বাজার হয়ে ঢাকাসহ দেশের নানা প্রান্তে যাচ্ছে।
চরের চারপাশের মাঠজুড়ে সবুজ পাতার মধ্যে সাদা মূলা এক অসাধারণ দৃশ্য তৈরি করেছে। তবে সব জমি সমান ভাগ্যবান নয়। যেসব জায়গায় পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা ভালো ছিল না, সাম্প্রতিক বৃষ্টির পানি জমে সেসব জমিতে ফলন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কৃষি কর্মকর্তারা দ্রুত মূলা তোলার পরামর্শ দিচ্ছেন, না হলে নিচের অংশ পচে যাবে। দ্রুত তোলার পর আবারও নতুন বীজ বুনে চাষ চালানো সম্ভব।
পাইকারি ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন ও জাকির হোসেন জানান, তারা পুরো মূলাক্ষেত কিনেছেন। ভান্তির চরে ৪৪ শতাংশ জমির মূলা তারা দেড় লাখ টাকায় কিনছেন। মূলা তোলার জন্য দিনাজপুর ও রংপুর থেকে শ্রমিক এনেছেন, যাদের প্রতিদিনের পারিশ্রমিক এক হাজার টাকা। বৃষ্টির কারণে কিছু ক্ষতি হলেও বাজারের দাম ভালো থাকায় মোট লাভের হিসাব এখনও স্পষ্ট না হলেও তারা আশাবাদী।
চরের মাটিতে সরেজমিনে দেখা যায়, মূলা তুলতে গিয়ে নারী-পুরুষ শ্রমিকরা সমানভাবে ব্যস্ত। কেউ ক্ষেত থেকে সরাসরি পাইকারের গাড়িতে লোড করছেন, কেউ আঁটি বেঁধে বাজারে পাঠাচ্ছেন। নারী শ্রমিকরা মূলা গোছানো ও বেঁধে রাখার কাজেও অংশ নিচ্ছেন। চরের এই দৃশ্য যেন একটি জীবন্ত ছবি- শ্রম, ব্যস্ততা, উৎসাহ এবং শীতের আগাম আনন্দের এক মিশ্রণ।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহকারী উপপরিচালক শেখ আজিজুর রহমান জানান, মৌসুমের শুরুতে দাম ভালো থাকায় কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। তারা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের পরামর্শ ও সহায়তা দিচ্ছেন। শীতের আগে মূলার সঙ্গে অন্যান্য শাকসবজি চাষও শুরু হয়েছে।