ইব্রাহিমপুর ঈশ্বরচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূর্তি উৎসব
‘সাফল্যের উচ্ছ্বাসে স্কুল আমাদের শতবর্ষে’—এই দীপ্ত প্রত্যয়ে মুখরিত মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার শিক্ষার প্রাণকেন্দ্র ইব্রাহিমপুর ঈশ্বরচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়। শত বছরের পথচলার স্মৃতি যেন এক অবিরাম আলোর স্রোত হয়ে ভেসে বেড়াচ্ছিল বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে। যেখানে অতীত আর বর্তমান মিলেমিশে একাকার, সেখানে শৈশবের উঠোন ফিরে পেয়েছে নতুন প্রাণ।
পুরনো-নতুন শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের মিলনমেলায় শতবর্ষ পূর্তি উৎসব রূপ নেয় এক অনুপম আবেগের মহোৎসবে। দীর্ঘদিনের বিচ্ছেদ ভুলে সহপাঠীদের আলিঙ্গন, কুশল বিনিময় আর স্মৃতির গল্পে মুখর হয়ে ওঠে চারপাশ। মনে হচ্ছিল—সময় থমকে গেছে, সবাই ফিরে গেছে শৈশবের সেই সোনালি দিনগুলোতে।
সকাল সাড়ে নয়টায় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে শুরু হয় দিনের আনন্দযাত্রা। বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পদচারণায় উৎসবের রঙে রাঙা হয়ে ওঠে আশপাশের পথঘাট।
এরপর এনটিভির জনপ্রিয় সংবাদ উপস্থাপিকা মোহসেনা শাওনের সঞ্চালনায় জাতীয় সংগীতের সুরে উত্তোলিত হয় জাতীয় পতাকা। বেলুন ও পায়রার উড়ানে উৎসবের আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে নীল আকাশে—ঘোষিত হয় শতবর্ষ উদযাপনের আনুষ্ঠানিক সূচনা।
বেলা ১১টায় শুরু হওয়া আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আফরোজা খান রিতা। আবেগভরা কণ্ঠে তিনি স্মরণ করেন তাঁর প্রয়াত পিতা, সাবেক মন্ত্রী হারুনার রশিদ খান মুন্নুর সঙ্গে এই বিদ্যালয়ের স্মৃতিবহ অধ্যায়। মাতা হুরুন ন্নাহারের দানকৃত জমিতে গড়ে ওঠা এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আত্মিক বন্ধনের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, শিক্ষা রাজনীতির ঊর্ধ্বে—এর মানোন্নয়নই হওয়া উচিত সবার প্রধান দায়িত্ব। শতবর্ষের এই উৎসব যেন তাঁর হৃদয়ে শৈশবের স্মৃতিকে নতুন করে জাগিয়ে তোলে।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত খ্যাতনামা কম্পিউটার বিজ্ঞানী ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ গর্বের সঙ্গে তুলে ধরেন বিদ্যালয়ের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। তিনি জানান, ১৯২৩ সালে স্থানীয় তিন জমিদার—বাবু পূর্ণ চন্দ্র চক্রবর্তী, যুগেশ চন্দ্র চক্রবর্তী ও যতীশ চন্দ্র চক্রবর্তীর উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যালয় শত বছর ধরে অঞ্চলে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে চলেছে। এখানকার অসংখ্য প্রাক্তন শিক্ষার্থী আজ প্রশাসন, শিক্ষা, চিকিৎসা, শিল্প-বাণিজ্যসহ দেশে-বিদেশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন—যা এই প্রতিষ্ঠানের শ্রেষ্ঠ অর্জন।
উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক ও ডেবোনেয়ার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আইয়ুব খান বলেন, এই বিদ্যালয় কেবল একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, এটি একটি জনপদের আলোকবর্তিকা। এখান থেকেই ভবিষ্যতে আরও আলোকিত মানুষ গড়ে উঠবে—এই বিশ্বাসই আমাদের এগিয়ে চলার প্রেরণা।
উদযাপন পরিষদের সদস্য সচিব মোয়াজ্জেম হোসেন তুষারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সদস্য সচিব মোয়াজ্জেম হোসেন তুষার, প্রধান পৃষ্ঠপোষক নাইয়ারা নুর নিপা, ডা. এইচ আই লুৎফর রহমান খান, ড. নুরুল হক চৌধুরী মনি, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী ইঞ্জিনিয়ার দেওয়ান মোহাম্মদ হানজালা, এনপিআই ইউনিভার্সিটি ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মো. শামসুর রহমান, ড. দেওয়ান আব্দুল কাদির ও অ্যাডভোকেট ইবাদুল ইসলামসহ বিশিষ্টজনেরা।
দিনব্যাপী নানা আয়োজন, স্মৃতিচারণা ও আনন্দঘন পরিবেশে বিদ্যালয় চত্বর ভাসতে থাকে আবেগ আর উচ্ছ্বাসের জোয়ারে। নবীন ও প্রবীণের এই মিলনমেলা হয়ে থাকবে ইব্রাহিমপুর ঈশ্বরচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় স্মৃতিবন্ধন—শৈশবে ফিরে যাওয়ার এক রোমাঞ্চকর অধ্যায়, শতবর্ষের দীপ্ত আলোকবর্তিকা হয়ে ভবিষ্যতের পথ দেখানোর অঙ্গীকার।

আহমেদ সাব্বির সোহেল, মানিকগঞ্জ