২১ বছরে এইচএসসিতে সর্বনিম্ন পাস, যা বললেন শিক্ষা উপদেষ্টা
দুই দশকের বেশি সময়ের মধ্যে এবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় সবচেয়ে কম পাসের হার রেকর্ড হয়েছে। সর্বশেষ ২০০৫ সালে এইচএসসিতে পাসের হার ছিল ৫৯.১৬ শতাংশ। এরপর থেকে কোনো বছর পাসের হার এর চেয়ে কমেনি।
কিন্তু চলতি বছর তাতে বড় ধাক্কা এসেছে। ২১ বছর পর এবার এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় ৫৮.৮৩ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। গত বছরের তুলনায় পাসের হার কমেছে ১৮.৯৫ শতাংশ।
আজ বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) সকাল ১০টায় একযোগে ৯টি সাধারণ বোর্ড, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের উচ্চমাধ্যমিক, আলিম (ভোকেশনাল, বিএম, ডিপ্লোমা ইন কমার্স) পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়।
এ বিষয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সি আর আবরার আজ সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা তাদের প্রাপ্য নম্বরই পেয়েছে। তিনি বলেন, এখন থেকে ছাত্রছাত্রীরা যেটুকু খাতায় লিখবে, তার ভিত্তিতেই প্রকৃত নম্বর দেওয়া হবে। কাউকে বাড়িয়ে বা কমিয়ে দেওয়া হবে না।
শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, শিক্ষার্থীদের প্রকৃত মূল্যায়নই শিক্ষা বোর্ডগুলোর মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। ফলাফল মানে শুধু পরিসংখ্যান নয়, এটি পরিবারের আশা, পরিশ্রম ও শিক্ষার্থীর ভবিষ্যতের গল্প।
ড. আবরার জানান, এ বছর এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল অনেককেই বিস্মিত করেছে। পাশের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় কম। এর উত্তর জটিল নয় অস্বস্তিকর।
তিনি বলেন, দেশের শিক্ষার মূল সংকট প্রাথমিক স্তর থেকেই শুরু হয়। সেই ঘাটতি বছরের পর বছর জমা হয়। দীর্ঘদিন আমরা সেই বাস্তবতার মুখোমুখি হইনি। আমরা এমন এক সংস্কৃতি গড়ে তুলেছি যেখানে সংখ্যাই সত্য হয়ে উঠেছে। পাশের হার সেখানে সাফল্যের প্রতীক আর জিপিএ-৫ এর সংখ্যা তৃপ্তির মানদণ্ড।
তিনি বলেন, ভালো ফলাফল দেখাতে গিয়ে আমরা অজান্তেই শেখার প্রকৃত সংকট আড়াল করেছি। সেই সংস্কৃতির পরিবর্তন চাই। আমি চাই, শিক্ষা ব্যবস্থা আবারও বাস্তবতাকে প্রতিফলিত করুক।
উপদেষ্টা বলেন, সকল শিক্ষা বোর্ডকে নির্দেশ দিয়েছি— ভবিষ্যতে বিশেষ করে এইচএসসি পরীক্ষার মূল্যায়নে, সীমান্তরেখায় থাকা শিক্ষার্থীদের প্রতি সর্বোচ্চ ন্যায্যতা বজায় রাখতে। একই সঙ্গে ফলাফলের বাস্তবতা বিকৃত যেন না হয় তা খেয়াল রাখতে।
তিনি আরও বলেন, আমরা ‘অতিরিক্ত নম্বর দিয়ে সন্তুষ্টি’ নয়, বরং ‘ন্যায্য নম্বর দিয়ে সততা’কে বেছে নিয়েছি। সাহস করে বাস্তবতা স্বীকার না করলে মেধাবী ও আগামী প্রজন্মের প্রতি অন্যায় হবে।
উপদেষ্টা বলেন, প্রতিটি শিক্ষা বোর্ডকে তাদের মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার স্বতন্ত্র পর্যালোচনা প্রতিবেদন তৈরি করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি শিক্ষাবিদ, গবেষক ও নীতিনির্ধারকদের নিয়ে বিশেষজ্ঞ প্যানেল গঠন করেছি। তারা তথ্য বিশ্লেষণ করে শেখার মূল ঘাটতিগুলো চিহ্নিত করবে।