সংবিধান সংশোধন করে পাকিস্তানে বাড়ানো হলো সেনাপ্রধানের ক্ষমতা
পাকিস্তানের সিনেট সদস্যরা শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) বিতর্কিত ২৭তম সংবিধান সংশোধনী বিলটির অনুমোদ দিয়েছে। সংবিধান সংশোধন করে এতে তড়িঘড়ি করে চারটি বিলের অনুমোদন দেওয়া হয়। এসব বিলের মধ্যে রয়েছে সামরিক আইনের পরিবর্তন ও চিফ অব আর্মি স্টাফ (সিওএএস) ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনীরের পদবী বাড়িয়ে চিফ অব দি ডিফেন্স ফোর্সেস (সিডিএফ) করা। খবর দি ডনের।
পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে আইনমন্ত্রী আজম নাজির তারারের ব্যাখ্যা অনুসারে চিফ অব ডিফেন্স স্টাফের পদে নিয়োগ পাওয়ার দিন থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর কার্যকর থাকবে।
জাতীয় পরিষদে বিলগুলো পাস হওয়ার পরদিন শুক্রবার সিনেটেও কোনো বিতর্ক ছাড়াই এবং কোনো ধরনের বিরোধিতার মুখে না পড়েই পাস হয় বিলগুলো।
পাকিস্তান আর্মি অ্যামেন্ডমেন্ট বিল-২০২৫ ছাড়াও যে বিলগুলো সিনেটে পাস হয় সেগুলো হলো পাকিস্তান এয়ারফোর্স অ্যামেন্ডমেন্ট বিল ২০২৫, পাকিস্তান নেভি অ্যামেন্ডমেন্ট বিল ২০২৫ এবং সুপ্রিম কোর্ট প্র্যাকটিস অ্যান্ড প্রসিডিউর অ্যামেন্ডমেন্ট বিল ২০২৫।
উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী খাজা আসিফ অধিবেশনে যোগ দেওয়ার আগ পর্যন্ত তার পক্ষ থেকে পাকিস্তান আর্মি অ্যামেন্ডমেন্ট বিল ২০২৫ এবং পাকিস্তান এয়ার ফোর্স অ্যামেন্ডমেন্ট বিল ২০২৫ পেশ করেন।
পরে খাজা আসিফ হাউসে পৌঁছানোর পর পাকিস্তান নেভি অ্যামেন্ডমেন্ট বিল ২০২৫ পেশ করেন। এরপর, সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী তারিক ফজল চৌধুরী আইনমন্ত্রী তারারের পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্ট প্র্যাকটিস অ্যান্ড প্রসিডিউর অ্যামেন্ডমেন্ট বিল ২০২৫ পেশ করেন।
ইসহাক দার বিলগুলি পেশ করার সময় ব্যাখ্যা করেন যে, বিলটিতে সংশ্লিষ্ট আইনে পরিবর্তন আনার কথা বলা হয়েছে, যা বৃহস্পতিবার আইনে পরিণত হওয়া ২৭তম সাংবিধানিক সংশোধনীর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
সংবিধানের এই সংশোধনী পাসের মাধ্যমে ফেডারেল সাংবিধানিক আদালত প্রতিষ্ঠা এবং সামরিক নেতৃত্বের কাঠামোয় পরিবর্তন আনার পথ প্রশস্ত করেছে। তবে বিরোধী দলগুলো এর তীব্র প্রতিবাদ ও সমালোচনা করেছে। পাশাপাশি সাবেক ও বর্তমান বিচারক সেই সাথে আইনজীবীরাও এই সংশোধনীর বিরোধিতা করেছেন। তারা বলছেন এই সংশোধনী সুপ্রিম কোর্টের ওপর প্রভাব বিস্তার করবে।
তবে সিনেটে বিরোধী দলের পক্ষ থেকে এসময় সামান্যই প্রতিরোধ দেখা গেছে।
আরও পড়ুন: বিবিসির বিরুদ্ধে ৫০০ কোটি ডলারের ক্ষতিপূরণ মামলা করবেন ট্রাম্প
সংবিধান সংশোধনীর আলোচিত বিষয়:
সেনাপ্রধানের কার্যকালের শুরু : পাকিস্তান সেনাবাহিনী আইন- ১৯৫২-এর ধারা ৮এ-তে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনীতে বলা হয়েছে যে, "তবে, পাকিস্তান প্রজাতন্ত্রের সংবিধানের ২৪৩ অনুচ্ছেদের ক্লজ ৪-এর প্যারাগ্রাফ (ক) এর অধীনে একই সঙ্গে প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান হিসেবে সেনাবাহিনী প্রধানের প্রথম নিয়োগের ক্ষেত্রে এই ধারার অধীনে কার্যকাল উক্ত পদের বিজ্ঞপ্তির তারিখ থেকে শুরু হবে।
জাতীয় কৌশলগত কমান্ডের কমান্ডার নিয়োগ: জাতীয় কৌশলগত কমান্ডের কমান্ডার নিয়োগ সংক্রান্ত আরেকটি সংশোধনীতে বলা হয়েছে, "প্রধানমন্ত্রী, সেনাবাহিনী প্রধানের সুপারিশক্রমে, যিনি একই সঙ্গে প্রতিরক্ষা বাহিনীরও প্রধান, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জেনারেলদের মধ্য থেকে তিন বছরের মেয়াদের জন্য জাতীয় কৌশলগত কমান্ডের কমান্ডার নিয়োগ করতে পারেন।"
পুনর্নিয়োগ ও মেয়াদ বৃদ্ধি: প্রস্তাবিত সংশোধনী প্রধানমন্ত্রীকে প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধানের সুপারিশের ভিত্তিতে "কমান্ডারকে... অতিরিক্ত তিন বছরের মেয়াদের জন্য পুনরায় নিয়োগ করার এবং/অথবা তিন বছর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানোর" ক্ষমতা দেয়।
নিয়োগের বৈধতা: এটি আরও বলে যে "জাতীয় কৌশলগত কমান্ডের কমান্ডারের নিয়োগ, পুনর্নিয়োগ বা মেয়াদ বৃদ্ধি, অথবা এই বিষয়ে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের বিবেচনামূলক ক্ষমতা প্রয়োগ, কোনো আদালতে বা কোনো যুক্তিতেই প্রশ্নবিদ্ধ করা যাবে না।"
আরও পড়ুন: ট্রাম্পের গাজা শান্তি পরিকল্পনায় জাতিসংঘে ভোট সোমবার
ভাইস চিফ বা ডেপুটি চিফকে ক্ষমতা প্রদান: আরেকটি সংশোধনীতে বলা হয়েছে যে, "ফেডারেল সরকার, সেনাবাহিনী প্রধানের সুপারিশক্রমে, যিনি একই সঙ্গে প্রতিরক্ষা বাহিনীরও প্রধান, এবং লিখিত আদেশ দ্বারা, ভাইস চিফ অফ দ্য আর্মি স্টাফ বা ডেপুটি চিফ অফ দ্য আর্মি স্টাফ হিসেবে নিযুক্ত কর্মকর্তাকে সেনাবাহিনী প্রধানের উপর ন্যস্ত এমন ক্ষমতা ও কার্যকারিতা প্রয়োগ ও সম্পাদনের জন্য অনুমোদন দিতে পারে যা নির্দিষ্ট করা হতে পারে।"

এনটিভি অনলাইন ডেস্ক