নওগাঁয় বেড়েছে মশার প্রকোপ, ডেঙ্গু আতঙ্কে পৌরবাসী
নওগাঁ পৌরসভায় মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে পৌরবাসী। বাসা-বাড়ি, শিক্ষা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, অফিসসহ বিভিন্ন স্থানে মশার আক্রমণ থেকে রক্ষা পাচ্ছে না কেউই। মশার কয়েল, ধোঁয়া ও স্প্রে সব কিছুই যেন মশার কাছে হার মানছে। ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করেও যেন রেহাই নেই। এতে বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। আতঙ্কে রয়েছে পৌরবাসী।
পৌরবাসীর অভিযোগ- পৌরকর বাড়ানো হলেও পৌর সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত তারা। মশা নিধনে পৌর প্রশাসনিক এলাকাগুলোতেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়ে থাকে। জনবহুল এলাকাগুলোতে কোনো গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না বলেও অভিযোগ তাদের।
জেলা সিভিল সার্জন অফিসের তথ্যমতে, ২৩ নভেম্বরে এ পর্যন্ত ৫৬ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। অক্টোবরে ১২০ এবং সেপ্টেম্বর ১১৬ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। চলতি বছর এ পর্যন্ত ৩২১ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে।
নওগাঁ পৌরসভাটি প্রথম শ্রেণিভুক্ত। ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত পৌরসভার জনসংখ্যা প্রায় দুই লাখ ৬৮ হাজারের অধিক।
পৌরসভায় যত্রতত্র ময়লার স্তূপ। বেশিরভাগ ড্রেনে নেই ঢাকনা। এতে আর্বজনার চাপে ড্রেনের পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। আর্বজনায় মশা ও মাছি জন্ম নেয়। নিয়মতি ড্রেন পরিষ্কার না করা এবং যত্রতত্র আবর্জনার কারণে মশার উৎপাত বেড়েই চলেছে। পৌরসভার মশক নিধন কার্যক্রম না থাকায় মশার উপদ্রব চরমে। মশার উপদ্রব এমন ভাবে বেড়েছে যে ছাত্র-ছাত্রীরা ঠিকমতো পড়াশোনা করতে পারছে না। সন্ধ্যার আগেই ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করেও রক্ষা পাওয়া যাচ্ছে না। মশা কামড়ানোর পর সেই স্থানে ফুলে যন্ত্রণা করে।
শহরের মাস্টারপাড়ার বাসিন্দা শামিম আহমেদ বলেন- সন্ধ্যার আগেই ঘরের দরজা জানালা বন্ধ করতে হয়। তার পরও রেহাই নেই। কয়েল জ্বালিয়ে রাখতে হয়। এমন অবস্থা যে কয়েলের ওপরও মশা ঘুরাঘুরি করে। দিনেও কয়েল জ্বালিয়ে রাখতে হয়। আর মশা যেখানে কামড়ায় সেখানে জ্বালা যন্ত্রণা করে এবং ফুলে উঠে। কয়েল কিনতে প্রতিদিন ১০ টাকা খরচ হয়। যদি এমন অবস্থা চলতে থাকে তাহলে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা আছে।
শহরের ডিগ্রি কলেজ মোড় এলাকার শিক্ষার্থী আরিফ হোসেন বলেন, মশার উপদ্রব এতই বেড়েছে যে ঠিকমতো পড়াশোনা করা যায়। কয়েল জ্বালিয়ে মশারির ভিতরে পড়তে হচ্ছে।
শহরের কোমাইগাড়ী মহল্লার আসফাক উদ্দিন বলেন, বাসা থেকে কিছু দূরে পৌরসভার ময়লার ভাগাড়। এ এলাকায় মশা নিধনের তেমন একটা কার্যক্রম চোখে পড়ে না। পৌরসভার নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় মশক নিধনের কার্যক্রম পরিচালনা করা হলেও বাকি এলাকাগুলোতে তেমন কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয় না। বছর বছর বাড়ানো হয় পৌরকর। অথচ সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত পৌরবাসী।
পৌর প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন বলেন- মশক নিধনের জন্য তিনটি ফগার মেশিন ও তিনটি হ্যান্ড স্প্রে মেশিন আছে। দুই বছর ধরে পৌরসভায় মশক নিধনের বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। বাধ্য হয়ে পৌর রাজস্ব আয় থেকে মশক নিধনের কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। পৌরসভার প্রতিটি মহল্লায় পর্যায়ক্রমে মশক নিধনের কাজ করা হয়। তবে ফগার মেশিনের চেয়ে হ্যান্ড স্প্রে মেশিনে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। হ্যান্ড স্প্রে দিয়ে মশার লাভা ধ্বংস করা হচ্ছে।
২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের পরিসংখ্যানবিদ দিলরুবা সুলতানা বলেন, গত তিন মাসে আমাদের হাসপাতালে মোট ১২০ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিয়েছে। কোনো প্রাণহানি ঘটেনি। হাসপাতাল থেকে তাদের পর্যাপ্ত চিকিৎসা ও পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, গত তিন মাসে পুরো জেলায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিল ৩২১ জন। মৃত্যুর মতো ঘটনা ঘটেনি। আমাদের আরও সচেতন ও সতর্ক থাকতে হবে। আমরা জেলাবাসীকে নানা সচেতনতামূলক পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।
ডা. মো. আমিনুল ইসলাম আরও বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তিকে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে। কোনো অবস্থাতেই কেউ যেন অবহেলা করে ঘরে বসে না থাকে। যেকোনো ধরনের জ্বর হোক না কেন, সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

আসাদুর রহমান জয়, নওগাঁ