অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহারের কারণে বাড়ছে মৃত্যু : ডা. আবু নাসের
বাংলাদেশ মেডিকেল ইউনিভার্সিটি মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড ইমিউনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আবু নাসের ইবনে সাত্তার বলেছেন, আইসিইউ ভর্তি থেকে শুরু করে মৃত্যু এ সবই বাড়ছে অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহারের কারণে। তাই আজ আমাদের সংকল্প নিতে হবে, অ্যান্টিবায়োটিক সচেতনভাবে ব্যবহার করব, নিজের নয়, ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনেই ওষুধ নেব।
বাংলাদেশ মেডিকেল ইউনিভার্সিটিতে (বিএমইউ) বিশ্ব অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল সচেতনতা সপ্তাহ ২০২৫ উপলক্ষে আজ সোমবার (৮ ডিসেম্বর) অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্টেন্স রিপোর্ট ২০২৪-২০২৫ প্রকাশ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানের সভাপতি মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড ইমিউনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আবু নাসের ইবনে সাত্তার বলেন, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (এএমআর), যা বর্তমানে বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্যের সবচেয়ে বড় হুমকিগুলোর একটি। অযথা অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার, নিজে নিজে ওষুধ খাওয়া, অসম্পূর্ণ ডোজ, এবং প্রাণিসম্পদে অ্যান্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত ব্যবহার এসব কারণে জীবাণুগুলো ধীরে ধীরে ওষুধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী হয়ে উঠছে। এএমআর এর ফলে যে রোগ আগে সহজে ভালো হয়ে যেত, এখন সেই রোগও চিকিৎসা করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। সাধারণ সংক্রমণ জটিল হয়ে যায়, চিকিৎসার খরচ বেড়ে যায়, আইসিইউ ভর্তি থেকে শুরু করে মৃত্যু এ সবই বাড়ছে অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহারের কারণে। তাই আজ আমাদের সংকল্প হতে হবে, অ্যান্টিবায়োটিক সচেতনভাবে ব্যবহার করব, নিজের নয়, ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনেই ওষুধ নেব। হাত ধোয়া, টিকাদান, নিরাপদ খাদ্য, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং সঠিক সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ এ সবই অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স প্রতিরোধে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সবাই যদি দায়িত্বশীল হই, তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একটি নিরাপদ স্বাস্থ্যব্যবস্থা উপহার দিতে পারব।
অনুষ্ঠানে প্রকাশিত রিপোর্টে দেখা যায় বাংলাদেশ মেডিকেল ইউনিভার্সিটিতে (বিএমইউ) গত এক বছরে মাইক্রোবায়োলজি ও ইমিউনোলজি বিভাগের উদ্যোগে বিভিন্ন রোগীর ৪৬ হাজার ২৭৯টি নমুনা বিশ্লেষণ করা হয়। যেখানে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাকের বিরুদ্ধে এন্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহারের কারণে সিপ্রোফ্লোক্সাসিন অ্যামোক্সিসিলিন, সেপট্রিয়াক্সজন জেনটাসমাইসিন, মেরোপেনেম, টিগেসাইসিলিনসহ বহু ওষুধ কাজ করছে না বা রোগীর দেহে রেজিস্ট্যান্স হওয়ার কারণে এসব অ্যান্টিবায়োটিক বা ওষুধ অকার্যকর হয়ে পড়ছে। যা রোগীর রোগ নিরাময়কে দীর্ঘায়িত করছে, এমনকি রোগী সুস্থ হয়ে ওঠার পরিবর্তে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হচ্ছে।
অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স হলো যখন ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাক বা পরজীবীর মতো অণুজীবগুলো অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ওষুধ (অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টিভাইরাল, অ্যান্টিফাঙ্গাল ইত্যাদি) দ্বারা আর মারা যায় না বা তাদের বৃদ্ধি ব্যাহত হয় না, ফলে সংক্রমণ নিরাময় করা কঠিন হয়ে পড়ে, যা বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি মারাত্মক হুমকি এবং চিকিৎসা পদ্ধতিকে ব্যাহত করছে। এটি মূলত ওষুধের ভুল ব্যবহার বা অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে ঘটে, যার কারণে অণুজীবগুলো নিজেদের পরিবর্তন করে ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে ওঠে এবং সাধারণ সংক্রমণও প্রাণঘাতী হতে পারে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ডিন অধ্যাপক ডা. মো. ইব্রাহীম সিদ্দিক, ডিন অধ্যাপক ডা. মো. আতিয়ার রহমান, ডিন ডা. সাখাওয়াত হোসেন সায়ন্ত, নবজাতক বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল মান্নান, শিশু হেমাটোলজি অনকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. আনোয়ারুল করিম, ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আয়েশা খাতুন, গাইনোকোলজিক্যাল অনকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. জান্নতুল ফেরদৌস, ল্যাবরেটরি মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. সাইফুল ইসলাম, বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. নায়লা আতিক খান, ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. ইলোরা শারমিন, পরিচালক হাসপাতাল ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইরতেকা রহমান, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহেদা আনোয়ার, সহযোগী অধ্যাপক ডা. চন্দন কুমার রায়, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. ফারজানা ইসলাম প্রমুখ।

নিজস্ব প্রতিবেদক