আমন আবাদে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়াল নাটোর, বাম্পার ফলনের হাতছানি
চলতি খরিপ-২ মৌসুমে নাটোর জেলায় রোপা আমন ধানের আবাদে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। ৭৬ হাজার ৮৮৫ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে জেলায় মোট ৭৬ হাজার ৯৯৭ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ করা হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১১২ হেক্টর বেশি। দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ ও সদ্য সোনালী বর্ণ ধারণ করা ধানের সমারোহ এখন জেলার সমৃদ্ধির জানান দিচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রোপা আমনের মোট ৭৬ হাজার ৯৯৭ হেক্টর আবাদী জমির মধ্যে সর্বোচ্চ আবাদ হয়েছে চলনবিল অধ্যুষিত সিংড়া উপজেলায় (২৩ হাজার ৬০০ হেক্টর)। অন্যান্য উপজেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে- বড়াইগ্রাম (১৬ হাজার ৭৫৪ হেক্টর), নাটোর সদর (১০ হাজার ৬১০ হেক্টর), লালপুর (৯ হাজার ১৮৫ হেক্টর), গুরুদাসপুর (৬ হাজার ৭৮০ হেক্টর), বাগাতিপাড়া (৬ হাজার ৩৭৩ হেক্টর) এবং নলডাঙ্গা (৩ হাজার ৬৯৫ হেক্টর)।
আবাদী জমির মধ্যে ৭০ হাজার ৬৪৬ হেক্টরে উচ্চ ফলনশীল (উফশী) জাতের ধান চাষ করা হয়েছে। এছাড়া, ৫ হাজার ৭৪৬ হেক্টরে হাইব্রিড এবং ৬০৫ হেক্টরে স্থানীয় জাতের আমন ধান চাষ করা হয়েছে।
কৃষকদের উৎসাহিত করতে রাজস্ব খাত এবং বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় জেলায় প্রদর্শনী খামার স্থাপন করা হয়েছে। রাজস্ব খাতের আওতায় ২০২ জন এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ছয়জন কৃষককে তাদের এক বিঘা জমিতে বীজ ও সার সরবরাহ করা হয়েছে। পার্টনার প্রকল্পের আওতায়ও ১৬ জন কৃষকের দুই একর জমিতে প্রদর্শনী খামার স্থাপন করা হয়েছে। এসব প্রদর্শনী খামারে কৃষকবৃন্দ ব্রি-৯০, বিনা-২৬ ছাড়াও ব্রি-১০৩ এর মতো প্রায় নতুন উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল জাতের ধানের উৎপাদন প্রক্রিয়া নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পারছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রাস্তার দুই ধারে, বিলের মধ্যে এখন সবুজের সমারোহ। আগাম জাতের ধানের ক্ষেত সোনালী বর্ণ ধারণ করে ধানের ভারে নুইয়ে পড়েছে, যা আগামী দুই সপ্তাহ পর কাটা শুরু হবে। কৃষি বিভাগ আশা করছে, চলতি মৌসুমে ধানের ফলন চার লাখ টন ছাড়িয়ে যাবে।
তবে হালতি বিল অধ্যুষিত বাশিলা এলাকার কৃষক এম আরিফুল ইসলাম জানান, তার পাঁচ বিঘা জমির মধ্যে তিন বিঘাই পানিতে ডুবে বিনষ্ট হয়েছে। নাটোর সদর উপজেলার আদর্শ কৃষক আহমেদুল কবীর উঁচু জমিতে আগাম হাইব্রিড ও শম্পাকাটারি ধান আবাদ করে আগামী সপ্তাহেই ধান কাটার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। চলনবিল অধ্যুষিত সিংড়া উপজেলার আদর্শ কৃষক জুলফিকার আনাম তারা সতের বিঘা জমিতে সুগন্ধি ধান চাষ করেছেন এবং অনুকূল আবহাওয়ায় ভালো ফলনের আশা করছেন।
সিংড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা খন্দকার ফরিদ হাসান জানান, সমৃদ্ধ ফলনের জন্য কৃষি বিভাগ কাজ করছে এবং উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তাবৃন্দ ব্লকগুলোতে গিয়ে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।
নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো. হাবিবুল ইসলাম খান বলেন, উন্নত জাতের বীজের প্রচলন, সহজলভ্যতা এবং ধানের চড়া দামের কারণে কৃষকরা আমন ধানের আবাদ বাড়িয়েছেন। প্রত্যাশিত ফলন পেতে কৃষি বিভাগ নিয়মিত মাঠ পর্যবেক্ষণ করছে। আশা করি, এবারের ফলন হবে আশাতীত।

বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)