৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ, ব্যাংক কর্মকর্তা কারাগারে
পাবনার বনগ্রাম বাজার শাখায় ৩০ জন গ্রাহকের নামে ৭ কোটি ৮২ লাখ ৮৫ হাজার ৮০৪ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে জনতা ব্যাংকের এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বুধবার (৫ নভেম্বর) বিকেলে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, পাবনার সহকারী পরিচালক মোমিন উদ্দিন বাদী হয়ে জনতা ব্যাংক পিএলসি বনগ্রাম বাজার শাখার ম্যানেজার মো. হেমায়েত করিমকে (৪২) একমাত্র আসামি করে এই মামলা করেন। অভিযুক্ত হেমায়েত করিম পাবনা জেলার ফরিদপুর উপজেলার আমলাপাড়ার বাসিন্দা।
জেলা দুর্নীতি দমন কমিশন পাবনার উপ-পরিচালক মো. শহিদুল ইসলাম সরকার মামলার সত্যতা স্বীকার করে জানান, প্রথমে আতাইকুলা থানায় অভিযোগ দেওয়া হলে পুলিশ কর্তৃপক্ষ দুর্নীতি বিষয়ক হওয়ায় তা জেলা দুর্নীতি দমন কমিশনে প্রেরণ করে। পরে দুদকের কেন্দ্রীয় অনুমোদন পাওয়ায় বুধবার দুদকের আইনে এই মামলা দায়ের করা হয়।
ব্যাংক সূত্র ও অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, জনতা ব্যাংকের বনগ্রাম শাখার প্রিন্সিপাল অফিসার হেমায়েত করিম দীর্ঘদিন ধরে কৌশলে ৩০ গ্রাহকের পৌনে আট কোটি টাকা ব্যাংক হিসাবে জমা না করে আত্মসাৎ করেন। গত ১৫ অক্টোবর বনগ্রামের ব্যবসায়ী সাগরদারি গ্রামের আব্দুস সালাম ব্যাপারী টাকা তুলতে গেলে দেখেন তার হিসাবে কোনো টাকা নেই। হিসাব রক্ষকের সঙ্গে তার বাকবিতণ্ডা হয়। তার ডাক-চিৎকারে আশপাশের ব্যবসায়ী-গ্রাহকরা ব্যাংকে জড়ো হন এবং নিজেদের হিসাব নম্বর চেক করে জানতে পারেন প্রায় গ্রাহকেরই জমা রাখা টাকার স্থিতি কম।
ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের অভিযোগ অনুযায়ী, ব্যবসায়ী সালাম ব্যাপারীর ৪১ লাখ টাকা হিসাব থেকে গায়েব হয়েছে। এ ছাড়া খালইভড়া গ্রামের শাপলা খাতুনের ১৬ লাখ টাকা জমা রশিদ দিলেও তা হিসাবে জমা হয়নি। ক্ষেতুপাড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মুনসুর আলম পিন্টুর হিসাব থেকে ১০ লাখ টাকা উধাও হয়ে গেছে। বনগ্রামের আব্দুল মতিনের ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, রাজাপুর গ্রামের হযরত আলীর ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং বহলবাড়ীয়া গ্রামের আবু জাফরের ৫ লাখ টাকাসহ ৩০ জন গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ হয়েছে। সাগরদারি গ্রামের সালাম ব্যাপারী এ নিয়ে টাকার শোকে অসুস্থ হয়ে পড়ার কথা জানান।
বিষয়টি ব্যাংকের পাবনার জেলা কার্যালয়কে জানালে তারা এসে ঘটনার সত্যতা পান এবং অভিযুক্ত হেমায়েত করিমকে পুলিশ হেফাজতে দেন। গত ১৬ অক্টোবর ব্যাংকটির বনগ্রাম শাখার নতুন ব্যবস্থাপক হিসেবে মো. ফরিদুজ্জামানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ওই দিনই ব্যবস্থাপক ফরিদুজ্জামান বাদী হয়ে আতাইকুলা থানায় হেমায়েত করিমের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, অভিযুক্ত হেমায়েত করিমকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। পুলিশ গত ১৯ অক্টোবর হেমায়েত করিমকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়। তিনি বর্তমানে জেল হাজতে আছেন।
বনগ্রাম জনতা ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক ফরিদুজ্জামান জানান, গ্রাহকদের থেকে অভিযোগ গ্রহণ করা হচ্ছে এবং বিভাগীয় তদন্ত চলছে।

এ বি এম ফজলুর রহমান, পাবনা