আবেদন না করেও পূর্বাচলে প্লট পান জয়
কারও কাছে প্লটের আবেদন করেননি। ক্ষমতাশালী মা শেখ হাসিনার কাছেও বোন সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের মতো প্লটের আবদার করেননি। তবু ‘মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি’র মতো সজীব ওয়াজেদ জয়ও পূর্বাচলের কূটনৈতিক এলাকায় পেয়েছেন ১০ কাঠার প্লট। এই প্লট বরাদ্দে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করা হয়নি, মানা হয়নি রাজউকের আইন। হলফনামায়ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্লটটি নিজের নামে রেজিস্ট্রি করে দখলে নিয়েছেন।
আরও পড়ুন : শেখ হাসিনার লকারে পাওয়া গেল ৮৩২ ভরি স্বর্ণ
চলতি বছরের ২৪ মার্চ দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আদালতে প্লট দুর্নীতি মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করে। এ তথ্য উঠে আসে অভিযোগপত্রে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) আলোচিত প্লট দুর্নীতির ছয়টি মামলার মধ্যে শেখ হাসিনা, সজীব ওয়াজেদ জয়, সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বিরুদ্ধে তিনটি মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য্য করা হয়েছে। ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন এ রায় ঘোষণা করবেন। শেখ রেহানা, রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ও আজমিনা সিদ্দিকের বিরুদ্ধে অপর তিনটি মামলায় রায় ঘোষণার দিন ধার্য্য হয়েছে আগামী সোমবার (১ ডিসেম্বর)। প্লট বরাদ্দ পাওয়া এই ছয়জন ছাড়াও মোট ৪৭ জনকে এই ছয়টি মামলায় আসামি করা হয়েছে। রাজউকের কর্মকর্তা মোহাম্মদ খুরশীদ আলম ছাড়া বাকি সব আসামি বর্তমানে পলাতক।
আরও পড়ুন : শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় কার্যকরে বড় বাধা ভারত?
এর আগে গত ১৪ জানুয়ারি রাজধানীর পূর্বাচলে ১০ কাঠার প্লট জালিয়াতির ঘটনায় দুদক-এর সহকারী পরিচালক এস এম রাশেদুল হাসান বাদী হয়ে সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয়, শেখ হাসিনাসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। তদন্ত শেষে গত ২৩ মার্চ জয়, শেখ হাসিনাসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক এস এম রাশেদুল হাসান।
আরও পড়ুন : যে কারণে শেখ হাসিনা আপিল করতে পারবেন না
অভিযোগপত্রে তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, সজীব ওয়াজেদ জয়ের এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের মালিকানায় ঢাকা শহরের রাজউকের এখতিয়ারাধীন এলাকায় বাড়ি বা ফ্ল্যাট বা আবাসন রয়েছে। তবুও জয় হলফনামায় সেই তথ্য গোপন করেন। এর মাধ্যমে তিনি পূর্বাচল নতুন শহর আবাসন প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ সংক্রান্ত আইন, বিধি ও নীতিমালা ও আইনানুগ পদ্ধতি লঙ্ঘন করেন। তিনি তাঁর মা শেখ হাসিনার ক্ষমতার অপব্যবহার করে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীগণের যোগসাজশে প্লট বরাদ্দ দেন এবং তা রেজিস্ট্রি করেন।
আরও পড়ুন : শেখ হাসিনা-কামালের সম্পদ বাজেয়াপ্তের নির্দেশ
অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়েছে, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) বিভিন্ন স্কিমে প্লট বরাদ্দ কার্যক্রম বর্ণিত বিধিমালায় প্রতিপালন সাপেক্ষে পরিচালিত ও বাস্তবায়িত হয়। পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প রাজউক পরিচালিত ও বাস্তবায়িত একটি প্রকল্প বিধায় এই প্রকল্পটির প্লট বরাদ্দের ক্ষেত্রে বিধি-৩ এর বিধান মানতে হবে।
অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে প্লট বরাদ্দের জন্য ২০০৮ সালে বিভিন্ন তারিখে রাজউক বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে দরখাস্ত আহ্বান করে। রাজউক থেকে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে প্লট বরাদ্দের প্রসপেক্টাস প্রকাশিত হয় ২০০৮ সালে। ওই প্রসপেক্টাস পর্যালোচনায় দেখা যায়, পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে আবাসিক প্লট প্রাপ্তির জন্য আগ্রহী বাংলাদেশি নাগরিকদের রাজউকের নির্ধারিত আবেদন ফরমে ২০০৮ সালের ১৮ ডিসেম্বরের মধ্যে আবেদন করতে হবে।
আরও পড়ুন : আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে শেখ হাসিনার রায়
কিন্তু সজীব ওয়াজেদ জয় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ও নির্ধারিত ফরমে আবেদন করেননি। রাজউকের বিধান লঙ্ঘন করে শেখ হাসিনা নিজে এবং তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় উভয়ে লাভবান হওয়ার হীন উদ্দেশ্যে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিবকে সরকারের সংরক্ষিত কোটায় পূর্বাচলে ১০ কাঠা আয়তনের একটি প্লট বরাদ্দের বিষয়ে নির্দেশনা দেন।
অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, রাজউকের বিধি-৬ পর্যালোচনায় দেখা যায়, যথাযথভাবে প্রাপ্ত সব আবেদন প্লটের আকার অনুসারে একটি রেজিস্ট্রারে লিপিবদ্ধ করতে হয়। কিন্তু জয়কে বরাদ্দ করা প্লটটির তথ্য রাজউকের কোন রেজিস্ট্রারে লিপিবদ্ধ হয়নি।
আরও পড়ুন : রায় ঘোষণার সময় তাসবিহ পড়ছিলেন সাবেক আইজিপি মামুন
অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়েছে, আবেদনকারীকে প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট স্বাক্ষরিত একটি হলফনামা দাখিল করতে হয়। এতে তিনি বা তার নির্ভরশীল কেউ আগে কোনো আবাসিক প্লট বরাদ্দ পাননি উল্লেখ করে অঙ্গীকার করতে হয়। কিন্তু আসামি শেখ হাসিনা রাজউকের এখতিয়ারাধীন এলাকায় ৫৪ সুধা সদন, রোড নং ৫, ধানমণ্ডি আবাসিক এলাকা তাঁর বর্তমান ঠিকানা হিসেবে উল্লেখ করেন। আসামি সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয় তাঁর আয়কর রিটার্নে অকৃষি সম্পত্তির তালিকায় তার মালিকানায় ৫৪ সুধা সদন, ধানমণ্ডির বাড়িটির কথা উল্লেখ করেন। তাছাড়া শেখ হাসিনার নামেও পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ১০ কাঠার প্লট বরাদ্দ প্রদান করা হয় এবং তিনি তা নিজ নামে রেজিস্ট্রি করে ভোগ দখলে রেখেছেন। শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, বোন শেখ রেহানা, বোনের মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক ও বোনের ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববির নামেও রাজউকের এখতিয়ারভুক্ত ঢাকাসহ শহরতলীতে রাজউক হতে বরাদ্দকৃত প্লট এবং নিজেদের ক্রয় করা বাড়ি রয়েছে। এ কারণে আসামিরা নিজেদের ক্ষমতার অপব্যবহার করে অপরাধ করেছেন।
আরও পড়ুন : শেখ হাসিনার রায় ঘিরে ভারতের প্রতিক্রিয়া
সজীব ওয়াজেদ জয় পূর্বাচলের প্লটটি নিজ নামে রেজিস্ট্রি করে দণ্ডবিধির ৪০৯, ৪২০, ১০৯ ধারাসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
আরও পড়ুন : রায় পড়ার সময় শেখ হাসিনার সেই বক্তব্যে উত্তেজনা
সজীব ওয়াজেদ জয় ছাড়াও মামলার অপর আসামিরা হলেন শেখ হাসিনা, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) কাজী ওয়াছি উদ্দিন, সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞা, রাউজকের সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, রাউজকের সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) তন্ময় দাস, রাউজকের সাবেক সদস্য পরিকল্পনা মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন, রাউজকের সাবেক সদস্য (উন্নয়ন) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী, রাজউকের সাবেক সহকারী পরিচালক মাজহারুল ইসলাম, রাউজকের উপপরিচালক নায়েব আলী শরীফ, এস্টেট ও ভূমি-৩ এর পরিচালক কামরুল ইসলাম, রাজউকের সাবেক সদস্য (এস্টেড ও ভূমি) মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন, সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শামছুল হক।

নিজস্ব প্রতিবেদক