শুধু প্রমাণভিত্তিক চিকিৎসাই নয় বিএমইউ দেবে নতুন দিকনির্দেশনা : ডা. সায়েদুর রহমান

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএমইউ) ভবিষ্যতে শুধু প্রমাণভিত্তিক চিকিৎসা নয়, বিভিন্ন বিষয়ে নতুন দিকনির্দেশনা দেবে। এখানে তৈরি হওয়া জ্ঞান শুধু তথ্য নয়, এটি হবে প্রজ্ঞা। কারণ ‘কালেক্টিভ নলেজ’ মানেই ‘উইসডম’ নয়, প্রজ্ঞায় পৌঁছাতে হলে জ্ঞানকে অভিজ্ঞতার সঙ্গে যুক্ত করতে হয়।
আজ সোমবার (২০ অক্টোবর) বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএমইউ) ‘ওয়ার্ল্ড ইভিডেন্স-বেইসড হেলথকেয়ার ডে ২০২৫’ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত র্যালি ও সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডা. সায়েদুর রহমান এসব কথা বলেন।
অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, চিকিৎসা ব্যবস্থায় যুগোপযোগী পরিবর্তন আনতে হলে প্রমাণভিত্তিক চিকিৎসাবিদ্যার চর্চা বাড়াতে হবে। একটি বইয়ে নতুন কোনো তথ্য যুক্ত হতে সময় লাগে পাঁচ থেকে পনেরো বছর। তাই শুধুমাত্র বইয়ের জ্ঞান দিয়ে চিকিৎসা করলে তা অনেক সময় পুরোনো হয়ে যায়। চিকিৎসা ব্যবস্থাকে আপডেট রাখতে হলে প্রতিনিয়ত প্রমাণভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণের চর্চা প্রয়োজন।
অধ্যাপক সায়েদুর রহমান বলেন, প্রতিদিনের প্রমাণভিত্তিক তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা অত্যন্ত কঠিন। এই প্রক্রিয়ায় আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বড় সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। একটি রিভিউ করতে আনুমানিক এক কোটি টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে। তাই প্রমাণভিত্তিক গবেষণার জন্য ছোট ছোট সেন্টার বা হাব তৈরি করা জরুরি, যেখানে এসব বিশ্লেষণ একত্রে করা সম্ভব হবে।
ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে এমন একটি হাব স্থাপনের বিষয়ে আলোচনা চলছে, যা বাস্তবায়িত হলে শুধু বিএমইউ নয়, পুরো দেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতে অনুপ্রেরণা যোগাবে।
অধ্যাপক সায়েদুর বলেন, নিজেদের গবেষণার মাধ্যমে তৈরি হওয়া জ্ঞানই সবচেয়ে কার্যকর। এটা নিজের হাতে রান্না করা খাবারের মতো, নিজস্ব অভিজ্ঞতা ও বোঝাপড়া থেকে তৈরি প্রমাণই আসল। গবেষণার মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত প্রমাণ তৈরি করা। যেখানে ধাপে ধাপে জানা যায় ‘কী হয়’, ‘কেন হয়’, ‘কীভাবে সমাধান করা যায়’ এবং ‘কোন সমাধানটি সবচেয়ে কার্যকর’।
অনুষ্ঠানে অধ্যাপক সায়েদুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান অনৈতিক চর্চার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে। তিনি বলেন, শুধু মুখে বললে হবে না, বাস্তব পদক্ষেপ নিতে হবে। হাসপাতালে ছবি তোলা নিষিদ্ধ করা, প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা এসব পদক্ষেপ ইতোমধ্যে নেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে নিয়ম না মানলে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা থাকবে।
ডা. সায়েদুর রহমান আরও বলেন, আমরা চাই, এই বিশ্ববিদ্যালয় নৈতিকতার পথে নেতৃত্ব দিক। বিজ্ঞান ও নৈতিকতা একসঙ্গে চললে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা আরও ইতিবাচক হবে। আমরা চাই বিএমইউ’র উদাহরণ অনুসরণ করতে এবং সেটাকে দেশের স্বাস্থ্যখাতে ছড়িয়ে দিতে।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বিএমইউ’র উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম বলেন, সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে যারা থাকেন, তারা সংখ্যায় কম হলেও তাদের সেই পথেই থাকতে হবে। প্রমাণভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবার মাধ্যমে মৃত্যুহার কমানো এবং নাগরিকদের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবার প্রতি আস্থা বাড়ানো সম্ভব। চিকিৎসকদের সার্বক্ষণিকভাবে সক্রিয় থাকতে হবে। কেবল ‘আমি ১৫ বছরের অভিজ্ঞ’ বললেই হবে না, সবাইকে জবাবদিহিতার আওতায় আসতে হবে।
বিএমইউ উপাচার্য বলেন, চিকিৎসা ও শিক্ষায় আগের যুগে পড়ে থাকলে চলবে না। এখন কপি-পেস্টের দিন শেষ, প্রতিনিয়ত নতুন জ্ঞান অর্জন করতে হবে।
এর আগে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রমাণভিত্তিক দিবস উপলক্ষে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি আয়োজন করা হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ বিভিন্ন স্তরের শিক্ষক, চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।