মোবাইলফোনে অর্ডার, অনলাইনে অগ্রিম পেমেন্টে নিষিদ্ধ ইলিশের হোম ডেলিভারি

সরকার ঘোষিত ইলিশ প্রজনন মৌসুমের ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পটুয়াখালীর বাউফলে তেঁতুলিয়া নদীতে ডিমওয়ালা মা ইলিশ নিধন উৎসবে মেতে উঠেছে এক শ্রেণির অসাধু জেলে। স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের নেতাদের ছত্রছায়ায় এই অবৈধ কার্যক্রম চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয়, ইলিশ বেচা-কেনার ধরনেও এসেছে নতুনত্ব- মোবাইলফোনে অর্ডার নিয়ে বিকাশে অগ্রিম পেমেন্ট নিশ্চিত হলেই হচ্ছে হোম ডেলিভারি।
নিষেধাজ্ঞার সুযোগ নিয়ে মৌসুমী ব্যবসায়ী ও দালালরা ইলিশ বিক্রির নতুন কৌশল অবলম্বন করেছে। ক্রেতারা চিহ্নিত দালালদের কাছে ফোন করে ইলিশের অর্ডার দেন। ইলিশের দাম বিকাশে পরিশোধ হওয়ার পরই ব্যবসায়ীরা মাছ ক্রেতার নির্দিষ্ট ঠিকানায় পৌঁছে দিচ্ছেন। অন্যদিকে, উপজেলার দুর্গম এলাকা চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের খানকা, চর ব্যারেট, বাতিরখাল ও রায়সাহেব এলাকায় দিনের আলোয় প্রকাশ্যেই চলছে ইলিশের বেচাকেনা। তবে কালাইয়া ইউনিয়নের শৌলা ও ধুলিয়া লঞ্চঘাট এলাকায় কাক ডাকা ভোর ও মধ্যরাতে চলে এই কেনাবেচা।
তেঁতুলিয়া নদীর ধুলিয়া লঞ্চঘাট, নিমদী লঞ্চঘাট, চর কালাইয়া, শৌলা, বাতিরখাল, খানকা, চরমিয়াজান, চরব্যারেট ও রায় সাহেব এলাকায় অসাধু জেলেরা সংঘবদ্ধ হয়ে ইলিশ নিধনে নামছে। স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতারা এদের সাহস ও শক্তি যোগান দিচ্ছে বলে জানা যায়।
নদী সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা রূপম ও রফিক বয়াতি আক্ষেপ করে জানান, প্রকাশ্যেই মাছ ধরা ও বিক্রি চলছে, যা দেখে মনে হচ্ছে নিষেধাজ্ঞা বলে কিছু নেই। তাদের অভিযোগ, প্রশাসনের ঢিলেঢালা অভিযানের কারণেই ইলিশ নিধন সম্ভব হচ্ছে।
উপজেলা মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বিগত বছরগুলোর তুলনায় এ বছর নিষেধাজ্ঞা অমান্য করার প্রবণতা বেশি। প্রকৃত জেলেদের পাশাপাশি মৌসুমি জেলে ও ভিন্ন পেশার মানুষ সংঘবদ্ধ হয়ে নদীতে নামছে। প্রশাসন অভিযান পরিচালনা করতে গেলে তারা পাল্টা হামলা চালাচ্ছে। ইতোমধ্যে দুইবার নৌপুলিশ ও মৎস্য বিভাগের অভিযানে হামলা হয়েছে। জেলেদের ইট-পাটকেলে নৌ পুলিশের স্পিডবোট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং নৌ সদস্যদের পিছু হটতে হয়েছে।
উপজেলা মৎস্য বিভাগ জানায়, গত ৪ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ২২ দিনের এই নিষেধাজ্ঞা চলবে আগামী ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত। নিষেধাজ্ঞা সফল করতে সম্মিলিতভাবে ৯৯টি অভিযান পরিচালনা করে ৮০ জনকে গ্রেপ্তার এবং চার লাখ মিটার জাল জব্দ করা হয়েছে।
তবে অভিযানে থাকা একাধিক সদস্য অভিযোগ করেছেন, যেসব ট্রলার ও স্পিড বোটে করে অভিযান চলে, সেগুলোর চালক ও শ্রমিকদের সঙ্গে অসাধু জেলেদের যোগাযোগ থাকে। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে তারা অভিযানের তথ্য আগেভাগেই জেলেদের কাছে ফাঁস করে দেয়। এমনকি এই চালক ও শ্রমিকদের বিরুদ্ধে অবৈধ ইলিশ এবং জব্দ করা জাল বিক্রি করে দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা এমএম পারভেজ বলেন, নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে মৎস্য বিভাগ কঠোর অবস্থানে আছে। তবে তেঁতুলিয়া নদী বড় হওয়ায় এবং জনবল কম থাকায় অভিযান চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। নিজস্ব পরিবহণ না থাকায় ভাড়ায় চালিত ট্রলার ও স্পিড বোট ব্যবহার করতে হচ্ছে; যার ফলে বাইরের লোকের মাধ্যমে তথ্য ফাঁস হচ্ছে। নিজস্ব পরিবহণ ও জনবল থাকলে এমন সমস্যা হতো না। তা সত্ত্বেও তারা নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে জোরদারভাবে কাজ করছেন।