কোটি টাকার সেতুতে উঠতে হয় কাঠ ও বাঁশের সাঁকো দিয়ে!
জীবনের প্রথম দেখলাম একটি সেতুতে আবার আলাদা সাঁকো দিয়ে উঠতে হয়—এমন মন্তব্যই শোনা গেল গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় আসা একজন প্রবাসীর মুখে। উপজেলার গোসিংগা ইউনিয়নের চাওবন-ডোয়াইবাড়ি সংযোগ সড়কের সেরার খালের ওপর নির্মিত সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে প্রায় ছয় মাস আগে। কিন্তু দুই পাশে সংযোগ সড়ক (অ্যাপ্রোচ রোড) না থাকায় এক কোটি সাত লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ সেতুটি আজও ব্যবহার করা যাচ্ছে না।
প্রকল্পের তথ্য ও নির্মাণ ব্যয়
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের তথ্যমতে, সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে ২০২৩–২৪ অর্থবছরের গ্রামীণ রাস্তায় সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পের আওতায়। এখানে প্রকল্প ব্যয় হয়েছে এক কোটি সাত লাখ টাকা। সেতুটি ৪০ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ১৪ ফুট প্রশস্ত। প্রায় ছয় মাস আগে নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে।
জনদুর্ভোগ ও দুর্ঘটনার ঝুঁকি
আশপাশের কয়েক গ্রামের মানুষের দৈনন্দিন চলাচলের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা। সেতুর কাজ সম্পূর্ণ না হওয়ায় তাঁরা চরম বেকায়দায় পড়েছেন। উপায়ান্তর না পেয়ে দু'পাড়ের মানুষরা নিজেদের খরচে কাঠ ও বাঁশ দিয়ে একটি অস্থায়ী সাঁকো তৈরি করেছেন। সাঁকো থেকে প্রায় ১০ বা ১২ ফিট নিচে গর্ত ও পানি থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই সাঁকো বেয়েই সেতুতে উঠতে হয়। শিশু, প্রবীণ, রোগীসহ শিক্ষার্থীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই সাঁকো দিয়ে পারাপার হচ্ছেন এবং প্রায়শই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন।
কয়েকজন স্কুল শিক্ষার্থী জানায়, তাদের এক সহপাঠী সম্প্রতি মই থেকে নিচে পড়ে গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। শরীরে রড ঢুকে মারাত্মক আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে।
ষাটোর্ধ্ব বানু বেগম বলেন, ‘সেতুটি বসে বসে পার হতে হয়। ওপারে আমার এক প্রতিবন্ধী বোন রয়েছে, তার দেখভাল আমাকে করতে হয়। কয়েকদিন আগে আমার নাতীও স্কুল থেকে ফেরার পথে নিচে পড়ে গুরুতর আহত হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা আক্ষেপ করে বলেন, এত বছর কোনো সেতু ছিল না সেটাই ভালো ছিল। এখন নিজেদের টাকায় বানানো সাঁকো দিয়েই পারাপার হতে হচ্ছে।
কর্তৃপক্ষের ব্যাখ্যা
সেতু নির্মাণে দায়িত্বপ্রাপ্ত মিথুন এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আশরাফুল ইসলাম জানান, বর্ষাকালের জন্য দুপাশে সংযোগ সড়ক নির্মাণ সম্ভব হয়নি। মাটির সংকটের কারণেও কাজটির জন্য সময় লাগছে। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে দুপাশে সংযোগ স্থাপন করা হবে।
এ বিষয়ে শ্রীপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ইশতিয়াক হোসাইন উজ্জ্বল বলেন, ‘আমি যোগদানের পূর্বে সেতুটি নির্মাণ হয়েছে। নির্মাণ কাজের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারের সঙ্গে কথা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে দুপাশে সংযোগ স্থাপন করা হবে।’

আব্দুর রউফ, গাজীপুর (শ্রীপুর)