‘পরিবেশ আদালত আইন’ সংশোধনে পবাসহ ৮ সংগঠনের বিবৃতি

পরিবেশ আদালত আইনে নাগরিকদের সরাসরি মামলা করার অধিকার নেই। অপরদিকে পরিবেশ আইনে পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের প্রশাসনিক জরিমানার কোন সুযোগ নেই। ফলে একদিকে নাগরিক মামলা করতে পারছে না, আবার পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা অভিযোগ পেলেও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। দেশে ১৭ কোটি মানুষের জন্য মাত্র দুটি পরিবেশ আদালত। পরিবেশ রক্ষায় নানা আলোচনা হলেও, মৌলিক বিষয়ে কোন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) সহ আটটি সামাজিক সংগঠন ও সংস্থা সোমবার (১৩ অক্টোবর) সম্মিলিত বিবৃতিতে এ আহ্বান জানিয়েছে। অপর সংগঠনগুলো হলো সেন্টার ফর ল এন্ড পলিসি এফেয়ার্স, পাবলিক হেলথ লইয়ার্স নেটওয়ার্ক, বারসিক, ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং এন্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি), খিলগাঁও আবাসিক এলাকা পরিবেশ রক্ষা কমিটি (কেপিআরসি), ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট, নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম-নাসফ এবং আর্থ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন।
বিবৃতি আরও বলা হয়, ‘পরিবেশ আদালত আইন’ও ‘পরিবেশ সংরক্ষণ আইন’সংশোধন করা না হলে দেশের পরিবেশ রক্ষা সম্ভব হবে না। আইন দুটি সংশোধনের ক্ষেত্রে সামাজিক, রাজনৈতিক, ভৌগলিক ও মানুষের রীতিনীতি ঐতিহ্য বিষয়ক বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখতে হবে। পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে কর্তৃত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের প্রশাসনিক জরিমানা আদায়ের ক্ষমতা প্রদান, পরিবেশ রক্ষায় ফোর্স গঠন এবং পরিবেশ আদালত আইনে নাগরিকদের সরাসরি মামলা করার ক্ষমতা প্রদান করতে হবে।’
প্রেরিত বিবৃতিতে বলা হয়, ‘পরিবেশ সংরক্ষণ ও পরিবেশ আদালত আইন সংশোধন আজ একটি অতি জরুরি বিষয়। পরিবেশ আইনের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হলো পরিবেশ আদালত আইনে মামলা করা যায় না। বাংলাদেশে পরিবেশ রক্ষায় যে পরিমাণ রিট হয়েছে, কিন্তু তার চেয়ে কয়েকগুণ কম মামলা হয়েছে পরিবেশ আদালতে। এতেই প্রমাণিত হয় পরিবেশ আদালত আইনের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। বর্তমানে পরিবেশ দূষণের কারণে সবচেয়ে বেশি মানুষ রোগাক্রান্ত ও মারা যাচ্ছে। এমতাবস্থায় পরিবেশ আদালত আইনে সরাসরি মামলা দায়েরের অধিকার না থাকা, নাগরিক অধিকার হরণের সামিল। এটি এই আইনগুলোর একটি বড় দুর্বলতা, যার ফলে নাগরিক কাঙ্ক্ষিত প্রতিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এই দুর্বলতা দূর করা অতি জরুরি। আইনগুলো প্রণয়ন প্রক্রিয়ার সাথে জনগণ এবং পরিবেশ কর্মীদের সম্পৃক্ততা না থাকায় আইনগুলো যথাযথ জনবান্ধব হয়ে ওঠেনি।’
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, পরিবেশ আইন সংশোধনের পাশাপাশি টেকসই পরিবেশ উন্নয়ন নিশ্চিত করা সময়ের দাবি। পরিবেশ অধিদপ্তরের ওপর মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণ এবং রাজনৈতিক প্রভাব অধিদপ্তরের স্বাধীন কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করে। এই ধরনের নিয়ন্ত্রণ ও প্রভাব আইনের কার্যকর বাস্তবায়নকে ব্যবহৃত করে যা নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। পাশাপাশি পরিবেশ আদালতে পরিবেশ-বিশেষজ্ঞ এবং বিচারকদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হলে পরিবেশ আদালত পরিবেশ সুরক্ষায় আরো বেশি অবদান রাখতে পারবে। পরিবেশ দূষণের আশঙ্কার পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষমতা এবং ঘটনাস্থলে জরিমানা আরোপের ক্ষমতা প্রদান করা হলে পরিবেশ রক্ষা আইন আরো কার্যকর অবদান রাখতে পারবে। এছাড়া আইন সংশোধনের ক্ষেত্রে জনগণ এবং পরিবেশ কর্মীদের ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত করা এবং মতামত নেওয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
বিবৃতিতে সংশোধিত আইনে নিম্নোক্ত বিধানসমূহও সংযুক্ত করার সুপারিশ করা হয়- আইন প্রয়োগে পরিবেশ ফোর্স ইউনিট স্থাপন করতে আনসার বাহিনীর সদস্যদের ফোর্স হিসেবে সম্পৃক্ত করা, অভিযোগ নিষ্পত্তি বাধ্যতামূলক করা, পরিবেশ আদালতে মামলা দায়ের বিধান স্পষ্ট করা, ক্ষতিপূরণ ও শাস্তির পাশাপাশি তদন্ত চলাকালে বা অবস্থার প্রেক্ষিতে অভিযুক্তের ব্যাংক হিসাব স্থগিত, ইউিটিলিটি সার্ভিস বন্ধ করার ক্ষমতা প্রদান, পরিবেশদূষণকারীদের লাইসেন্স স্থগিত বা বাতিলের ক্ষমতা প্রদানের আহ্বান জানানো হয়।