এসএসসি পরীক্ষা শুরু কাল, শিক্ষার্থী কমেছে প্রায় এক লাখ

মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) থেকে শুরু হচ্ছে। পরীক্ষা চলবে ১৩ মে পর্যন্ত।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এবার পরীক্ষায় বসতে যাচ্ছে মোট ১৯ লাখ ২৮ হাজার ১৮১ জন পরীক্ষার্থী। গত বছরের তুলনায় এবার পরীক্ষার্থী কমেছে প্রায় এক লাখ। শুধু তাই নয়, বিগত পাঁচ বছরে এবারই সবচেয়ে কম শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে।
আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের সমন্বয়ক খন্দকার এহসানুল কবির এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, বাংলা প্রথম পত্র দিয়ে এসএসসি পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে হবে শিক্ষার্থীদের।
এহসানুল কবির বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁসের গুজব ঠেকাতে নিয়মিত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নজরদারি চলছে। নেওয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা। তবে এবার পরীক্ষা চলাকালে কেন্দ্রের সামনে অভিভাবকদের ভিড় না করার আহ্বান জানিয়েছে শিক্ষা বোর্ড।
জানা গেছে, ২০২৪ সালে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ২০ লাখ ২৪ হাজার ১৯২ জন। এ ছাড়া ২০২৩ সালে ছিল ২০ লাখ ৭২ হাজার ১৬৩ জন, ২০২২ সালে ছিল ১৯ লাখ ৯৪ হাজার ১৩৭ জন এবং ২০২১ সালে ছিল ২২ লাখ ৪০ হাজার ৩৯৫ জন শিক্ষার্থী।
এদিকে পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী না থাকায় আসন্ন এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ১৩টি কেন্দ্র বাতিল করেছে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড। বাতিল কেন্দ্রগুলোর কোডসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।
দেশে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার উদ্বেগজনক। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে গত সাত বছরে ১৪ লাখ শিক্ষার্থী কমেছে। পঞ্চম শ্রেণি শেষ করে ২০১৬ সালে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী ও ইবতেদায়ি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিল ২৮ লাখ ২ হাজার ৭১৫ জন শিক্ষার্থী। স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নিতে পারলে তাদেরই গত বছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসার কথা ছিল। তবে গত বছর এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় সারা দেশে ১৪ লাখ ৫০ হাজার ৭৯০ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছিলেন। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের সাত বছরের শ্রেণি কার্যক্রমে প্রায় ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী শিক্ষার স্বাভাবিক পথ থেকে ছিটকে পড়েছে। গড়ে প্রতি বছর ২ লাখ শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে।
উপবৃত্তি চালু করায় একসময় শিক্ষার্থী বেড়েছিল। কিন্তু উপবৃত্তির পরিমাণ এখন এমন যে, তা দিয়ে আর অভিভাবক-শিক্ষার্থীদের স্কুলমুখী করা যাচ্ছে না। আর করোনার পর থেকে অনেক শিক্ষার্থী সাধারণ ধারার পড়াশোনা ছেড়েছে। একই সঙ্গে ইবতেদায়ি তথা আলিয়া ধারার মাদ্রাসায় শিক্ষার্থী কম ভর্তি হচ্ছে। অনেকে হাফেজি পড়ছে, কওমি ঘরানার মাদ্রাসায় ভর্তি হচ্ছে। ফলে সাধারণ ধারার পড়ালেখায় শিক্ষার্থী কমছে।
জানা গেছে, ২০২৫ সালে ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এবার এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় পরীক্ষার্থী রয়েছে ১৪ লাখ ৯০ হাজার ১৪২ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৭ লাখ ১ হাজার ৫৩৮ জন এবং ছাত্রী ৭ লাখ ৮৮ হাজার ৬০৪ জন। পরীক্ষা কেন্দ্রের সংখ্যা ২ হাজার ২৯১টি, প্রতিষ্ঠানসংখ্যা ১৮ হাজার ৮৪টি। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পরীক্ষার্থী রয়েছে ২ লাখ ৯৪ হাজার ৭২৬ জন। এর মধ্যে ছাত্র ১ লাখ ৫০ হাজার ৮৯৩ জন এবং ১ লাখ ৪৩ হাজার ৮৩৩ জন ছাত্রী। এই বোর্ডের অধীনে পরীক্ষা কেন্দ্রের সংখ্যা ৭২৫টি এবং প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৯ হাজার ৬৩টি। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পরীক্ষার্থী রয়েছে ১ লাখ ৪৩ হাজার ৩১৩ জন। এর মধ্যে ছাত্র ১ লাখ ৮ হাজার ৩৮৫ এবং ৩৪ হাজার ৯২৮ জন ছাত্রী।
এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে গত মাসে জাতীয় মনিটরিং ও আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ। সভায় শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল (সি আর) আবরার এত সংখ্যক পরীক্ষার্থী কেন কমেছে, তা নিয়ে কোনো কথা বলেননি। সভায় উপস্থিত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়েরও বিষয়টি নিয়ে কিছু বলেননি।
এসএসসি পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসরোধে কঠোর নির্দেশনা : এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস-সম্পর্কিত গুজব ও নকলরোধে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এসব অপরাধ করলে পরীক্ষা পরিচালনা নীতিমালা অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। গতকাল ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।